দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৪ ডিসেম্বর: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে আরকেটা ধাক্কা মারতে হবে৷ এদের পায়ের নিচে মাটি নেই৷ এরা দেউলিয়া হয়ে গেছে৷ দুর্নীতির কারণে দেশ এখন ধ্বংসের দারপ্রান্তে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর৷
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সপ্তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন৷ সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সভাপতি সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম৷ তিনি বলেন, আমাদের এখন সুখবর একটাই৷ বাংলাদেশে দুর্নীতি আবারও বেড়েছে৷ আগে দুর্নীতিতে ১৬তম ছিল, আর এখন ১৪তম হয়েছে বাংলাদেশ৷মির্জা ফখরুল বলেন, দুর্নীতির কারণে দেশ এখন ধ্বংসের দারপ্রান্তে৷ অসস্তিতে রয়েছেন দেশের সাধারণ মানুষ৷ মানবাধিকার, মৌলিক অধিকার, ভোটের অধিকারসহ কোনো অধিকারই সাধারণ মানুষের নেই৷
তিনি বলেন, দেশে গুম,অপরহণ, মিথ্যা মামলার ভয়ে মানুষ দিশেহারা৷দেশে,দেশের মানুষ ও গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হবে৷ এজন্য সরকারকে আরেকটি ধাক্কা দেওয়া দরকার৷ এজন্য জনসমর্থনহীন সরকারকে ধাক্কা দিতে হবে৷ এই ধাক্কাতেই তাদের পতন হবে৷দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এখন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দায় মুক্তি দিচ্ছে৷ তাই এটা এখন দায়মুক্তি কমিশন, বলেন ফখরুল৷ সমপ্রতি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম মার্কিন পররাস্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই ও ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাস্ট্রদূত ড্যান মজীনাকে নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তার কঠোর সমালোচনা করেন বিএনপির এই সিনিয়র নেতা৷
সমপ্রতি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাইকে দুই আনার মন্ত্রী ও ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডবি্লউ মজীনাকে কাজের মেয়ে মর্জিনা বলে অভিহিত করেছেন৷ এ মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মির্জা ফখরুল প্রশ্ন তোলেন,এতে লাভটা কী হয়েছে? যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ বাংলাদেশের এখন কোনো বন্ধু নেই, বিদেশি বিনিয়োগ নেই৷
মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল ও বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনাকে নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ যে মন্তব্য করেছেন তাতে বাংলাদেশ-আমেরিকার সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দাবি করেন ফখরুল৷ তিনি বলেন, ‘এতে লাভটা কী হচ্ছে৷ বরং বাংলাদেশের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক আরো খারাপ হচ্ছে৷ কোথাও বাংলাদেশের বন্ধু নেই৷ মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশে বাংলাদেশের মানুষ যেতে পারছে না৷
তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা হাত গুটিয়ে বসে আছেন৷ দেশে এক ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দার সৃষ্টি হয়েছে৷ এমন পরিস্থিতির পরও আওয়ামী লীগের কোনো বোধোদয় হচ্ছে না৷আওয়ামী লীগকে দেশ ধ্বংসকারী ও দেশের স্বাধীনতা বিপন্নকারী উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, এই স্বৈরাচারী, একনায়ক আওয়ামী লীগ সরকারকে হটিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে৷ নোংরা রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারবে এমন সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে৷দুর্নীতির বিশ্বজনীন ধারণাসূচকে বাংলাদেশের অবস্থানের কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আজ গণমাধ্যমে দেখলাম, বাংলাদেশের মানুষের জন্য চমত্কার সুখবর৷ দুর্নীতিতে বাংলাদেশের অগ্রগতি হয়েছে৷ আগে ১৬-তে ছিল, এখন ১৪- তে গেছে৷
তিনি বলেন,দুর্নীতিতে বালাদেশের অগ্রগতি হয়েছে৷ এটা বালাদেশের জন্য অত্যন্ত সুখবর এবং চমত্কার খবর৷ দুর্নীতি দমন কমিশন এখন দায়মুক্তি কমিশনে পরিণত হয়েছে৷তিনি বলেন, দেশে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে৷ এ পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের বোধোদয় হচ্ছে না৷ তারা গলাবাজি করে চলছে৷ আওয়ামী লীগ দেশটাকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে৷ তারা একের পর এক গণবিরোধী আইন পাস করছে৷ পার্লামেন্টকে রাবার স্ট্যাম্পে পরিণত করেছে৷
তিনি আরো বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নেই৷ খালেদা জিয়াকে সাজানো মামলা দিয়ে অস্থায়ী আদালতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে৷ সরকারকে আর একটা ধাক্কা মারতে হবে৷ তাদের পায়ের নিচে মাটি নেই৷ তারা রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে৷
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে নির্লজ্জ ও জঘন্য দলীয়করণ, বর্বর ও পৈশাচিক রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসী তাণ্ডব, বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের হত্যা, গুম, অপহরণ, মিথ্যা মামলা দায়ের এবং গণহারে গ্রেফতারের এমন ঘটনা স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের মানুষ আর কখনো দেখেনি৷
দেশের চলমান রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও আইন-শৃংখলা পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, সর্বক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের সীমাহীন ব্যর্থতা, বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্মমভাবে হত্যা, মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে নিক্ষেপ, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য এবং কাণ্ডজ্ঞানহীন উস্কানিমূলক বক্তব্য ও হিংসাত্মক আচরণে দেশের মানুষ ভয়াবহ নির্মমতার যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে৷
মির্জা আলমগীর বলেন, গত ৫ জানুয়ারির প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে গায়ের জোরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলকারীদের বিরুদ্ধে গোটা জাতি যখন সোচ্চার তখন তারা আরো বেশি অস্থির ও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে৷ তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তারা দলীয় সন্ত্রাসী বাহিনীর মতো ব্যবহার করে গণহত্যা এবং গণহারে গ্রেফতার চালাচ্ছে৷ একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও দলীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের দিয়ে বিরোধী দলের নেতা-কর্মী এবং সাধারণ জনগণের ওপর প্রকাশ্য হামলা চালানোর মদদ দেয়া হচ্ছে৷
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন কল্যাণপাটির্র সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মো. ইব্রাহীম বীরপ্রতীক৷ এ সময় বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, নগর বিএনপির সদস্য সচিব হাবিবুন নবী খান সোহেল, ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূইয়া, ডেমোক্রেটিক লীগের মহাসচিব সাইফুদ্দিন মুনিফ, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আবু নসের মো. রহমত উল্লা প্রমুখ নেতা বক্তব্য দেন৷