sundorban_0

দৈনিকবার্তা-মংলা, ১০ ডিসেম্বর: আবু হোসাইনসুমন: ডুবে যাওয়া ট্যাংকারটির মাস্টার মোখলেসের কোনো খোঁজ বুধবার সন্ধ্যা পর্যনত্মও পাননি উদ্ধার অভিযানে থাকা স্থানীয় ডুবরি ও কোস্ট গার্ড সদস্যরা৷ কোষ্টগার্ড সদস্যরা নিখোজ মাষ্টারের সন্ধানে সুন্দরবনের বিভিন্ন নদ নদীতে তল্লাশী অভিযান চালাচ্ছে৷ মঙ্গলবার ভোর ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে৷ ডুবে যাওয়া জাহাজ থেকে তেল ছড়িয়ে পড়লে বিলুপ্ত প্রায় ইরাবতী ডলফিনসহ ৬ প্রজাতির ডলফিন ও ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের জীববৈচিত্র চরম হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করছে বনবিভাগ৷এদিকে সকাল ১০টর দিকে কার্গোজাহাজ উদ্ধার ও নিখোঁজ মাস্টারকে উদ্ধারে স্থানীয় ডুবুরিদল, কোস্টগার্ড ও বনবিভাগ অভিযান শুরু করে৷

এ ঘটনায় বন বিভাগের পক্ষ থেকে বুধবার দুপুরে প্রায় একশত কোটি টাকার উপরে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে মংলা থানায় বন আইনে মামলা দায়ের হয়েছে৷ চাদপাই ষ্টেশন অফিসার আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন৷ দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক বেলায়েত হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদনত্ম কমিটিও করা হয়েছে৷ এ ছাড়া দুর্ঘটনা তদনত্মে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর৷ অধিদপ্তরের নটিক্যাল সার্ভেয়ার ক্যাপ্টেন গিয়াসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিটিতে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও একজন পরিদর্শক রাখা হয়েছে৷ডুবে যাওয়া ওটি সাউদার্ন স্টার-৭ নামের ট্যাংকারটি উদ্ধারে দুটি নৌযান নিয়ে কাজ শুরু করেছে এর মালিক প্রতিষ্ঠান মেসার্স হারম্নন অ্যান্ড কোং৷ আপাতত দুটি নৌযান দুই দিক থেকে সাউদার্ন স্টার-৭ কে আটকে রেখেছে, যাতে সেটি পুরোপুরি তলিয়ে না যায়৷ সোমবারের মতোই ট্যাংকারটির সামনের অংশ নদীতে ডুবে আছে৷ পেছনের অংশ রয়েছে পানির ওপরে৷

এছাড়া বিআইডব্লিউটিএর প্রত্যয় ও নির্ভিক নামে দুটি উদ্ধারকারী জাহাজ বরিশাল ও নারায়নগঞ্জ থেকে ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে৷ বুধবার রাতে এ জাহাজ দুটি ঘটনাস্থলে পৌছানোর কথা৷ বুধবার সকালে খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক কার্তিক চন্দ্র সরকার ও পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আমির হোসাইন চৌধূরী ঘটনাস্থলে অবস্থান করে সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষন করছেন৷ নৌবাহিনীর জাহাজে ডুবুরি থাকলেও তেল সরানোর মতো আধুনিক সরঞ্জাম নেই বলে জানিয়েছেন খুলনা অঞ্চলের কমান্ডার মনীর মল্লিক৷ তিনি বলছেন, সনাতন পদ্ধতিতে বাঁশ ও কলাগাছ ব্যবহার করে পানির উপরিতলের তেল আলাদা করে তারা সরানোর চেষ্টা করবেন৷

ওটি সাউদার্ন স্টার-৭ নামের ট্যাংকারটি গোপালগঞ্জের একটি বিদু্যত্ কেন্দ্রের জন্য খুলনার পদ্মা অয়েল ডিপো থেকে ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৬৬৪ লিটার ফার্নেস অয়েল নিয়ে যাচ্ছিল৷ মঙ্গলবার ভোর ৫টার দিকে ‘টোটাল’ নামে একটি কার্গো জাহাজেধর ধাক্কায় সাউদার্ন স্টারের একপাশের খোল ফেটে যায় এবং সেটি ডুবতে শুরু করে৷ট্যাংকারটির প্রায় সব ফার্নেস অয়েল বেরিয়ে মঙ্গলবারই সুন্দরবনের শেলা নদীর অনত্মত ৭০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে বলে বন কর্মকর্তারা জানান৷ বুধবার সরেজমিনে শেলা নদীসহ আশপাশের নদী ও খালে গিয়ে দেখা গেছে, বিসত্মৃর্ন এলাকায় তেল ছড়িয়ে পড়েছে৷ নদীর পানিতে তেলের গন্ধ৷ জেলেরা তেলের আসত্মনের কারণে মাছ ধরতে পারছে না৷ এ ছাড়া বন সংলগ্ন লোকালয়ের মানুষ নদীর পানি ব্যবহার করতে পারছেনা৷ বনের গাছের গোড়ায় তেলের আবরণ লেগে রয়েছে৷ ইতিমধ্যে মাছ মরে ভেসে উঠতে শুরু করেছে৷

খুলনার বন সংরক্ষক কার্তিক চন্দ্র সরকার ঘটনাস্থলে থেকে জানান, তেলছড়িয়ে পড়ায় বনসহ গোটা পরিবেশের মারাত্মক দূঘণ ঘটিয়েছে৷ তিনি আরো জানান, যে এলাকায় ট্যাংকারটি ডুবে গেছে সেটি ডলফিনের অভায়ারণ্য৷ এতে ডলফিন, কুমিরসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণী ও গাছপালার যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয়৷

উল্ল্লেখ্য, গত ২৪ নভেম্বর ভোরে এই শেলা নদীতেই ডুবে যায় যাত্রীবাহী নৌযান এমভি শাহীদূত৷ ঘন কুয়াশায় লঞ্চটি শেলা নদীর একটি ডুবোচরে আটকে গেলে সঙ্গে সঙ্গে এর ডেকের তলা ছিদ্র হয়ে যায়৷ একপর্যায়ে ভেতরে পানি ঢুকে কাত হয়ে ডুবে যায় লঞ্চটি৷ সে সময় অবশ্য লঞ্চে যাত্রী ছিল না৷ ওই নৌযানটি এখনও উত্তোলন করা হয়নি৷ এমনকি দুর্ঘটনা তদনত্মে গঠিত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়নি৷ এমভি শাহীদূত উদ্ধার না হওয়ায় ওই পথ দিয়ে নৌযান চলাচল করতে পারছে না৷ বিকল্প হিসাবে বনের আরো ভেতর দিয়ে চলাচল করছে বিভিন্ন ধরনের নৌযান৷ এসব নৌযান থেকে নির্গত বজর্্য (অপরিশোধিত জ্বালানি) নদীর পানিকে দূষিত করায় সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রসত্ম হচ্ছে৷ মঙ্গলবারের দুর্ঘটনা আরো বিপর্যয়ের মুখে ফেলেছে সুন্দরবনের জীববৈচিত্রকে৷

ডুবে যাওয়া ওটি সাউদার্ন স্টার-৭ নামের ট্যাংকারটি উদ্ধারে বেসরকারি উদ্ধারকারী জাহাজ খানজাহান আলী এন্টারপ্রাইজ, যমুনা ও মংলার সহায়তায় বুধবার সকাল থেকে কাজ শুরু করেছে এর মালিক টওতিষ্ঠান মেসার্স হারুণ অ্যান্ড কোং৷আপাতত দুটি জাহাজ দুই দিক থেকে সাউদার্ন স্টার-৭ কে আটকে রেখেছে, যাতে সেটি পুরোপুরি তলিয়ে না যায়৷এছাড়া নৌবাহিনীর দুটি এবং বিআইডবি্লউটি এর দুটি উদ্ধারকারী জাহাজ ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে৷ সোমবারের মতোই ট্যাংকারটির সামনের অংশ নদীতে ডুবে আছে৷ পেছনের অংশ রয়েছে পানির ওপরে৷

তবে জাহাজটির মাস্টার মোখলেসুর রহমানের কোনো খোঁজ বুধবার সকাল পর্যন্ত পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন উদ্ধার অভিযানে থাকা কোস্ট গার্ড সদস্যরা৷ওটি সাউদার্ন স্টার-৭ নামের ট্যাংকারটি গোপালগঞ্জের একটি বিদু্যত্ কেন্দ্রের জন্য খুলনার পদ্মা অয়েল ডিপো থেকে ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৬৬৪ লিটার ফার্নেস অয়েল নিয়ে যাচ্ছিল৷ মঙ্গলবার ভোর ৫টার দিকে ‘ টোটাল’ নামে একটি কার্গো জাহাজের ধাক্কায় সাউদার্ন স্টারের একপাশের খোল ফেটে যায় এবং সেটি ডুবতে শুরু করে৷

মেসার্স হারুণ অ্যান্ড কোং এর ব্যবস্থাপক মো. গিয়াস উদ্দিন জানান, ওই জাহাজের সাত ক্রু সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও মাস্টার মোখলেসুর রহমানের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি৷ট্যাংকারটির প্রায় সব ফার্নেস অয়েল বেরিয়ে মঙ্গলবারই সুন্দরবনের শেলা নদীর অন্তত ২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে বলে বন কর্মকর্তারা জানান৷

বুধবার সকালে মংলা থেকে জয়মনি খেয়াঘাট হয়ে ট্রলারে করে শেলা নদীর বাদামতলা এলাকায় দুর্ঘটনাস্থলে যাওয়ার পথে নদীর দুই পাশের গেওয়া, কেওড়া ও বাইন গাছের গুঁড়িতে তেলের দাগ দেখা যায়৷ জোয়ারের সময় ভাসমান তেল লেগে থাকতে দেখা যায় তীরের মাটিতেও৷

বনবিভাগের কর্মকর্তারা জানান, শেলা নদীতে যুক্ত খালগুলোতে ভেসে আন্ধারমানিক, নন্দবালা, জয়মনি, হরিণটানা এলাকার ছড়িয়ে পড়েছে তেল৷ রূপসা নদীতেও তেলের স্তর ভাসার খবর পাওয়া গেছে৷নৌমন্ত্রী শাজাহান খান সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানান, ডুবে যাওয়া জাহাজটি উদ্ধারে নারায়ণগঞ্জ থেকে বিআইডবি্লউটিএর উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় এবং বরিশাল থেকে নির্ভীক ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে৷

এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে টাগবোট কাণ্ডারী-১০ বাগেরহাটের পথে হয়েছে৷ তবে কুয়াশার কারণে নৌযানগুলোর পৌঁছাতে দেরি হচ্ছে৷মন্ত্রী জানান, পানির ওপর থেকে তেল দূর করতে কাণ্ডারী-১০ থেকে গুঁড়ো রাসায়নিক ছিটানো হবে৷ এতে ভেসে থাকা তেল পানির নিচে চলে যাবে এবং পানির অঙ্েিজন নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা কমবে৷ নৌবাহিনীর খুলনা অঞ্চলের কমান্ডার মনীর মলি্লক জানান, তাদের জাহাজ শাহপরাণ মংলা থেকে এবং জাহাজ আক্তারউদ্দিন হিরণ পয়েন্ট থেকে ঘটনাস্থলের দিকে গেছে৷ দুটি জাহাজে ১৬ জন ডুবুরি রয়েছেন৷ঘটনাস্থলে পৌঁছে নৌবাহিনীর সদস্যরা সনাতন পদ্ধতিতে বাঁশ ও কলাগাছ ব্যবহার করে পানির উপরিতলের তেল আলাদা করে সরানোর চেষ্টা করবেন বলে জানান তিনি৷ যে জাহাজের ধাক্কায় ট্যাংকারডুবি হয়েছে সেই এমটি টোটাল (সি-১৮৫৪) নামের জাহাজটি সনাক্ত করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন নৌমন্ত্রী শাজাহান খান৷তিনি বলেছেন, ওই জাহাজের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ‘কঠোর ব্যবস্থা’ নেওয়া হবে৷

ট্যাংকার ডুবে সুন্দরবনে তেল ছড়িয়ে পড়ায় বন বিভাগের চাঁদপাই স্টেশন কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে মংলা থানায় ১০০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ চেয়ে একটি মামলা করেছেন৷ এমটি টোটাল ও সাউদার্ন স্টার-৭ এর মালিককে এতে আসামি করা হয়েছে৷এছাড়া সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক বেলায়েত হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে, যাতে সদস্য হিসাবে আছেন বন বিভাগের চাঁদপাই স্টেশন কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ, ঢাংমারি স্টেশন কর্মকর্তা প্রহ্লাদ চন্দ্র৷

নৌ মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির নেতৃত্বে আছেন ঢাকা সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের নটিক্যাল সার্ভেয়ার অ্যান্ড এঙ্ামিনার ক্যাপ্টেন গিয়াসউদ্দিন আহম্মেদ৷ তিন সদেস্যের এই কমিটির বাকি দুজন হলেন- ঢাকা সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের নির্বাহী মেজেস্ট্রেট এবং স্পেশাল অফিসার (মেরিন সেফটি) গোলাম মাঈনউদ্দিন হাসান৷খুলনার সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের অভ্যন্তরীণ জাহাজ পরিদর্শনালয়ের পরিদর্শক মো. আবু জাফর মিয়াকে এই কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে৷

দুর্ঘটনার কারণ নির্ণয়, ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ, দায়ী ব্যক্তি বা সংস্থাকে সনাক্ত করার পাশাপাশি ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এই কমিটিকে৷ তাদের আগামী ১৫ কার্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে৷বন কর্মকর্তারা বলছেন, সুন্দরবন পূর্ব বিভাগ, মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলোতে পানিতে ভেসে থাকা এই জ্বালানি তেল অপসারণ বা নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে৷ তেল দূষণের কারণে মৃগমারী-নন্দবালা-আন্ধারমানিক ডলফিন অভয়াশ্রম মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে৷

বিশ্বে ইরাবতী ডলফিনের (যা শুশুক নামে পরিচিত) সবচেয়ে বড় বিচরণ ক্ষেত্র সুন্দরবন৷ শেলা নদী সংলগ্ন এলাকা এই জলজ প্রাণির অভয়াশ্রম হিসেবে সরকারিভাবে ঘোষিত৷প্রতিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য গবেষক পাভেল পার্থ মঙ্গলবার বলেন, তেল যদি ছড়িয়ে পড়ে তাহলে পানিতে দ্রবীভূত অঙ্েিজনের পরিমাণ কমে যাবে৷ সেক্ষেত্রে বড় ধরনের সমস্যায় পড়বে ডলফিন৷ অন্য জলজ প্রাণীও অঙ্েিজন সঙ্কটে ভুগবে৷শুধু ডলফিন নয়, শ্বাসমূলীয় বন সুন্দরবনের গাছপালা ও জলজ সম্পদের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি৷একই আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক দিলীপ কুমার দত্ত৷তিনি বলেন, এত পরিমাণ তেল পানিতে ভেসে থাকায় উপকূলীয় প্রাণি বৈচিত্র্যের ওপর এর মারাত্মক ও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়বে৷সুন্দরবনের মতো শ্বাসমূলীয় বনের গাছপালা শ্বাসমূল দিয়ে অঙ্েিজন নেয়৷ এই তেলের আস্তর জোয়ারের সময় মাটির ওপরে বিস্তৃত হলে গাছের শ্বাস-প্রশ্বাস বাধাগ্রস্ত করবে৷ ফলে গাছ মারা যাবে৷মংলার নালা ও রামপালের কুমার নদী ভরাট হয়ে ভারত-বাংলাদেশ নৌ প্রটোকল রুট ও দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে দেশের নৌবাণিজ্য পথ হিসেবে ব্যবহৃত ঘষিয়াখালী চ্যানেলটি প্রায় তিন বছর ধরে বন্ধ রয়েছে৷

তখন থেকেই সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে শেলা নদীকে বিকল্প পথ হিসেবে ব্যবহার করছে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআইডবি্লউটিএ৷পরিবেশ বিপর্যয়ের ঝুঁকির কারণে বিশ্বঐতিহ্য সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে এই নৌপথ বন্ধ করার দাবি জানানো হয়েছে বিভিন্ন সময়ে৷

এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর মংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলে জয়মনির ঘোল এলাকায় সিমেন্টের কাঁচামাল ক্লিংকার নিয়ে একটি কার্গো জাহাজ ডুবে যায়৷ তার আগে ১২ সেপ্টেম্বর পশুর চ্যানেলের হাড়বাড়িয়া এলাকায়ও ক্লিংকারবাহী একটি কার্গো ডুবে যায়৷ ওই জাহাজ দুটি এখনও ওঠানো সম্ভব হয়নি৷এ প্রসঙ্গে নৌমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, সুন্দরবনের জীববৈচিত্র রক্ষায় ওই চ্যানেল বন্ধ করা উচিত৷তবে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগের স্বার্থে এখনি তা বন্ধ করা যাচ্ছে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, বন্ধ থাকা মংলা ও ঘষিয়াখালী চ্যানেল আবার চালু করা উদ্যোগ নেওয়া হবে৷

অন্যদিকে, বন ও পরিবেশ মন্ত্রনালয়ের উপ মন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব বলেন, অয়েল ট্যাংকার ডুবির ঘটনায় সুন্দরবনের অপূরনীয় ক্ষতি হয়েছে৷ সুন্দরবনের ইতিহাসে এতো বড় দুঘর্টনা এর আগে ঘটেনি৷ তাই সুন্দরবনে বাচাতে সুন্দরবন অভ্যনত্মরের এ নৌরুট অচিরেই বন্ধ করতে হবে৷ তা না হলে সুন্দরবনকে রক্ষা করা যাবে না৷ বুধবার বিকেলে সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে ডুবে যাওয়া ট্যাংকার ও ঘটনাস্থল পনরিদর্শন শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ সব কথা বলেন৷ এ সময় প্রধান বন সংরক্ষক তপন কুমার দে, মংলা বন্দর কতর্ৃপক্ষের মেম্বর অপারেশন আলতাফ হোসেন, বাগেরহাট জেলা প্রশাসকসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন৷ এর আগে সকালে ওই এলাকা পরিদর্শন করেছেন বিআইডবি্লউটিএ’র খুলনার উপ-পরিচালক আশরাফ হোসেন৷