দৈনিকবার্তা-চট্টগ্রাম, ৩ ডিসেম্বর: সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, পার্বত্য শান্তি চুক্তির প্রতিটি অঙ্গীকার অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হবে৷পার্বত্য শান্তি চুক্তির ১৭ বছর পূর্তির পরদিন বুধবার চট্টগ্রাম সড়ক ভবন থেকে দুইটি সড়ক ও কঙ্বাজার- টেকনাফ সড়কের ১০টি সেতু উদ্বোধন করে এ কথা বলেন মন্ত্রী৷ওবায়দুল কাদের বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির প্রতিটি অঙ্গীকার অক্ষরে অক্ষরে পালিত হবে৷ এটা প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার৷
এছাড়া আগামী চার বছরের মধ্যে চট্টগ্রাম কঙ্বাজারকে ঘিরে বৈপ্লবিক পরিবর্তন হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি৷চট্টগ্রাম সড়ক ভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী রাঙামাটি-চন্দ্রঘোনা-বাঙ্গালখালিয়া-বান্দরবান’ ও বাঙ্গালখালীয়া-রাজস্থলী সড়ক এবং কঙ্বাজার-টেকনাফ সড়কের ১০টি সেতু উদ্বোধন করেন৷
ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কঙ্বাজার- টেকনাফ সড়কের ১০টি সেতু উদ্ধোধন করলেও সেতুগুলো টেকনাফে গিয়ে উদ্বোধনের জন্য মন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়েছিলেন টেকনাফের সাংসদ আব্দুর রহমান বদি৷এ ব্যাপারে ওবায়দুল কাদের বলেন,আমি কাজে বিশ্বাসী৷ অনেকে কাজ না করে ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন৷ কাজ শেষে মন্ত্রী আসতে না পারায় উদ্বোধনের জন্য লোকজন সেতু ও সড়ক ব্যবহার করতে পারবে না এটা আমি বিশ্বাস করি না৷উদ্বোধন আজ হয়ে যাক৷ আমি এমনিতে দেখতে যাব, বলেন সেতু মন্ত্রী কাদের৷
উদ্বোধনকে আনুষ্ঠানিকতা বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর জন্য সভা হবে৷ মাইক বেঁধে বক্তৃতা দিতে হবে৷ তোরণ হবে, ফুলের মালা দিবে৷ একটা হোন্ডা মিছিল হবে৷ এসব আমি পছন্দ করি না৷একটি ব্রিজ উদ্বোধনের জন্য দুই ঘন্টা সময় লাগে৷ এ সময়ে দুইটি সড়ক ভিজিট করা যায় বলেও মন্তব্য করেন মন্ত্রী৷
কঙ্বাজার মেরিন ড্রাইভের ৬৮ কিলোমিটার সড়কের কাজ এ অর্থবছরে শেষ হবে জানিয়ে মন্ত্রী আরো বলেন, ৬৮ কিলোমিটার কাজ শেষ হলে বাকি থাকবে আর ২৪ কিলোমিটার৷ এই মেরিন ড্রাইভের কাজ ২৪ বছর ধরে ঝুলে ছিল৷ এখন এটা দৃশ্যমান, আর স্বপ্ন নয়৷এ সময় তিনি চট্টগ্রামের মিরসরাই থেকে কর্ণফুলী নদীর ট্যানেল দিয়ে কঙ্বাজার পর্যন্ত আরেকটি মেরিন ড্রাইভ নির্মাণেরও ঘোষণা দেন৷
এদিকে, উচ্চ পর্যায়ের একটি সেমিনারে আমন্ত্রণ করে ‘সময় নষ্ট’ করার কারণে আয়োজকদের তুলোধুনো করলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের৷ প্রচারকামী রাজনৈতিক নেতাদেরও একহাত নিয়েছেন তিনি৷মন্ত্রী তার এই সত্যকথনকে অপ্রিয় বলে উল্লেখ করলেও আগ্রাবাদ হোটেলের ইছামতি হলের কানায় কানায় পূর্ণ উপস্থিত এমপি, কূটনীতিক, ব্যবসায়ী নেতা ও অতিথিরা হাততালি দিয়ে জোরালো সমর্থন জানিয়েছেন৷
বুধবার সকালে চট্টগ্রাম চেম্বার ও ভারতীয় দূতাবাস আয়োজিত বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া কানেক্টিভিটি: অপরচুনিটি অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস শীর্ষক সেমিনানের পটওধান অতিথির বক্তব্য দেন ওবায়দুল কাদের৷বক্তব্য দিতে গিয়ে মন্ত্রী ভূমিকা শেষ করেই কথার তীর ছুড়তে থাকেন৷ এসময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংসদ এমএ লতিফ, দিদারুল আলম, ড. আবু রেজা নদভী, ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণসহ রাশিয়া, জাপান, ইন্দোনেশিয়া দূতাবাসের উচ্চপদস্থ কূটনীতিক ও চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী নেতারা৷
মন্ত্রী বলেন, এই ধরনের অনুষ্ঠান,সেমিনার, আলোচনা হচ্ছে, হবে৷ কিন্তু তার মানে এই নয় যে, এটা নিয়ে এত সময় নষ্ট করা? বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে সব কিছুই এখানেই ফাইনাল করে ফেলা? আপনারা (চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি) আমাকে এনে একটি সেমিনারের জন্য তিন ঘন্টা বসিয়ে রেখেছেন৷ আমি এসব পছন্দ করি না৷ যদি আমি এই তিন ঘন্টায় চট্টগ্রামের তিনটি রাস্তা পরিদর্শন করতে পারতাম, তাহলে হাজার মানুষের উপকার হতো৷
এক সময় দৈনিক বাংলারবাণী পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন ওবায়দুল কাদের৷ আর সেজন্যই বুঝি তিনি সাংবাদিকদের সীমাবদ্ধতার কথা বোঝেন! তাই অনুষ্ঠানের শুরুতেই আয়োজকদের উদ্দেশে বলেন, একটি সেমিনারের জন্য সকাল থেকে এত সব মিডিয়াকর্মীকে আপনারা এনগেইজড করে রেখেছেন৷ কিন্তু চট্টগ্রামে আজকে মেট্রোপলিটন চেম্বারের বাণিজ্যমেলা উদ্বোধন করবেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ৷ তো তারা কোন দিকে যাবে, আমার কাছে আসবে নাকি উনার কাছে যাবে? তোফায়েল ভাইতো আমার চেয়েও অনেক সিনিয়র মন্ত্রী ও নেতা৷ ঢাকায় হলে কথা নেই, কিন্তু চট্টগ্রামে ক্যামেরার সংখ্যা কম৷ এসব বিষয় আমাদের বুঝতে হবে৷ রাজনৈতিক সভা, ব্যবসায়িক সভাগুলো করার সময় আমাদের এসব বিষয় খেয়াল রাখা উচিত্৷
মান্না দে’র একটি জনপ্রিয় গানের কলির সঙ্গে মিলিয়ে সরকারের প্রভাবশালী এ মন্ত্রী বলেন, কাগজে লেখা নাম মুছে যাবে৷ ফুলের তোড়া নষ্ট হয়ে যাবে৷ ব্যানার- পোস্টার ছিঁড়ে যাবে৷ কিন্তু জনগণের মনের মাঝে নামটি লিখলে সেই নাম কখনোই মুছবে না কিংবা ছিঁড়বে না৷ আমি সেখানেই আমার নাম লেখাতে চাই, কাজের মাধ্যমে৷ সংবর্ধনা নিয়ে, জনসভায় গলা ফাটিয়ে বক্তব্য দিয়ে, ফুল আর ক্রেস্ট নিয়ে খুশি আমি হতে চাইও না আর কাউকেও আমি সেই সুযোগ দিতে চাই না৷
জনগণ নয় মন্ত্রীই জনগণের কাছে দায়বদ্ধ উল্লেখ করে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী বলেন, এখন দেখা যায় কোন মন্ত্রী কোন এলাকায় গেলে জনগণসহ সকলকে তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে৷ তাকে খুশি করতে বিভিন্ন স্লোগান-ব্যানার ফেস্টুন সাঁটানো হয়৷বিভিন্ন উপহার দিতে হয়৷ এসব কেন? মন্ত্রীকে কেন জনগণ খুশি রাখবে? জনগণকেই মন্ত্রীকে খুশি রাখতে হবে৷ তারাতো ভোট দিয়ে মন্ত্রী হওয়ার সেই সুযোগ করে দিয়েছে৷ এই ধরনের সংস্কৃতি থেকে আমাদের বের হতে হবে৷
বাংলাদেশে এখন হাইব্রিড নেতার বাম্পার ফলন হচ্ছে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদের বলেন, এখন দেশে কর্মীর বড়ই অকাল পড়েছে৷ যেদিকে তাকাই শুধুই নেতা আর নেতা৷ দেশে এখন সব কিছুতেই হাইব্রিড চাষ হচ্ছে৷ রাজনীতিতেও হাইব্রিড ঢুকে যাওয়ার নেতার বাম্পার ফলন হচ্ছে৷ ছোট নেতা, বড় নেতা, পাতি নেতার পোস্টারে নগর শহর অলিগলি ভরে গেছে৷ ডিজিটাল পোস্টারে এসব নেতাদের ছবি দেখে অমার নিজেরও ভয় লাগে৷ এত বড়বড় গাল, বাহারি স্টাইলে ছবি৷ মাঝে মাঝে আমার ছবি দেয়ায় আমিও বিব্রত হই৷
সব ফুলেই ভালোবাসা নেই জানিয়ে কাদের বলেন, ‘মন্ত্রী হওয়ার পর অনেকেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমাকে ফুলের তোড়া দেয়৷ কিন্তু সব ফুলেই যে ভালোবাসা গন্ধ রয়েছে তা নয়৷ বেশিরভাগেই রয়েছে স্বাথের্র গন্ধ৷ সেজন্য আমি অনেক ফুল গ্রহণ করি না৷
চট্টগ্রামের বিলবোর্ড টওসঙ্গে বলেন, আমার প্রাচ্যের রাণী চট্টগ্রামের রূপ ঢেকে ফেলা বিলবোর্ড থাকুক তা কখনোই আমি সমর্থন করবো না৷ কারা এসব করে তা আমি জানি৷ সেকারণে যারা এসব ব্যবসা করে তারা আগে আমার সাথে যোগাযোগ রাখলেও এখন আমার কাছে আসে না৷ এসবের আমি পরোয়া করি না, যে কোনো মূল্যে বিলবোর্ড উচ্ছেদ অভিযান চালাতে হবে৷
পরিশেষে সেমিনারের মূল বক্তব্য দেয়ার আগে ওবায়দুল কাদের বলেন, অনেক কথা বলে ফেলেছি, এসব অপ্রিয় কথার জন্য অনেকে আমাকে পছন্দ করে না৷ আপনাদের বলি, আমাকে ডাকবেন না, মানুষের কাছেও আমাকে আর অপ্রিয় বানাবেন না৷