02-12-14-PM_Mahathir Mohammad-2

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৩ ডিসেম্বর: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের পরবর্তী প্রবৃদ্ধির অংশীদার হতে মালয়েশিয়ান বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন৷তিনি বলেন,আপনাদের সকলকে আমি বাংলাদেশে যাওয়ার উষ্ণ আমন্ত্রণ জানাচ্ছি৷ আপনারা গিয়ে প্রকৃত বাংলাদেশ সম্পর্কে অভিজ্ঞতা লাভ করুন৷ বাংলাদেশের পরবর্তী প্রবৃদ্ধির বিকাশে নিজেদের অংশীদার করুন৷প্রধানমন্ত্রী কুয়ালালামপুরে বুধবার গ্রা্যান্ড হায়াত হোটেলে বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের সুযোগ বিষয়ক সংলাপ অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে এসব কথা বলেন৷

তিনি আশা করেন,মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ীরা এশিয়া-প্রশানত্ম মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশকে বিনিয়োগের প্রকৃত প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ হিসেবে পুনরায় বিবেচনা করবে৷তিনি বলেন, কয়েক দশক ধরে আজকের আধুনিক মালয়েশিয়া গড়তে আপনাদের অনেকেই অবদান রেখেছেন৷ আশি বিশ্বাস করি একই সুযোগের হাতছানি বাংলাদেশেও রয়েছে৷প্রধানমন্ত্রী বলেন,সীমাবদ্ধতা ও নিম্নপর্যায়ের অর্থনৈতিক অগ্রগতি সত্ত্বেও বাংলাদেশ বিনিয়োগের যে সুযোগ ও প্রণোদনা দিচ্ছে তা আপনাদের সদয় বিবেচনার দাবি রাখে৷

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন মালয়েশিয়া সাউথ সাউথ এসোসিয়েশন (এমএএসএসএ) এর প্রেসিডেন্ট আজমান হাশিম এবং মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার একেএম আতিকুর রহমান৷এছাড়া অনুষ্ঠানে মালয়েশিয়া সরকারের দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া বিষয়ক বিশেষ দূত এস সামি ভেল্লু,মালয়েশিয়ান স্ট্যান্ডার্ড এন্ড এক্রিডিটেশন কাউন্সিল ডাটুকের চেয়ারম্যান মুসত্মাফা মনসুর, এমরেইল এসডিএন বিএইচডির নির্বাহী পরিচালক ড. অরবিন্দ হরি নারায়ণ, এঙ্জিাভা গ্রুপের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর বেনি্ন হো এবং দক্ষিণ কোরিয়া ও মালয়েশিয়ার শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগ প্রতিনিধিদল উপস্থিত ছিলেন৷

ফেডারেশন অব চেম্বার্স অব কমার্স এন্ড ইন্ড্রাষ্ট্রিস অব বাংলাদেশের সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলও সংলাপ অনুষ্ঠানে অংশ নেয়৷উল্লেখ্য, মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের নেতৃত্বে ১৯৯১ সালে গঠিত মালয়েশিয়া সাউথ সাউথ এসোসিয়েশন (এমএএসএসএ) দক্ষিণ দক্ষিণ সরকারগুলোর সাথে বিসত্মৃত বাণিজ্য নেটওয়ার্ক স্থাপনে কাজ করে যাচ্ছে৷

শেখ হাসিনা বলেন, তিনি ও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক আরো প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রসমূহ চিহ্নিত করেছেন৷বিদু্যত্‍, জ্বালানি ও যোগাযোগ অবকাঠামোর ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার এসব চ্যালেঞ্জকে সুযোগে রূপানত্মরিত করতে পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ইতোমধ্যে বড় অঙ্কের এফডিআই রয়েছে এবং দেশের বৃহত্তর চাহিদা মেটাতে মালয়েশিয়া থেকে মানসম্পন্ন বিনিয়োগকে স্বাগত জানাতে প্রসত্মত রয়েছে৷

তিনি বলেন,বাংলাদেশে বিনিয়োগের সক্ষম পরিবেশ তৈরির ৰেত্রে সীমাবদ্ধতার বিষয়গুলো সম্পর্কে আমরা জানি৷ ফলে ১৮টি বিশেষ অর্থনৈতিক জোন তৈরির প্রক্রিয়া চলছে৷

এ প্রেক্ষাপটে তিনি উল্লেখ করেন, সরকার বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য জটিল লজিষ্টিক সুবিধা দ্রুততার সাথে সহজ করা এবং সুযোগ সুবিধা দেয়ার ব্যবস্থা করছে৷ শেখ হাসিনা বলেন, আরো বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে আমরা আমাদের বৈধ কাঠামোসমূহকে আরো সহজ করার বিষয় খতিয়ে দেখছি৷শেখ হাসিনা এৰেত্রে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন শিথিল ও বিদেশী নাগরিকদের জন্য ওয়ার্ক পারমিট প্রদান সহজীকরণকে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন৷

তিনি বলেন, আমি মনে করি সড়ক, বিদু্যত্‍, জ্বালানি, পর্যটন ও সেবা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পানি সরবরাহের মতো অবকাঠামো খাতগুলো আপনাদের মনোযোগ আকর্ষণ করবে৷ একইভাবে খাদ্য ও কৃষিখাতের পুরোটাই হবে উত্‍সাহব্যঞ্জক৷ এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বসহ (পিপিপি) যে কোন ধরনের অংশীদারিত্বের বিষয় বিবেচনা করতে প্রস্তুত রয়েছে৷প্রধানমন্ত্রী বলেন দক্ষ, দ্রুত-প্রশিক্ষণক্ষম ও যুব কর্মশক্তি, উদার ও প্রতিযোগিতামূলক আর্থিক পরিবেশ ও প্রণোদনা প্যাকেজসহ নতুন যোগাযোগের মাধ্যমে বাংলাদেশ এই সুবিধার দ্বারোদঘাটনে প্রস্তুত রয়েছে৷

তিনি বিভিন্ন সমীক্ষার কথা উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া ও এর বাইরেও গুরুত্বপূর্ণ উত্‍পাদন, বিতরণ ও সরবরাহের কেন্দ্র হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে৷ এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে সংকট মোকাবেলায় সক্ষম সম্প্রসারিত যোগাযোগ ব্যবস্থা, পরিবর্তিত উত্‍পাদন পদ্ধতি, শিল্প কেন্দ্রীভবন ও মূল্য ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশকে ব্যাপক সুযোগের সৃষ্টি করেছে৷শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের যোগাযোগ মাধ্যম বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়া এবং আরো পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে সংযুক্ত করবে৷ এক্ষেত্রে সার্ক, বিমসটেক ও বিসিআইএন-এর মাধ্যমে আমাদের অগ্রসরমান অর্থনৈতিক সংহতি গড়ে ওঠছে৷

প্রধানমন্ত্রী ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয় এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত করার ভিশনের কথা উল্লেখ করে বলেন, তাঁর সরকারের সকল উন্নয়ন কর্মকান্ডের লক্ষ্য হচেছ সকলের জন্য কল্যাণ, ন্যায় বিচার এবং মর্যাদাপূর্ণ জীবন নিশ্চিত করা৷তিনি বলেন, আমাদের সমাজ হচ্ছে অনত্মর্ভুক্তিমূলক, বহুমাত্রিক ও সমজাতিক৷ আমরা উত্‍পাদনকে দায়িত্ব ও কর্ম হিসেবে গণ্য করি; যা অন্যের জীবন ও জীবনযাত্রাকে ব্যহত না করে বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রত্যাশিত মুনাফা ও শ্রমিকদের কল্যাণ বয়ে আনে৷ সামাজিক উন্নয়ন ও অর্থনীতি পাশাপাশিই এগিয়ে যায় এবং দীর্ঘ মেয়াদে যা সুফল বয়ে আনে বলে আমরা বিশ্বাস করি৷

বিগত বছরগুলোতে বাংাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা উলেস্নখ করে শেখ হাসিনা বলেন, গত ছয় বছরে তাঁর দেশে ব্যাপক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হয়েছে৷ বর্তমানে জিডিপি’র পরিমাণ হচ্ছে প্রায় ১শ’ ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম দ্রুত অগ্রসরমান অর্থনীতির দেশ৷ আইএমএফ বাংলাদেশকে ২০১৩ সালে পিপিপি’র হিসেবে বিশ্বের মধ্যে ৩৭তম এবং সাধারণ জিডিপি’র হিসেবে ৩৬তম দেশ হিসাবে স্থান দিয়েছে৷ বিগত এক দশক থেকে আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অব্যাহতভাবে ৬ শতাংশের ওপর অর্জিত হচ্ছে৷

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের সঞ্চয় ও প্রবৃদ্ধি এবং বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধি (সেভিং- জিডিপি ও ইনভেস্টমেন্ট- জিডিপি)-এর হার দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি৷ আমাদের সার্বিক মানব উন্নয়ন সূচক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চেয়ে অনেক দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে৷ আমাদের অনেক পশ্চিমা বন্ধুর হিসেবে অপর্যাপ্ত অবকাঠামো সত্ত্বেও বাংলাদেশে বিনিয়োগের মুনাফা দেশটির নিজস্ব অর্থনীতির চেয়ে অনেক বেশি৷

পরে প্রধানমন্ত্রী বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশে গ্যাস সরবরাহের বর্তমান অবস্থা, কর ব্যবস্থা, অবকাঠামো উন্নয়ন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে মালয়েশীয় ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন৷মালয়েশীয় ব্যবসায়ীরা আবাসন, নির্মাণ ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ খাতে তাদের আগ্রহ ব্যক্ত করেন৷

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ স্থানীয়ভাবে উত্তোলন ও আমদানির মাধ্যমে পাইপ লাইনে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর চেষ্টা করছে৷ প্রসত্মাবিত এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ সম্পন্ন এবং প্রতিবেশী মায়ানমার থেকে গ্যাস আমদানির সিদ্ধানত্ম কার্যকর হলে গ্যাস সংকটের সমাধান হবে৷সরকারের মন্ত্রিবর্গ, ঊধর্্বতন কর্মকর্তাগণ প্রধানমন্ত্রীকে সহায়তা করেন৷বিনট্যাঙ্ক জেভি কনসোর্টিয়ামের চেয়ারম্যান ড. এম সুয়িব কাশমানের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকার চারদিকে রেল সার্কুলার লাইন নির্মাণে তার (কাশমান) প্রসত্মাবকে সরকার স্বাগত জানতে প্রস্তুত রয়েছে৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর কাযর্ালয়ে আনত্মরিক সংবর্ধনা

এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বুধবার পুত্রজায়ায় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক আনত্মরিক সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে৷প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এসে পেঁৗছলে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ নজিব বিন তুন আব্দুল রাজাক লবিতে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান৷ এ সময় একটি ছোট শিশু প্রধানমন্ত্রীকে ফুলের তোড়া উপহার দেয়৷

মালয়েশীয় সেনাবাহিনীর মালে রয়েল রেজিমেন্টের একটি সুসজ্জিত দল তাঁকে গার্ড-অর্নার প্রদান করে৷ এ সময় দু’দেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়৷ শেখ হাসিনা গার্ড পরিদর্শন এবং সালাম গ্রহণ করেন৷ পরে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ নজিব বিন তুন আব্দুল রাজাক বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে অতিথিকে পরিচয় করিয়ে দেন৷সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা শেষে দুই প্রধানমন্ত্রী দুই সরকারের পদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক রুমে যান৷