05-12-14-PM_Press Conference-8

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৫ ডিসেম্বর: সরকারের কোনো কর্মকর্তা আইন ভেঙে গুলশানে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করে থাকলে আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷শুক্রবার গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন সরকার প্রধান৷ সামপ্রতিক সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে নেপাল সফর ও মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রীয় সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এই মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী৷এ কথা বলেই প্রায় এক ঘন্টার সাংবাদিক সম্মেলন শেষ করেন প্রধানমন্ত্রী৷

প্রধানমন্ত্রী গত ২৫ থেকে ২৮নভেম্বর সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে নেপালে অবস্থান করেন৷ আর পরে ২ থেকে ৪ ডিসেম্বর মালয়েশিয়ায় দ্বি-পাক্ষিক সরকারি সফর করেন৷সংবাদসম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশ সফল ও কার্যকর অংশগ্রহণ করেছে৷ মালয়েশিয়ায় তার সফরও ছিলো অত্যন্ত সফল৷

অষ্টাদশ সার্ক শীর্ষ সম্মেলন ও মালয়েশিয়া সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে বিকাল ৪টায় গণভবনে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়৷প্রধানমন্ত্রী প্রথমে সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন৷ পরে বক্তব্য দেন মালয়েশিয়া সফর নিয়ে৷ সব শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন৷ তিনি বলেন,আইন তার আপন গতিতে চলবে৷… যদি সরকারি কর্মকর্তারা আইন ভেঙে বৈঠক করে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷

বৃহস্পতিবার রাতে কয়েকটি টেলিভিশন ও অনলাইন সংবাদপত্রে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে একটি বৈঠক চলার খবর প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়,যাতে প্রশাসনের একদল কর্মকর্তাও রয়েছেন বলে জানানো হয়৷এরপর রাতেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেন, ওই খবর আদৌ সত্য নয়৷ প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাভাবিকভাবেই মানুষের মনে প্রশ্ন জাগে, এতো রাতে বৈঠক কেন৷

২০০৬ সালে উত্তরায় মাহমুদুর রহমানের অফিসে আমলাদের বৈঠকের কথাও এ সময় তিনি মনে করিয়ে দেন৷ শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি নেত্রীর এই যে গভীর রাতে চুপকে চুপকে দেখা করা.. এটা কেন৷ একটা সিনেমা আছে না.. চুপকে চুপকে৷তিনি বলেন, মানুষের মনে যখন শান্তি থাকে, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার তাতে অশান্তি হয়৷বিএনপি নেত্রীকে বলব, তিনি যদি এই রাতের অভিসারটা বাদ দেন, যা করার দিনের আলোতে করেন, তা সবার জন্যই ভাল হয়৷

বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে নির্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, শকুনের দোয়ায় গরু মরে না’৷ এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি নেত্রী নানাভাবে হুমকি ধমকি ও নানা মন্তব্য করে যাচ্ছেন- তার এসব কথায় আমি ভয় পাই না, উদ্বিগ্নও হই না৷এ প্রসঙ্গে ২০০৫-২০০৬ সালে তত্‍কালীণ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়ার বিভিন্ন বক্তব্য স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, সে সময় তিনি বলতেন, আমি আর কখনোই প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা বিরোধী দলীয় নেতাও হতে পারবো না৷ কিন্তু এখন তার নিজের ক্ষেত্রেই সেটা ঘটেছে৷

আর সে কারণেই এখনও বিএনপি নেতা আমাকে নিয়ে যা কিছু বলছেন, হতে পারে তা তার নিজের ক্ষেত্রেই ঘটে যাবে, বলেন প্রধানমন্ত্রী৷গ্রাম বাংলার একটি সাধারণ মন্তব্যও তিনি উচ্চারণ করেন এসময়৷ হেসে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসলে শকুনের দোয়ায় গরু মরে না৷৫ জানুয়ারির নির্বাচনের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সেদিন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিলো বলেই দেশে আজকে উন্নয়ন হচ্ছে৷ সেদিন যদি নির্বাচন না হতো তাহলে বাংলাদেশ আজকে থাইল্যান্ডের মতো হতো, সামরিক শাসন আসতো৷

তিনি বলেন, নির্বাচন হয়েছিলো বলেই আজকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে৷ নির্বাচন না হলে এটা কখনোই হতো না৷উল্টো যুদ্ধাপরাধীরা জেলখানা থেকে বেরিয়ে এসে কচুকাটা শুরু করতো৷এ সময় তিনি বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে বলেন, তিনি যুদ্ধাপরাধীদের (জামায়াত নেতাদের) গাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছেন৷তাদের বিচার হচ্ছে,এটা তিনি চান না৷প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের সামনে প্রশ্ন রেখে বলেন, কিন্তু আপনারা একবার চিন্তা করে দেখুন, যদি ৫ জানুয়ারির নির্বাচন না হতো তাহলে কি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এদেশে হতো?

যুক্তরাষ্ট্রের মতো পরাশক্তির বিরোধিতার পরও মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ যদি স্বাধীন হতে পারে, তাহলে এখন কোনো একটি দেশকে পাশে না পেলেও বাংলাদেশের সমস্যা হবে না বলে মনে করেন পধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷আর কোনো বিষয়ে মতবিরোধ হলেই একটি দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক খারাপ হয়ে যাবে বলেও তিনি মনে করেন না৷

শুক্রবার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেসাই বিসওয়ালের সামপ্রতিক সফর নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশের সরকারপ্রধানের এই প্রতিক্রিয়া৷স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ‘দুই আনার মন্ত্রী’ বলায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি ঘটতে পারে বলে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এক সাংবাদিক৷শেখ হাসিনা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের যে সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশে এসেছেন, তিনি বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বিএনপি নেত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন৷ কেউ যদি কোনো মতামত দিয়ে থাকেন তাহলে সে দায়িত্ব তার৷ তাকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেন৷

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বোর্ডের অনুমোদন ছাড়াই পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছিলেন, আর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের নির্দেশেই তা করা হয়েছিল বলে শোনা গেছে৷ আমাদের বিরুদ্ধে অপবাদ দেওয়া হয়েছিল৷ কিন্তু সারা বিশ্ব তন্ন তন্ন করে খুঁজেও প্রমাণ পায়নি৷ কোনো সমস্যা হলেই কূটনৈতিক সম্পর্ক খারাপ হয়ে যাবে বলে মনে করেন না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর একটা দেশ পাশে না থাকলে আমরা একেবারে শেষ হয়ে যাব? … একাত্তরেও যুক্তরাষ্ট্র বিরুদ্ধে ছিল, বাংলাদেশ শেষ হয়ে যায়নি৷

গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন যাতে না হয় সেজন্য সব রকম চেষ্টা যুক্তরাষ্ট্র করেছিল বলেও তিনি মন্তব্য করেন৷ শেখ হাসিনা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রেও বাংলাদেশের বন্ধু রয়েছে৷ তাদের সহযোগিতা বাংলাদেশ সব সময় পেয়েছে৷মুক্তিযুদ্ধের সময় যদি আমরা লড়াই করে টিকে থাকতে পারি তাহলে স্বাধীন দেশ হিসাবে এখনো পারব৷প্রত্যেকটা নাগরিককে বলব, এটা স্বাধীন সার্বভৌম দেশ৷ সে মর্যাদা নিয়ে চলতে হবে৷ কেউ পাশে থাকলে বাঁচব, না থাকলে মরে যাব, এটা ঠিক না৷ভাল থাকলে বন্ধুর অভাব হবে না বলেও মন্তব্য করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী৷

তিনি বলেন, আমাদের পররাষ্ট্রনীতি অত্যন্ত স্বচ্ছ৷এটা পূর্ব না পশ্চিম, উত্তর না দক্ষিণ- তা আমি বিবেচনায় নিতে চাই না৷… বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে কারো সাথে সম্পর্ক আরো গভীর করতে হয়, তা করব৷কাউকে ছাড়া বাংলাদেশ চলতে পারবে না- এমন চিন্তা ‘না থাকাই ভাল’ বলে মন্তব্য করেন তিনি৷

যারা টাকা দিয়ে ইজ্জত কিনে নিয়েছে তাদের ব্যাপারে টিআইবির একটা টু শব্দও নাই বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, টিআইবি বর্তমান সরকারের দুর্নীতির কথা বলছে৷ কোন কোন জায়গায় দুর্নীতি হচ্ছে তা তুলে ধরুক৷ কোন দেশে দুর্নীতি নাই? আর এই দুর্নীতির বীজ বপন করে দিয়ে গেছে ক্ষমতায় আসা মিলিটারি শাসকরা৷

তিনি আরো বলেন, খালেদা জিয়া অরফানেজ দুর্নীতির মামলায় আদালতে হাজির হতে ভয় পায়৷ আবার তার ছেলে তারেক জিয়া দেশের টাকা মেরে লন্ডনে বিলাসিতা করছে৷ এগুলো কি টিআইবির চোখে পড়ে না৷ রাস্তায় দুই এক টাকা ঘুষ খেলে সেটা আমাকে বলে লাভ কি, সরকার কি দুর্নীতি করছে তা আমাদের দেখান৷খালেদা জিয়ার মানসিক সমস্যা আছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের উন্নয়নের সময় খালেদা জিয়ার কোনো না কোনো সমস্যা আছে৷ উনাকে বলব রাতে বাদ দিয়ে দিনের বেলায় যদি কিছু করতে পারেন তাহলে করেন৷

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে দেশের সকল বেসরকারি টিভি চ্যানেল তার দেয়া৷তিনি বলেন, তার সরকারের দুই আমলেই বেসরকারি চ্যানেলগুলোর অনুমোদন দেয়া হয়৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার দেয়া চ্যানেলে তার বিরুদ্ধে কথা বলে৷ নিউজে আমাকে ছোট করে দেখানো হয়৷ আমার নিউজ ৩ অথবা ৪ নম্বারে দেখানো হয়৷ তিনি প্রশ্ন করে বলেন- বিএনপির আমলে কি আপনারা এগুলো চিন্তা করতে পারতেন৷

গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে৷ যা উন্নত বিশ্বের কোনো দেশেও হয়নি৷ আর উনি (খালেদা জিয়া) বলেন নির্বাচনে সুষ্ঠু হয়নি,ভোট পড়েনি৷

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার তিন দিনের মালয়েশিয়া সফরকে অত্যন্ত সফল ও কার্যকর বলে মন্তব্য করেছেন৷তিনি বলেন, মালয়েশিয়া সফরে বেশ কিছু চুক্তি ও সমঝোতা স্বাক্ষর হয়েছে৷ মালয়েশিয়ার সার্বিক উন্নয়নে বাংলাদেশি শ্রমিকদের অবদানের কথা স্বীকার করেছেন সেদেশের প্রধানমন্ত্রী৷

একাত্তরে পরাজিত পাকিস্তানের কাছে চাওয়ার কিছু নেই মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এরপরও কোনো দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক নষ্ট করা সমীচীন নয় বলেই তিনি মনে করেন৷

অষ্টাদশ সার্ক শীর্ষ সম্মেলন ও মালয়েশিয়া সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে শুক্রবার গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন৷ প্রধানমন্ত্রী প্রথমে সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন৷ পরে বক্তব্য দেন মালয়েশিয়া সফর নিয়ে৷ সব শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন৷ সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণের সময় গত ২৬ নভেম্বর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে বেঠক প্রসঙ্গে এক সাংবাদিক জানতে চান, একাত্তরের ভূমিকার জন্য ক্ষমা না চাওয়া, আটকে পড়া, ক্ষতিপূরণ না দেওয়া, পাকিস্তানিদের ফিরিয়ে না নেওয়া এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে বিরূপ মন্তব্যের কারণে ইসলামাবাদের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পকের্র পুনর্মূল্যায়ন করা হবে কি-না৷

উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালেই তাদের আমরা পরাজিত করেছি৷ তারা একটি পরাজিত শক্তি৷বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তারাই এখন জানতে চাইছে আমরা কীভাবে উন্নতি করছি৷কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়নের প্রশ্ন নাকচ করে সরকারপ্রধান বলেন, কারো সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক নষ্ট করা সমীচীন নয়৷ সমস্যা থাকতে পারে, দ্বন্দ্ব চলতে পারে, পাশাপাশি আলোচনাও চলতে পারে৷ সেটাই নিয়ম৷

স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর ওআইসি সম্মেলনে অংশগ্রহণের সময় বাংলাদেশকে পাকিস্তানের স্বীকৃতি দেওয়ার কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর মধ্য দিয়ে পাকিস্তান তাদের পরাজয় মেনে নিয়েছে, তেমনি বাংলাদেশের বিজয়কেও মেনে নিয়েছে৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব সময় আমি মনে রাখি আমরা বিজয়ী জাতি৷ সার্কে সে অনুযায়ীই আমি আচরণ করেছি৷তাছাড়া সার্ক চার্টার অনুযায়ী এ ধরনের দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে কথা বলার সুযোগ নেই বলেও তিনি উল্লেখ করেন৷পূর্ব-পশ্চিম কিংবা উত্তর-দক্ষিণ নয়, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে যে দেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করা দরকার, সে দেশের সঙ্গেই সম্পর্ক উন্নয়ন করে চলবে সরকার৷ তাছাড়া, সরকারের নীতি হলো বঙ্গবন্ধুর সেই বাণী- সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়৷

একটি পশ্চিমা রাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে বলে একটি জাতীয় দৈনিকের খবর প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে শেখ হাসিনা বলেন, কারও সঙ্গে কূটনীতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা বাংলাদেশের নীতি নয়৷ বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর প্রদর্শিত ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয় নীতিতেই চলে৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের যে সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী (নিশা দেসাই বিসওয়াল) বাংলাদেশে এসেছেন, তিনি বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বিএনপি নেত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন৷ তিনি কোনো বিষয়ে মতামত দিতেই পারেন৷ তবে যদি কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তবে সেটা সেভাবেই দেখা হবে৷

প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রের নাগরিকদের স্মরণ করিয়ে দেন, এই দেশ স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ৷ কোনো রাষ্ট্রকে নিয়ে বিশেষভাবে ভাবার সুযোগ নেই৷ আমরা মর্যাদা নিয়ে চলতে চাই৷ কে সঙ্গে থাকলে আমরা থাকবো, কে সঙ্গে না থাকলে আমরা মরে যাবো এমন কোনো ধারণা মনে রাখা উচিত নয়৷

বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনা বলেন, আসলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে যে দেশের সঙ্গেই সম্পর্ক গভীর করতে হয়,আমরা সে দেশের সঙ্গেই কূটনীতিক সম্পর্ক জোরদার করে সাফল্য অর্জন করবো৷কোনো পূর্ব-পশ্চিম-উত্তর-দক্ষিণ ধারণা আমাদের মধ্যে থাকবে না৷প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করিয়ে দেন, পদ্মাসেতু নির্মাণেও অনেকে আমাদের বিরুদ্ধে উঠে-পড়ে লেগেছিলেন৷ সফল হননি৷ সুতরাং এসব নিয়ে ভাবার কোনো কারণ নেই৷

সংবাদ সম্মেলনে মালয়েশিয়া সফরকে অত্যন্ত সফল ও কার্যকর উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মালয়েশিয়া সফরে বেশ কিছু চুক্তি ও সমঝোতা স্বাক্ষর হয়েছে৷ মালয়েশিয়ার সার্বিক উন্নয়নে বাংলাদেশি শ্রমিকদের অবদানের কথা স্বীকার করেছেন সেদেশের প্রধানমন্ত্রী৷তিনি বলেন, এ সফরে আমাদের অভিবাসীদের সুযোগ-সুবিধা ও অন্যান্য বিষয়ে আলাপ হয়েছে৷ দু’দেশের সার্বিক সম্পর্কোন্নয়ন ও সহযোগিতা বৃৃদ্ধিতে এ সফর অত্যন্ত সফল ও কার্যকর৷

সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর যেসব নাগরিক বর্হিবিশ্বে কর্মরত রয়েছেন তাদের কল্যাণ ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা নিশ্চিতে সার্কের নেতারা মতৈক্য হয়েছেন৷সার্কের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করতে এখন থেকে প্রতি দুই বছর পরপর সম্মেলনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী৷শেখ হাসিনা বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার সর্বোচ্চ আঞ্চলিক সংস্থা সাকের্র শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশ গঠনমূলক ভূমিকা রেখেছে৷ সম্মেলনে বাংলাদেশের উত্থাপিত বেশ কিছু প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সম্মেলনে সার্কভুক্ত দেশগুলোর সরকার ও রাষ্ট্রধানদের প্র িসন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অবস্থানের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ৷গত মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) সকালে তিন দিনের সফরে মালয়েশিয়া পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী৷ তার এ সফরে মালয়েশিয়ার সঙ্গে বেশ কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়৷

সফরকালে প্রধানমন্ত্রী মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মত বিনিময় করেন এবং বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান৷তাত্‍পর্যপূর্ণ এ সফর শেষে বৃহস্পতিবার দুপুরে দেশে ফেরেন শেখ হাসিনা৷ সম্মেলনে যোগদানের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীসহ বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি৷