দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৩ ডিসেম্বর : লোকসভা নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের সঙ্গে ছিটমহল বিনিময় নিয়ে অবস্থান বদলানোর যে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তা বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে৷বুধবার কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা’য় প্রকাশিত একটি খবরে বলা হয়েছে, ৬৫ বছর ধরে ঝুলে থাকা সমস্যাটির সমাধানে সম্মতি জানিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে রাজ্য সরকার৷ছিটমহল বিনিময়ে সীমান্ত চুক্তি কার্যকরে ভারতের সংবিধান সংশোধন বিল রাজ্যসভায় ওঠার ঠিক আগে এর বিরেধিতাকারী মমতার অবস্থান বদলানোর খবর এল৷
রাজ্য সরকারের এই অবস্থান পরিবর্তনের বিষয়ে বৃহস্পতিবার কুচবিহারে এক জনসভায় মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে ঘোষণাও আসতে পারে বলে জানিয়েছে ভারতের সর্বাধিক প্রচারিত বাংলা সংবাদপত্রটি৷রাজ্য সরকারের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে এতে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহের শেষে দিকে পাঠানো মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রের সই করা চিঠিতে বাংলাদেশের সঙ্গে ছিটমহল বিনিময়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নীতিগত কোনো আপত্তি নেই৷
১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু সরকারের সময় ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরিত হয় স্থল সীমান্ত চুক্তি৷ আর ২০১১ সালে তত্কালীন ইউপিএ জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় একটি প্রটোকল সই হয়৷ প্রটোকলটি কার্যকরে ভারতের সংবিধান সংশোধন করার উদ্যোগ নিয়েছিল কংগ্রেস সরকার৷ এজন্য পার্লামেন্টে একটি বিলও তোলা হলে বর্তমানে ক্ষমতায় থাকা সে সময়ের বিরোধী দল বিজেপির সঙ্গে মমতার তৃণমূল কংগ্রেসের বিরোধিতায় তা ঝুলে যায়৷তবে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার পর বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদীর অবস্থান পরিবর্তন হয়৷ গত ২৬ নভেম্বর কাঠমান্ডুতে সার্ক সম্মেলনের ফাঁকে এক বৈঠকে শেখ হাসিনাকে স্থল সীমান্ত চুক্তি কার্যকর এবং তিস্তা চুক্তি সইয়ের ব্যাপারে ‘জোর’ প্রচেষ্টার কথা জানান মোদী৷ এরপর বাংলাদেশের সঙ্গে ভূমি বিনিময়ের জোর বিরোধিতাকারী রাজ্য আসামে গিয়েও মোদী বলেন, এই চুক্তি কার্যকর হলে ওই রাজ্যের ক্ষতি হবে না, বরং আখেরে লাভই হবে৷
মমতার মনোভাব বদলানোরও ইঙ্গিত পাওয়া যায় গত সেপ্টেম্বরে, যখন কলকাতায় বাংলাদেশের সাবেক ডেপুটি হাই কমিশনার আবিদা ইসলাম তার সঙ্গে দেখা করতে যান৷বাংলাদেশের কূটনীতিকের সঙ্গে আলোচনায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ছিটমহলবাসীর দুঃখ-দুর্দশার কথা বর্ণনা করেন বলে জানিয়েছে আনন্দবাজার৷ শেষ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের অবস্থান পরিবর্তনের ফলে স্থলসীমান্ত চুক্তি বিল পাস হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার বলে মনে করা হচ্ছে৷ গত সপ্তাহে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক পার্লামেন্টারি স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সংবিধান সংশোধনের বিলের খসড়াটির অনুমোদন দেওয়া হয়৷ সেখানে তৃণমূল কংগ্রেসের দুই প্রতিনিধি সুগত বসু ও মুমতাজ সংঘমিত্রা চুক্তির পক্ষে সায় দেন৷
তবে যেসব ছিটমহল পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে যুক্ত হবে, সেখানে প্রশাসনিক ব্যবস্থা প্রণয়ন ও পরিকাঠামো উন্নয়নে বিপুল অর্থ ব্যয়ের দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারই নেবে, এমনটাই ইচ্ছা রাজ্য সরকার৷ ছিটমহল পুনর্বাসনের জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ৩০৮ কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করেছে বলে জানা গেছে৷ছিটমহল বিনিময়ের বিষয়ে রাজ্য সরকারের অবস্থান পরিবর্তনকে স্বাগত জানিয়েছেন ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি’র নেতা দীপ্তিমান সেনগুপ্ত৷তিনি বলেন, স্থলসীমান্ত চুক্তি বিল সংসদে পাস হওয়াটা এখন সময়ের অপেক্ষা৷ আশার আলো দেখছেন দুই দেশের ১৬২টি ছিটমহলের প্রায় ৫৬ হাজার অধিবাসী৷