দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৩ ডিসেম্বর: বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে জনশক্তি রফতানি, পর্যটন ও সংস্কৃতি খাতে একটি চুক্তি এবং ৩টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে৷বুধবার পুত্রজায়ায় দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠক শেষে এ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়৷এর মধ্যে রয়েছে ভিসা শর্তাবলীর আংশিক বিলোপন, পর্যটন খাতে সহযোগিতা, শ্রমিকদের কর্মসংস্থান সম্পর্কিত ২০১২ সালের প্রোটেকল সংশোধন এবং সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য খাতে সমঝোতা স্মারক৷
মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আহাদ জাহিদ হারমিদি ও বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ভিসা শর্তাবলীর আংশিক বিলোপন সমঝোতায় স্বাক্ষর করেন৷শ্রমিকদের প্রটোকল সংশোধনিতে স্বাক্ষর করেন৷ মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী দাতো সোরি রিচার্ড রাইয়ত আনাক জায়েম ও বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোবাররক হোসেন৷পর্যটন খাতে সহযোগিতার সমাঝোতা স্মারকে স্বাৰর করেন মালয়েশিয়ার পর্যটন ও সংস্কৃতি বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী মোসত্মপা মুহামেদ ও বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন৷
শিল্প, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কিত সমঝোতায় স্বাক্ষর করেন মালয়েশিয়ার পর্যটন ও সংস্কৃতি বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী ও বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর৷পারদানায় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মিটিং রুমে এ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়৷বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মোহা.নাজিব বিন তুন আবদুল রাজাক চুক্তি স্বাক্ষর প্রত্যক্ষ করেন৷
স্বাক্ষরিত চুক্তির মধ্যে একটি হচ্ছে দুই দেশের মধ্যকার ভিসাপ্রক্রিয়ার অসম্পূর্ণ শর্তসমূহ দূরীকরণ চুক্তি৷ এছাড়া জনশক্তি রপ্তানির বিষয়ে ২০১২ সালে দুই দেশের মধ্যে সই হওয়া সমঝোতা স্মারক সংশোধনে একটি প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়েছে৷ভিসা সংক্রান্ত চুক্তির ফলে এখন থেকে দুই দেশের অফিসিয়াল ও কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীরা বিমানবন্দরে নেমে অনঅ্যারাইভাল ভিসা পাবেন বলে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক৷
আর জনশক্তি রপ্তানির প্রটোকলের ফলে মালয়েশিয়ার সারাওয়াক প্রদেশে ১২ হাজার বাংলাদেশির কাজের সুযোগ তৈরি হবে, যা পর্যায়ক্রমে বেড়ে ৬০ হাজরে উন্নীত হবে বলে জানান তিনি৷বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির বড় বাজার মালয়েশিয়া৷ বর্তমানে প্রায় ছয় লাখ বাংলাদেশি সেখানে বিভিন্ন পেশায় রয়েছেন৷এছাড়া পর্যটন খাতে সহযোগিতা এবং শিল্প, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বিষয়ে সহযোগিতায় দুটি সমঝোতা স্মারকে সই করেছে দুই দেশ৷
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, বেসমারিক বিমান পরিবহন, পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ও সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এ অনুষ্ঠানে উপস্থিতি ছিলেন৷
পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের অত্যন্ত ভাল সম্পর্ক রয়েছে৷ এটাকে আমরা গ্রেটার হাইটসে নিয়ে যেতে চাই৷স্থানীয় সময় বিকাল ৩টায় শেখ হাসিনা পুত্রাজায়ার পারদানা স্কয়ারে পৌঁছালে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর নাজিব রাজাক তাকে অভ্যর্থনা জানান৷
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে সেখানে লালগালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়, একটি চৌকস দল তাকে গার্ড অব অনার দেয়৷ প্রাথমিক আনুষ্ঠানিকতা শেষে দুই প্রধানমন্ত্রী রূদ্ধদ্বার বৈঠক করেন৷ পরে পারদানা মিটিং রুমে শুরু হয় দ্বিপক্ষীয় বৈঠক৷ পরে সেখানেই একটি চুক্তি, একটি প্রটোকল ও সমঝোতা স্মারকে সই করেন দুই দেশের প্রতিনিধিরা৷
দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত ও পাকিস্তানের পর মালয়েশিয়ার সবচেয়ে বড় বাণিজ্য সহযোগী দেশ বাংলাদেশ৷ তবে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে মালয়েশিয়া এগিয়ে আছে অনেক দূর৷বাংলাদেশে প্রতি বছর মালয়েশিয়া থেকে প্রায় ২০০ কোটি ডলারের পণ্য কেনে৷ অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় যায় সাড়ে ১৩ কোটি ডলারের পণ্য৷বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, বিশেষ করে নিটওয়্যার পণ্য রপ্তানি হয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় এই দেশটিতে৷ বিপরীতে আমদানি হয় জ্বালানি ও ভোজ্য তেল৷ বাংলাদেশে শতাধিক মালয়েশীয় কোম্পানির বিনিয়োগও রয়েছে৷তিন দিনের সফরে মঙ্গলবার মালয়েশিয়ায় যাওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৃহস্পতিবার দেশে ফেরার কথা রয়েছে৷