দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৮ ডিসেম্বর: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান ডবি্লউ মজিনা বলেছেন, গার্মেন্টস শিল্পে বিদ্যমান সকল সমস্যার সমাধান করে এক সময় বাংলাদেশ পৃথিবীর এক নম্বর ব্র্যান্ডে পরিণত হবে৷ সেটা আর বেশি দূরে নয়৷ যতদ্রুত কারখানাগুলোর সেফটি নিশ্চিত করা হবে তত দ্রুত এগিয়ে যাবে৷বিল্ডিং ও অগি্ননিরাপত্তায় গত দেড় বছরের অগ্রগতির প্রশংসা করলেও আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে আরো কাজ করতে হবে বলে মনে করেন মজিনা৷
সোমবার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তিন দিনব্যাপী ঢাকা এপারেল সামিট’র ৪র্থ সেশনে ‘ফিউচার ওয়াকার্স : ওয়ার্কপ্লেস সেফটি এন্ড সাসটেইন্যবেল প্রোডাকশন’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন৷ বিজিএমইএ সহ-সভাপতি (অর্থ) রিয়াজ বিন মাহমুদ এর সঞ্চালনায় এ সেশনে প্যানেল মেম্বার হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতউল্লাহ আল মামুন এনডিসি, বাংলাদেশে অবস্থিত জার্মান অ্যামবেসীর চার্জ দ্যা অ্যাফায়ার ড. ফারদিনাল ভন ওয়ি, বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আনিসুর রহমান সিনহা, অ্যাকর্ড বাংলাদেশের প্রধান নিরাপত্তা ইন্সপেক্টর ব্র্যাড লোভেন প্রমুখ৷
আমেরিকার রাষ্ট্রদূত বলেন,রানা প্লাজায় যা ঘটেছে তা অবিশ্বাস্য৷ এরকম দুর্ঘটনা পৃথিবীর কোনো দেশে ঘটেনি৷ এটা দেখে আমাদের কারখানার সেফটি সম্পর্কে সবাইকে সচেতন হতে হবে৷ যাতে পরবর্তীতে আর কোনো রানা প্লাজা আমাদের দেখতে না হয়৷ এছাড়া তাজরীন ফ্যাশনসের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিতে হবে অগি্ন নিরাপত্তা সম্পর্কে৷তিনি বলেন, সকলকে আগে কারখানার নিরাপত্তার বিষয়টি দেখতে হবে তারপর অন্য বিষয়৷ এবিষয়টি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে কাজ করতে হবে৷ এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারলে এক সময় বাংলাদেশই হবে পৃথিবীর এক নম্বর ব্র্যান্ড৷
বাংলাদেশে পর্যাপ্ত অবকাঠামো ও উচ্চ সুদ হার তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেনতৈরিপোশাক শিল্পমালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি আতিকুল ইসলাম৷বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে প্রধানত কয়েকটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে৷ যার মধ্যে পর্যাপ্ত অবকাঠামোর অভাব এবং উচ্চ সুদ হার৷ এছাড়া অগি্ন ও ভবন নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়৷ তিনি বলেন, বর্তমানে বিদেশি ক্রেতারা কারখানায় শ্রমিকদের উন্নত কর্মপরিবেশের ওপর বেশ গুরুত্ব দিচ্ছেন৷ তবে কর্মপরিবেশের কোনো সীমা নেই৷ একটি পূরণ করলে আরেকটি দাবি চলে আসে৷
আতিকুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো হতে যাওয়া অ্যাপারেল সামিটে বিশ্বের অনেক দেশের প্রতিনিধি অংশ নিয়েছে৷ তারা এখানে অংশ নিয়ে কল্পনাই করতে পারছে না বাংলাদেশে এতো ভালো ভালো কারখানা রয়েছে৷ আমরা বিদেশি ক্রেতাদের হেলিকপ্টারে করে বিভিন্ন কারখানা পরিদর্শন করাচ্ছি৷ তারা কারখানা পরিদর্শন করে বেশ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন৷তিনি আরও বলেন, আরও নিরাপদ কর্মপরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানাগুলো স্থানান্তর করতে হবে৷ তবে মুখে বললেই স্থানান্তর করা সম্ভব না৷ কারণ যেখানে স্থানান্তর করা হবে, সেখানে সরকারকে বিদু্যত্ ও গ্যাস সংযোগ নিশ্চিত করতে হবে৷ তবে কারখানার পরিবেশ উন্নত হবে৷
বাংলাদেশের শ্রমিকদের দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে উল্লেখ করে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন,আমরা বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে কয়েকটি ট্রেনিং কার্যক্রম পরিচালনা করি৷ যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল৷ দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য আমাদের আরও ট্রেনিং একডেমি ও ভোকেশনাল প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে৷ শ্রমিকদের দক্ষতা অর্জন করাতে না পারলে ২০২১ সালের মধ্যে আমরা রফতানির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি তা অর্জন কঠিন হয়ে পড়বে৷
ভিয়েতনামের পোশাক কারখানার উদাহারণ দিয়ে তিনি বলেন, শুধু শ্রমিকদের দক্ষতার কারণে আমাদের অর্ধেক সংখ্যক শ্রমিক নিয়ে তারা সমান রফতানি করছে৷ আমরা যদি শ্রমিকদের দক্ষতা অর্জনে ব্যবস্থা গ্রহণ না করি তবে অবস্থান ধরে রাখা কঠিন হবে৷বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তিতে পোশাক রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ৫০ বিলিয়ন ডলার৷ এ লক্ষ্য অর্জনে কর্মপরিকল্পনা ঠিক করতে শিল্প মালিক, শ্রমিক প্রতিনিধি, সামাজিক সংগঠন এবং ক্রেতাদের নিয়ে ধারাবাহিকভাবে চলছে আলোচনা-পর্যালোচনা৷বিশ্বের এক নম্বর ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়া আর ৫০ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, বিশ্বের সর্ববৃহত্ এই অ্যাপারেল সামিট থেকে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট রূপরেখা পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন মজিনা৷
সাভারের রানা প্লাজা ধস এবং তাজরীন ফ্যাশনসে অগি্নকাণ্ডের পর গত দেড় বছরে কর্মপরিবেশের নিরাপত্তা এবং শ্রমিকের জীবনমান উন্নয়নে, সবার সম্মিলিত পদক্ষেপ বাংলাদেশের পোশাক শিল্পকে অনেক দূর এগিয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি৷একই সঙ্গে ৫০ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শিল্প সম্পর্ক জোরদার করার পাশাপাশি শ্রমিকদের ক্ষোভ প্রশমনে মালিক-শ্রমিকদের দূরত্ব কমানোর তাগিদও দেয়া হয়৷রানা প্লাজা ও তাজরীন ফ্যাশনসের দুর্ঘটনা বাংলাদেশের জন্য একটি শিক্ষা হিসেবে দেখছেন পোশাক শিল্প মালিকরা৷ আর এ শিক্ষা কাজে লাগিয়েই লক্ষ্য অর্জন করতে চান তারা৷