92502_CEC 09.12.14

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৯ ডিসেম্বর: বিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের (ডিসিসি) নির্বাচন করতে হলে আগে সীমানাসংক্রান্ত যে জটিলতা রয়েছে তা নিরসন করতে হবে৷ জটিলতা নিরসন না করে নির্বাচন করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকীব উদ্দিন আহমদ৷মঙ্গলবার কমিশন সভা শেষে ইসির মিডিয়া কক্ষে আনুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে সিইসি এ কথা জানান৷ সংবাদ সম্মেলনে ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম, যুগ্মসচিব জেসমিন টুলী উপস্থিত ছিলেন৷

সিইসি বলেন,মন্ত্রিসভায় ডিসিসি নির্বাচন করার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া তাগাদার খবর পত্রিকার মাধ্যমে জেনেছি৷ কিন্তু এখনো পর্যন্ত সীমানা নির্ধারণ নিয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের চিঠি পাইনি৷ আমাদের তাগাদা তো তারা এতদিন শুনেননি৷ এখন যদি উপরের চাপে দ্রুত সীমানার ব্যাপারে সমাধান হয়৷

তিনি বলেন, ওনারা যদি অল্প সময়ের মধ্যে সীমানা নির্ধারণ করে আমাদের চিঠি দেন তাহলে আমরা সে মোতাবেক ভোটার তালিকা ঠিক করবো৷ তবে সব কিছুই নির্ভর করছে স্থানীয় সরকার বিভাগের ওপর৷
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে নতুন ভোটার তালিকা চূড়ান্ত হবে৷ তার আগে আগামী ২ জানুয়ারিতে খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হবে৷ ১৫ দিনের মধ্যে আপত্তি শোনা হবে৷ তারপরই চূড়ান্ত৷ তবে তফসিল ঘোষণার আগে নতুন ভোটার তালিকা চূড়ান্ত না হলে পুরনো ভোটার তালিকায় আইন অনুযায়ী আমাদের নির্বাচন করতে হবে৷

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেন, ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) নির্বাচন জানুয়ারিতে করা সম্ভব হবে না৷ এজন্য সময়ের প্রয়োজন৷ সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ডিসিসি নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, এমন খবরের ভিত্তিতে আকস্মিক এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়৷

জানুয়ারিতে নির্বাচন সম্ভব কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেন, জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন কেন করবো? আমাকে সময় দিতে হবে৷ সীমানা নির্ধারণ, ভোটার তালিকা মুদ্রণ ও তফসিল ঘোষণার জন্য সময়ের প্রয়োজন রয়েছে৷

তিনি বলেন, আজ সংবাদপত্রে দেখলাম জানুয়ারিতে নির্বাচনের কথা৷ আগেরদিন দেখলাম ডিসিসি নির্বাচন হচ্ছে না৷ তবে একথা খুব পরিষ্কার- আমরা অনেক আগে থেকেই প্রস্তুত৷ কিন্তু ডিসিসি উত্তর ও দক্ষিণে সীমানা সংক্রান্ত জটিলতে সত্ত্বেও, ওপরের চাপ থাকলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় দ্রুত সীমানা পুননির্ধারণ করে আমাদের অনুরোধ জানাতে পারে৷ অন্যথায় বাধা দূর হয়ে গেলে যত দ্রুত সম্ভব আমরা নির্বাচনটি করতে চাই৷সিইসি এও বলেন, আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে বিদ্যমান আইনি জটিলতা নিরসন হলে আলহামদুলিল্লাহ৷

কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেন, বর্তমানে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ চলছে৷ তাই এখন নির্বাচন করতে হলে পুরান ভোটার তালিকা দিয়ে নির্বাচন করতে হবে৷ এতে প্রায় ৫ লাখ নতুন ভোটার ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন৷

এছাড়া পাবলিক পরীক্ষার বিষয়টিও বিবেচনায় নিয়ে তফসিল দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন সিইসি৷ তিনি বলেন, বড় পরীক্ষাগুলো চলাকালে আমরা নির্বাচন এড়িয়ে চলি৷ তাই পরীক্ষার সময়সূচি দেখে প্রস্তুতি নেওয়া হবে৷ডিসিসি দক্ষিণের ৫৫, ৫৬ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডের সীমানা জটিলতা রয়েছে৷ আর উত্তরে উত্তরার ১১ থেকে ১৪ নম্বর সেক্টর, দক্ষিণগাঁওয়ের সীমানা বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে৷

প্রসঙ্গত, চলতি শীত মৌসুমের মধ্যে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন দেওয়ার তাগাদা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০১৪’ এর খসড়ায় সিটি করপোরেশন প্রশাসকদের মেয়াদ ছয় মাস থেকে বাড়িয়ে এক বছর করার প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন৷

সচিবালয়ে পপ্রানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০১৪ এর খসড়া উপস্থাপন করা হলেও তা পর্যবেক্ষণের জন্য ফেরত পাঠানো হয়৷মন্ত্রিপরিষদ সচিব সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, স্থানীয় সরকার বিভাগ অধ্যাদেশটি উপস্থাপন করে৷ মন্ত্রিসভা মনে করে, এটি আরো গভীরভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা দরকার৷ অন্যান্য বিভাগ ও মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পর্যালোচনা করে আবার নিয়ে আসবে৷

মন্ত্রিসভায় উপস্থিত একজন মন্ত্রী জানিয়েছেন, সিটি করপোরেশনের প্রশাসকদের মেয়াদ ছয় মাস থেকে বাড়িয়ে এক বছর করার প্রস্তাব পাঠায় স্থানীয় সরকার বিভাগ৷

তখন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ মেয়াদ না বাড়ানোর পক্ষে মত দেন৷ওই মন্ত্রী জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীও বলেন, প্রশাসকদের মেয়াদ ছয় মাস থেকে বাড়িয়ে এক বছর করা ঠিক হবে না৷ এটা বাদ দিন৷ শীতের মধ্যে আগামী বছরের প্রথম দিকে ইলেকশন দিয়ে দিন৷

ডিসেম্বরে শীত মৌসুম শুরু হয়ে তা থাকে ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাস পর্যন্ত৷ প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনা আগামী বছরের শুরুতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন ইঙ্গিত করে৷ নির্বাচনে পাস- ফেল প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাস-ফেল যা হবার হবে- বলেন ওই মন্ত্রী৷দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনে নির্বাচন না হওয়ায় প্রশাসকদের দিয়ে স্থানীয় সরকারের এ দু’টি প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয়ে আসছে৷

ঢাকার দুই সিটির নির্বাচন প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মনজুর হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন কমিশন যখন চাইবে, তখন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) (সংশোধন) অধ্যাদেশ,২০১৪ ফিরিয়ে দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আরো যাচাই-বাছাইয়ের জন্য মন্ত্রিসভা ফেরত পাঠিয়েছে৷