ড. মিজানুর রহমান

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৩ ডিসেম্বর: জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেছেন, আমাদের সশস্ত্র বাহিনী করপোরেট বডি হয়ে যাচ্ছে৷ আর এই করপোরেট বডির স্বার্থ রক্ষার্থে কোনো কোনো ক্ষেত্রে যে ভূমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে না, তা-ও কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারবে না৷বুধবারনগরীর আসাদ এভিনিউর সিভিসি সেন্টারে ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইইডি) এর উদ্যোগে আদিবাসীদের মানবাধিকার পরিস্থিতি শীর্ষক গণশুনানিতে তিনি এসব কথা বলেন৷

রাজধানীর সিবিসিবি সেন্টারে ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এ গণশুনানির আয়োজন করে৷সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক নোমান আহমদ খান এর সভাপতিত্বে গণশুনানিতে আরো বক্তব্য রাখেন ঐক্য ন্যাপ এর সভাপতি শ্রী পংকজ ভট্টাচার্য, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সভাপতি অজয় রায় ৷

তিনি বলেন, আমরা সশস্ত্র বাহিনীকে নিয়ে গর্ব করি ৷ তাদের জন্য যুদ্ধাস্ত্র কিনে আমরা তাদেরকে সাধুবাদ জানাই৷ কিন্তু তারা এখন গণপূর্ত বিভাগের সঙ্গে পাল্লাদিয়ে ঠিকাদারি কাজে লিপ্ত হয়েছে৷ স্কুল, কলেজ নির্মাণের দায়িত্ব নিচ্ছে৷ আইন না মেনে সাধারণ মানুষের ভূমি দখল করছে৷ তাই আমাদের ভয় হয় ভবিষ্যতে কি আমাদের নিরাপত্তার জন্য বেসরকারি বাহিনী গঠন করতে হবে?তিনি আরো বলেন, সরকার যেসব সিদ্ধান্ত নেন তা বাস্তবায়ন করতে পারে না৷ সরকার আদিবাসীদের সুরক্ষায় ব্যর্থ ৷

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে আমরা গর্ব করি৷ তারা আমাদের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নিয়োজিত৷ তাই সরকার যখন তাদের জন্য অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র ও যুদ্ধবিমান কেনে, আমাদের সমুদ্রসীমা সুরক্ষিত রাখতে তাদের জন্য যখন সাবমেরিন কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়, আমরা সাধুবাদ ও ধন্যবাদ জানাই৷ কিন্তু যখন দেখি, আমাদের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়িত্বে থাকা সশস্ত্র বাহিনী ব্যাংক গড়েছে, গণপূর্ত বিভাগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ঠিকাদারি কাজে লিপ্ত হচ্ছে, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির জন্য ব্যস্ত, তখন মনে ভয় জাগে, অদূর ভবিষ্যতে হয়তো আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বেসরকারি সশস্ত্র বাহিনী প্রতিষ্ঠা করতে হবে৷ যার যেখানে বিচরণ, তাকে তাঁর বিচরণক্ষেত্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা যৌক্তিক বলে আমাদের মনে হয়৷

ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, আমাদের রাষ্ট্র আর জনগণের নেই৷ রাষ্ট্র চলে গেছে ব্যাংক ডাকাত, ভূমিদস্যু, আমলাদের হাতে৷ মানুষের অধিকার রক্ষায় মানবাধিকার কমিশনের অসহায়ত্ব পরিষ্কার৷ এর বিরুদ্ধে রুখে দাড়াানোই একমাত্র পথ৷ গণপ্রতিরোধ, গণ-আন্দোলন ও গণসংঘাতের মধ্য দিয়েই আমাদের বাঁচতে হবে৷দেশের বিভিন্ন স্থানে আদিবাসীদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়নের চিত্র গণশুনানিতে তুলে ধরেন সাতজন আদিবাসী৷ তাঁরা নিজেরা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং এখনো অধিকার আদায়ের সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন বলে দাবি তাঁদের৷ রাখাইন আদিবাসী চো থান সে এবং তেন নান্টু জানান, ১৯৭১ সালে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ৫০ থেকে ৭০ হাজার রাখাইন ছিল, কিন্তু এখন তাদের সংখ্যা মাত্র ১২০০৷

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘আমি হিন্দু- বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক৷ কিন্তু এই সংগঠনের নেতা হওয়ার জন্য আমরা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ করিনি৷ ১৯৪৭ সালে যেখানে দেশের ৩১ শতাংশ ছিলেন সংখ্যালঘু সমপ্রদায়ের মানুষ, এখন আছেন মাত্র ৯ শতাংশ৷