দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৮ ডিসেম্বর: বর্তমানে দেশে স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নেই বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ৷তিনি বলেন, কারোরই জীবনের নিশ্চয়তা নেই৷ছেলে মেয়েরা কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাশ হয়ে ফিরছে৷জনগণ এই অবস্থার পরিবর্তন চায়৷তিনি আরো বলেন, এই অবস্থার পরিবর্তন করতে জাতীয় পার্টি আবার ক্ষমতায় যেতে চায়৷জাতীয় পার্টি সন্ত্রাসের রাজনীতি করেনা, শান্তির রাজনীতি করে৷ এদেশের মানুষও শান্তি চায়৷
সোমাবর বনানীতে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর মোহাম্মদ আদেলের শোক সভায় তিনি এসব কথা বলেন৷ সোমবার বনানীতে এক অনুষ্ঠানে এরশাদ বলেন, নূর হোসেনকে নিয়ে কতজন কত কথা বলে, অথচ তার জন্য একটি স্মৃতিসৌধ কিংবা মনু্যমেন্ট কেউ তৈরি করেনি৷ নূর হোসেন ও ডা. মিলন হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে এরশাদ বলেন, আমার উপর মিথ্যা দোষারোপ করা হচ্ছে৷
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যারা নূর হোসেন ও ডা. মিলন দিবস পালন করছে তারা তো আজ পর্যন্ত তাদের নামে একটি স্মৃতিস্তম্ভও নির্মাণ করতে পারেনি৷যার পদত্যাগের দাবিতে রাস্তায় নেমে পুলিশের গুলিতে টওাণ দিয়েছিলেন নূর হোসেন, সেই হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ঢাকায় নূর হোসেনের নামে কোনো স্মৃতিস্তম্ভ না থাকায় খেদ প্রকাশ করলেন৷ঢাকার রাজপথ যেখানে নূর হোসেনের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল-সেই জিরো পয়েন্টের স্থাপনাটিও নিজের তৈরি করা বলে দাবি করেন সাবেক এই স্বৈরশাসক৷তিনি বলেন, সেখানে একটা স্মৃতিস্তম্ভ কি তৈরি করা যেত না?
১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় ঢাকা অবরোধ কর্মসূচিতে রাজধানীর \’জিরো পয়েন্টে\’ পুলিশের গুলিতে নিহত হন যুবলীগকর্মী নূর হোসেন৷এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সেই দিনে বুকে-পিঠে স্বৈরাচার নিপাত যাক,গণতন্ত্র মুক্তি পাক- স্লোগান লিখে মিছিলে শামিল হয়েছিলেন তিনি৷নূর হোসেন ছাড়াও সেই আন্দোলনে যুবলীগ নেতা নূরুল হুদা বাবুল এবং কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরের ক্ষেতমজুর নেতা আমিনুল হুদা টিটো পুলিশের গুলিতে নিহত হন৷
তাদের আত্মদানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন তীব্রতর হয়৷ এর ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এরশাদ সরকারের পতন ঘটে৷ তারপর থেকে প্রতিবছর ১০ নভেম্বর নূর হোসেন দিবস হিসাবে পালিত হচ্ছে৷ আর জিরো পয়েন্টের নামকরণ হয়েছে নূর হোসেন চত্বর৷এরশাদের দাবি, অন্য রাজনৈতিক দলগুলো নূর হোসেনের পরিবারের খোঁজ না রাখলেও তিনি রেখেছেন৷
নূর হোসেন মারা গেল, সবাই তাকে স্মরণ করে৷ কিন্তু তার পরিবারের খোঁজ খবর কি কেউ রেখেছে? আমি রেখেছি৷ জেল থেকে বের হওয়ার পরই আমি খুঁজে খুঁজে তার বাসা বের করেছি৷ তার মা-বাবার সঙ্গে দেখা করেছি, সান্ত্বনা দিয়েছি৷ প্রতি মাসে আমি নূর হোসেনের বাবাকে পাঁচ হাজার করে টাকা দিয়েছি৷ কেবল নূর হোসেন নয়, সেই আন্দোলনের সময় পুলিশের গাড়ি চাপা পড়ে নিহত দেলোয়ারের বাড়িতেও গিয়েছেন বলে দাবি করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান৷সবাই আমাকে বলেছিল- স্যার আপনি যাবেন না৷ আপনাকে দেখলে মানুষ উত্তপ্ত হয়ে যেতে পারে, দুর্ঘটনা ঘটতে পারে৷ আমি কারো কথা শুনিনি৷ দেলোয়ারের বাড়িতে গিয়ে তার মা কে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছিলাম- মা তোমার এক ছেলে মারা গেছে, আরেক ছেলে আছে৷ তোমার দায়িত্ব আমি নিলাম৷
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কটাক্ষ করে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের দায়িত্বে থাকা এরশাদ বলেন,এখন প্রতিদিনই নূর হোসেন মারা যায়৷ প্রতিদিনই শোক দিবস৷বক্তৃতার এ পর্যায়ে কন্ঠে হাহাকার মিশিয়ে এরশাদ বলেন, গত ২৪ বছরে শুধু হানাহানি, প্রতিহিংসা, হত্যা-খুনের রাজনীতি দেখেছে এই জাতি৷ আমাকে স্বৈরাচার বলা হত, কিন্তু আমি শুধু মানুষকে ভালবাসতে চেয়েছি৷ মানুষকে ভালোবাসি বলেই কখনো সন্ত্রাসের রাজনীতি করিনি৷ আমার দুঃখ হয় আজ মানুষের জন্য মানুষের মনে প্রেম নেই, ভালবাসা নেই৷
আমি ভালো কাপড় পরলে দোষ, কবিতা লিখলে দোষ৷ আমি যখন মিলিটারিতে ছিলাম তখনো কবিতা লিখতাম, ডায়রি লিখতাম৷আদেলকে স্মরণ করে এরশাদ বলেন, তিনি শুধু আমার দলেই ছিলেন না৷ আমার বন্ধুর মত ছিলেন৷ অনেকে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে কিন্তু আদেল কখনো আমাকে ছেড়ে যাননি৷অন্যদের মধ্যে জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু,প্রেসিডিয়াম সদস্য এস এম ফয়সল চিশতী, প্রেসিডিয়াম সদস্য এম এ হান্নান, সুনীল শুভ রায় স্মরণ সভায় উপস্থিত ছিলেন৷