দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৬ ডিসেম্বর: কোনো চাপে পড়ে ৯০ এ ক্ষমতা হস্তান্তর করিনি বলে জানালেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত ও জাতীয় পাটির্র চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ৷ তিনি বলেন, ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় দেশে কোনো আন্দোলন ছিল না৷ ঢাকায় তখন আন্দোলন করার মত মানুষই ছিল না৷ দুই জোট চ্যালেঞ্জ করেছিল ক্ষমতা ছেড়ে নির্বাচন দিতে৷ আমি সে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছি৷
তিনি আরো বলেন, আমি সাংবিধানিকভাবেই ক্ষমতা হস্তান্তর করেছি৷ সংবিধানের বাইরে কিছু করিনি৷ ৯০ সালে আমার সরকার অবৈধ ছিল না৷শনিবার বিকেলে কাকরাইলে দলীয় কার্যালয়ে সংবিধান সংরক্ষণ দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি৷১৯৯০ সালে ক্ষমতা হস্তান্তরের দিনকে সংবিধান সংরক্ষণ দিবস হিসেবে প্রতি বছরের মতো এ বছরও আলোচনা সভা কর্মসূচি পালন করে জাতীয় পার্টি৷
গণতন্ত্রকে ভালোবেসে নয়, এরশাদকে ভয় করে সংসদীয় সরকার পদ্ধতি চালু করা হয়েছে৷ সংসদীয় পদ্ধতি আতঙ্কের ফল বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ৷এরশাদ বলেন, হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ১৯৯১ সালে নির্বাচন করেছি৷ আমাদের নেতা-কর্মীদের জেলে রাখা হয়েছিল, তাদের প্রচারণা চালাতে দেওয়া হয়নি৷ তবুও আমরা ৩৫টি আসন পেয়েছিলাম৷ আর এ কারণে ভয় পেয়েছিল দুই দল৷ তারা ভেবেছিলো রাষ্ট্রপতি শাসিত পদ্ধতি চালু থাকলে এরশাদকে ঠেকানো যাবে না, মানুষ তাকে আবারও ভোট দেবে৷ এই ভয়ের তারা দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি শাসিত পদ্ধতি সংশোধন করেছে৷
তিনি বলেন, কেউ কেউ আজকের এই দিনটিকে স্বৈরাচার পতন দিবস হিসেবে পালন করে৷ কিন্তু আমরা বলি এটা সংবিধান সংরক্ষণ দিবস৷ আমরা সাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলাম৷ সাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরকে পতন বলা যাবে না, বলতে হলে সংবিধানের পতন বলতে হবে’৷ সেদিন আন্দোলন ঢাকায় সীমাবদ্ধ ছিল৷জবাবে এরশাদ বলেন, দুইটি দল আমাকে চ্যালেঞ্জ দিয়েছিল নির্বাচন দেওয়ার জন্য৷ আমি সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলাম৷ আমাদের ওপর অবিচার না করা হলে, লেভেল প্লেইং ফিল্ড থাকলে আমরা আবারও ক্ষমতায় যেতাম৷
বিএনপির উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা ষড়যন্ত্র করেন, ষড়যন্ত্র করে কোনো লাভ হবে না, মানুষ আপনাদের চায় না৷ এখন লেভেল প্লেইং ফিল্ডের কথা বলেন, ৯০ সালে কি ছিল?আগামী নির্বাচনে মানুষ চোখ বন্ধ করে লাঙ্গলে ভোট দেবে বলেও মন্তব্য করেন এরশাদ৷
সাবেক প্রেসিডেন্ট ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, বাংলাদেশের সমাজের সর্বস্তরে এখন কালবৈশাখী ঝড় প্রবেশ করেছে৷ এ ঝড় প্রতিরোধ করতে না পারলে জাতি হিসেবে আমাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে৷তিনি বলেন,পিএসসিতে প্রশ্নপত্র ফাঁসই তার প্রমাণ৷প্রাথমিক পরীক্ষার প্রশ্ন পত্র ফাঁসের মাধ্যমে শিশুদের শুরুতেই শেখানো হচ্ছে অনৈতিক কর্মকাণ্ড৷ কিন্তু সরকার প্রশ্নপত্র ফাঁসরোধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না৷জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিএসসি) পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস প্রসঙ্গে বলেন, সরকার প্রশ্নপত্র ফাঁসরোধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না৷ আমি জীবনে কখনো শুনিনি, প্রাথমিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়৷প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ এই দূত বলেন, আমাদের এতটাই অবক্ষয় হয়েছে যে, ফাঁস করা প্রশ্ন বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের মাধ্যমে অভিভাবকদের কাছে পাঠানো হয়৷ আর অভিভাবকেরা তাঁদের কোমলমতি সন্তানদের সেই ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র প্রদান করছেন৷ এভাবেই শিশুদের শেখানো হচ্ছে অনৈতিক কর্মকাণ্ড৷’
এরশাদ আরও বলেন, কোচিং সেন্টারের শিক্ষকেরা টাকার বিনিময়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দিয়ে তা শিশুদের কাছে সরবরাহ করছেন৷ এ অনৈতিক কর্মকাণ্ড অবিলম্বে বন্ধ করতে তিনি সরকারকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান৷এরশাদ বলেন, প্রাথমিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার ঘটনায় আমি উদ্বিগ্ন৷ আমি জীবনে কখনও শুনিনি প্রাথমিক পরীক্ষার প্রশ্ন পত্র ফাঁস হয়৷ আমাদের অবক্ষয় এতটাই হয়েছে যে, ফাঁস করা প্রশ্ন বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের মাধ্যমে অভিভাবকদের কাছে পাঠানো হচ্ছে৷ আর অভিভাবকরা সেই প্রশ্ন কোমলমতি সন্তানদের প্রদান করছে৷
এ অনৈতিক কর্মকাণ্ড অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে৷ কিন্তু সরকার সেটা করতে ব্যর্থ হচ্ছে৷ দেশের মানুষ শান্তিতে নেই, সাধারণ মানুষ আজ নিরাপদ নয়৷ শিক্ষক মারা যাচ্ছেন৷ অর্থনীতিও ধ্বংসের পথে৷ বড় দুই দলকে কেউই চায় না৷ এজন্যই মানুষ পরিবর্তন চায়৷
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হাসান বাবলা এমপির সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাবলু এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও পানি সম্পদ মন্ত্রী ব্যরিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, সিনিয়র-যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া প্রমুখ৷