দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৪ ডিসেম্বর: বাংলাদেশ দুর্নীতিতে এগিয়েছে টিআইবির প্রকাশ করা এমন প্রতিবেদন সম্পর্কে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, এক সময় বাংলদেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন ছিল- সেটা তো হয়নি৷ পৃথিবীর সব দেশ দুর্নীতিমুক্ত নয়৷তিনি পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, আমাদের গ্রোথ ও এঙ্পোর্ট বাড়েনি? সেটা তো তারা বলে না৷
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে জার্মানির লেবার অ্যান্ড স্যোসাল ওয়েলফেয়ার স্টেট মিনিস্টার জর্জ আসমুসেনের সঙ্গে সাক্ষাত্ শেষে সাংবাদিকদের করা প্রশ্নের জবাব তিনি এ কথা বলেন৷টিআইবির প্রতিবেদন এবং সিপিডির বক্তব্য সম্পর্কে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এসব এনজিও বিদেশের অর্থায়নে পরিচালিত৷ আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের পক্ষে কেউ কি কোনো কথা বলেছে? তারা তাদের কাজ করছে৷ আমরা আমাদের কাজ করছি৷
টিআইবির প্রতিবেদনে প্রভাবশালীদের দুর্নীতি সম্পর্কে বলা হয়েছে৷ এ সম্পর্কে তোফায়েল বলেন, প্রভাবশালীরাইতো দুর্নীতিগ্রস্ত৷দেশের ১৬ কোটি লোকের মধ্যে ১৬ লাখ লোক ট্যাঙ্ দেয়৷সংবাদপত্রের মালিক এবং সাংবাদিকদের এক হাত নিয়ে তিনি বলেন, সুশীল সমাজ, পত্রিকার মালিক এবং সম্পাদক এদের সম্পদ বাড়েনি- বাড়ে শুধু রাজনীতিবিদদের৷ দেখা যায় যারা আমাদের উপদেশ দেন তারাই ইনকাম ট্যাঙ্ সেভাবে দেন না৷
তিনি বলেন, ছিয়ানব্বই সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বাণিজ্যমন্ত্রী থাকাকালীন অবস্থায় আমি সংবাদপত্রের নিউজপ্রিন্ট আমদানি সম্পর্কে একটি বিধান করেছিলাম৷ এক টন নিউজপ্রিন্ট আনলে আর এক টন ট্যাঙ্ ফ্রি আনতে পারবে৷ এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসার পর সম্পাদক ও মালিকরা এর বিরোধিতা করে বলেছেন, আমি নাকি নিজ স্বাথের্র জন্য এসব করেছি৷ তারপর থেকে এখন সব ট্যাঙ্ ফ্রি আমদানি হচ্ছে৷ এখন যেসব পত্রিকা ৫ হাজার কপি ছাপে তারা ৫০ হাজার কপি ছাপানো হয়েছে দেখিয়ে নিউজপ্রিন্ট আমদানি করে ও নয়া বাজারে বিক্রি করে ব্যবসা করে৷তিনি সিপিডি ও টিআইবি সম্পর্কে আরো বলেন, আমরা যখন বলি ২০২১ সালের মধ্যে দেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে তখন তারা বলেন, এটা হতে পারবে না৷ এর অর্থ কী?এর অর্থ হলো প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রীসহ সব মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মতবিরোধ করা৷
তিনি এসব বক্তব্যদাতাদের উদ্দেশ করে বলেন, আপনারা তো এসব বলবেনই৷ আপনারা তো রাশিয়া থেকে বড় বড় ডিগ্রি এনেছেন৷ কিন্তু দেশ তো এগিয়ে যাচ্ছে৷ আমরা কি আগামী সাত বছরে মধ্যম আয়ের দেশ হতে পারবো না? ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) কি কখনো পজিটিভ কিছু বলেছে?- এ প্রশ্ন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের৷
টিআইবি’র দুর্নীতির সূচক নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের কি কোনো গ্রোথ বাড়েনি, কোনো উন্নয়ন হয়নি? এমন কোনো সেক্টর নেই, তারা সেই সেক্টর নিয়ে পজিটিভ কিছু বলেছে?
এ সময়ে এ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ নিয়ে কখনও কি পজিটিভ কিছু বলেছে? বলেও প্রশ্ন তোলেন তিনি৷গত মঙ্গলবার প্রকাশিত সিপিডি’র প্রতিবেদনের প্রসঙ্গ টেনে তোফায়েল আহমেদ বলেন, বিশ্বের সবাই যখন বলছে, বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন তারা নিগেটিভ কথা বলছে৷তিনি প্রশ্ন তোলেন, সিপিডি’র গবেষণা কী বিশ্বব্যাংকের চেয়েও ভালো?
এর আগে বুধবার (বিশ্বের মোট ১৭৫টি দেশের দুর্নীতি নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে টিআইবি জানায়, দুর্নীতিতে এ বছর বাংলাদেশের অবস্থান ১৪তম৷ গত বছর এ অবস্থান ছিল ১৬তম৷ অর্থাত্, এদেশে দুর্নীতি বেড়েছে৷দুর্নীতির বৈশ্বিক ধারণা সূচকে বাংলাদেশে দুর্নীতি প্রকট আকার ধারণ করেছে বলেও মন্তব্য করে টিআইবি৷
বৃহস্পতিবার টিআইবি’র ওই প্রতিবেদন সম্পর্কিত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, টিআইবি একটি এনজিও৷ বিদেশি অর্থায়নে পরিচালিত৷ তারা তাদের মতো মূল্যায়ন করে৷ আমরা আমাদের মতো দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি৷ পৃথিবীর কোনো দেশই দুর্নীতিমুক্ত নয় মন্তব্য করে তোফায়েল বলেন, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের শুধু টাকা আছে৷ সুশীল সমাজ আর পত্রিকার মালিকদের কোনো টাকা নেই? সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বাংলাদেশে যদি কোনো উন্নয়ন না হয়ে থাকে, তাহলে রিজার্ভ, রেমিটেন্স বাড়তো না৷
এ সময় দৈনিক প্রথমআলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনের উদাহরণ টানেন বাণিজ্যমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, আমরা কিছু বলতে পারবো না, লিখতেও পারবো না৷ পরে টিভি টকশোতে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য তো অনেক ভালো কথা বলেছেন৷ তাহলে প্রথম আলো সেসব লিখলো না কেনো?
প্রথমআলোর অনলাইনে প্রকাশিত সংবাদের উহাহরণ টেনে মন্ত্রী বলেন, অনলাইনে প্রতিবেদনের খারাপ অংশ লিখেছে৷ তাহলে ভালো অংশ লেখেনি কেনো? ভালো লিখলে মানুষ পড়ে না, তাই নিগেটিভটাই লিখবেন?প্রথমআলোকে উদ্দেশ্য করে মন্ত্রী আরো বলেন, আমাদের খারাপটা লিখবেন আর ভালোটা লিখবেন না, তা কি করে হয়?
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা চুপচাপ থাকি, কারণ আমরা লিখতে পারবো না৷ প্রত্যেক দিন জবাবও দিতে পারবো না৷ রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মধ্যে ভালো আছে, মন্দও আছে৷ এমন অনেক ডাক্তার আছেন যিনি আশি লাখ টাকা আয়কর দিয়েছেন৷ তাই বলি, আমাদের ১০০ শতাংশ আয়কর দেওয়ার লোকও আছেন৷ যারা আমাদের উপদেশ দেন, গিয়ে দেখেন তাদের আয়করও সেরকম নাই৷ সুতরাং, একটা সমাজে আমাদের ভালো-মন্দ থাকে৷