দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৬ ডিসেম্বর: সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খান বলেছেন, বাংলাদেশের পুলিশ পুরোপুরি রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে৷ যদি পুলিশ কমিশন গঠন করা না হয়, পুলিশ নিয়ন্ত্রণে আলাদা আইন করা না হয়, তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে৷দেশের বিচার বিভাগ দুবর্ৃত্তদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে এ মন্তব্য করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আকবর আলী খান৷
শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশন আয়োজিত বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের ৭ বছর’ শীর্ষক আলোচনায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি৷মুক্ত আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খান৷ সঞ্চালনা করেন সাপ্তাহিক সম্পাদক সাংবাদিক গোলাম মোর্তোজা৷
আলোচনায় আরও অংশ নেন মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি আমিরুল কবির চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. সালেহ উদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এআই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ, সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার ইকতেদার আহমেদ, বিএনপির মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম, অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ একেএম ইশতিয়াক হুসাইন, কমিউনিস্ট পাটির নেতা হাসান তারিক চৌধুরী এবং হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শফিকুর রহমান৷আরও বক্তব্য দেন সাবেক বিচারপতি আমিরুল কবির চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ৷
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, পুলিশের বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, তারা যত মামলায় অভিযোগপত্র দেয়, তার ২৩-২৪ শতাংশ দোষী সাব্যস্ত হয়৷ এ পরিসংখ্যানে মামলার এজাহার যুক্ত করা হয়নি৷ এজাহার হিসাব করলে দেখা যাবে, ১০ শতাংশ মামলায়ও দোষী সাব্যস্ত হয় না৷ এ থেকেই বোঝা যায়, দেশ দুবর্ৃত্তদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে৷আকবর আলি খান বলেন, বাংলাদেশে এখনো ব্র্রি্র্রটিশ আইনিব্যবস্থা প্রচলিত, যা অত্যন্ত ত্রুটিপূর্ণ৷ এই আইনিব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দেন তিনি৷শুধু সংবিধান সংশোধন করলে এই আইনিব্যবস্থার পরিবর্তন হবে
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধি এবং পুলিশ আইন নতুন করে লিখতে হবে৷আকবর আলী খান রাজনৈতিক নেতাদের জামিন পাওয়ার বিষয়ে বলেন, পাকিস্তান আমলেও নিন্ম আদালত জামিন দিতেন না৷ উচ্চ আদালতে গেলে রাজনৈতিক মামলাগুলোর ক্ষেত্রে জামিন পাওয়া যেতো৷ এখন তাও হয় না৷ এ অবস্থার নিরসন করা দরকার৷
এখন উচ্চ ও নিন্ম আদালতের মধ্যে কোনো তফাত্ নেই৷ বিচার ব্যবস্থা ক্রান্তিলগ্নের সম্মুখীন৷ বিচার বিভাগের প্রতি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা নেই৷ বিচার বিভাগে সৃজনশীল নেতৃত্ব দরকার৷
তিনি বলেন, বিচার বিভাগ শুধুই কি পৃথকীকরণের জন্য পৃথক করা হয়েছে? গত ৭ বছরে জনগণের অধিকার কতোটুকু প্রতিষ্ঠিত হয়েছে? জনগণের স্বার্থকে অর্থবহ করার জন্য পৃথকীকরণ করা দরকার৷ এ অঞ্চলে বিদ্যমান ব্রিটিশদের আইন খুবই ত্রুটিপূর্ণ৷ এটারও ব্যাপক পরিবর্তন দরকার৷ইকতেদার আহমেদ বলেন, বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের আগে নিয়ন্ত্রণ করতো সংস্থাপন মন্ত্রণালয়৷ এখন করে আইন মন্ত্রণালয়৷ দু’টিই নির্বাহী বিভাগের অংশ৷
বিচার বিভাগ পৃথকীকরণে সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানের সুপারিশ বাস্তবায়নে জনগণের আন্দোলন চান বিচারপতি আমিরুল কবির চৌধুরী৷সালেহ উদ্দিন বলেন, প্রশাসনের হাত যতোদিন লম্বা থাকবে, ততোদিন বিচার বিভাগ বিভাগ স্বাধীন হবে না৷একেএম ইশতিয়াক হুসাইন প্রশ্ন করেন, বিচার বিভাগ পৃথক হলো, কিন্তু বিচার প্রার্থী জনগণের কি হলো? আমার আত্মীয়-স্বজনেরা প্রশ্ন করেন, মামলা ব্যবস্থাপনায় কোনো রকম পরিবর্তন হয়নি৷ আমি তখন কোনো জবাব দিতে পারি না৷
মামলা নিস্পত্তি করার ক্ষেত্রে তথ্য প্রকাশ করার সংস্কৃতি চালু করার মতামত রেখে আকবর আলি খান বলেন, মামলা দায়ের থেকে নিস্পত্তি হওয়া পর্যনত্ম বিভিন্ন তথ্য প্রকাশ বিচরকদের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করবে৷ যা বিচার ব্যবস্থায় একটা শুভ ফল বয়ে আনবে বলে মত দেন তিনি৷
মিজানুর রহমান খান বলেন, বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের ৭ বছর পূর্ণ হলেও মাসদার হোসেন মামলায় পৃথকীকরণের সুপারিশগুলো আজও বাসত্মবায়িত হয়নি৷ তার প্রবন্ধে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণে ৯টি সুপারিশ করেন তিনি৷মিজানুর রহমান খান বলেন, বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের ৭ বছর পূর্ণ হলেও মাসদার হোসেন মামলায় পৃথকীকরণের সুপারিশগুলো আজও বাস্তবায়িত হয়নি৷ তার প্রবন্ধে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণে ৯টি সুপারিশ করেন তিনি৷
গণতন্ত্র দৃঢ় ভিত্তি না পেলে প্রকৃত প্রস্তাবে বিচার বিভাগ কখনোই আলাদা হবে না বলেও মন্তব্য করেন জ্যেষ্ঠ জেলা জজ ইশতিয়াক হোসাইন৷দেশে আইনের শাসন নেই বলে সরকারের সমালোচনা করেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত কমিউনিস্ট পার্টি হাসান তারিক চৌধুরী ও বিএনপি নেতা নাসিরুদ্দিন আহমেদ অসীম৷ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম বলেন, আইনের শাসন ও গণতান্ত্রিক চর্চা না থাকলে বিচারকগণ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন না৷ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম বলেন, আইনের শাসন ও গণতান্ত্রিক চর্চা না থাকলে বিচারকগণ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন না৷
দেশের ক্রান্তিলগ্ন থেকে দেশকে মুক্ত করতে বিচার ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর পরামর্শ বক্তারা৷দেশের অনেক আইন যুগপোযোগী নয় মন্তব্য করে বক্তারা বলেন, সাধারণ মানুষ এখন ন্যায় বিচার পায় না৷অনুষ্ঠানে নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ, সাংবাদিক, আইনজীবী, মানবাধিকার সংগঠন, শিক্ষক, ছাত্র, ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন৷