sar.2

দৈনিকবার্তা-গৌরনদী, ০২ ডিসেম্বর: নিম্মমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে স্কুল ভবনের নির্মাণ কাজে বাঁধা দেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোমবার সন্ধ্যায় ও রাতে সরকারি দলের নেতাকমর্ীরা বরিশালের গৌরনদী উপজেলার সংখ্যালঘু অধু্যষিত দোনারকান্দি গ্রামে দফায় দফায় হামলা চালিয়ে সার্বজনিন একটি দূর্গা মন্দিরের ৭টি প্রতিমা ও ৭টি বাড়ি ব্যাপক ভাঙচুর করেছে৷ গৌরনদী উপজেলা ছাত্রলীগের নেতা ও ঠিকাদার শাওন হাওলাদারের নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন দলের শতাধিক নেতাকমর্ী এ হামলা চালায়৷ হামলা ও পাল্টা হামলায় দুই শিক্ষক ও নির্মাণ শ্রমিকসহ উভয় পক্ষের নারীসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে৷ গুরুতর আহতদের গৌরনদী ও কালকিনি উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়৷ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে চার জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷ সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করায় ওই এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে৷ অপর দিকে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে গৌরনদী থানার এক উপপরিদর্শককে (এস.আই) ক্লোজড করেছে জেলা পুলিশ সুপার৷

সরেজমিনে প্রত্যক্ষদশর্ী ও এলাকাবাসীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার সিমান্তবতর্ী ডোনারকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নিমর্াণে ২৯ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ব্যায়ে ঠিকাদারী কাজ পান গৌরনদী উপজেলা ছাত্রলীগের সদস্য শাওন হাওলাদার৷ ওই বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অভিনাষ সরকার অভিযোগ করেন, শাওন হাওলাদার দলের প্রভাব খাটিয়ে নিম্মমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ করে আসছে৷ নতুন ভবনের বেইস ও কলমে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় তারা বাধা দেন৷ তাদের বাধা উপেক্ষা করে নির্মমাণের কাজ চালিয়ে গেলে বিষয়টি উপজেলা প্রকৌশলী দিপল কুমার বিশ্বাসকে জানান৷ সোমবার সকালে দিপল সরেজমিনে গিয়ে শাওনকে মৌখিক ভাবে কাজ বন্ধের নিদের্শ দেন৷ পরবতর্ীতে ওই দিন দুপুরে তিনি লিখিত ভাবে পূনরায় কাজ বন্ধের নিদের্শ দেন৷ অভিনাষ সরকার অরো অভিযোগ করেন, শাওন উপজেলা প্রকৌশলীর নিদের্শ অমান্য করে দলের প্রভাব খাটিয়ে নিমর্াণ কাজ চালিয়ে যায়৷ বিকেল ৫টার সময় অভিনাষ সরকার নিমর্াণ কাজে বাধা দেন৷

এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শাওন লোহার রড় দিয়ে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অভিনাষ সরকারকে পিটিয়ে আহত করে৷ তাত্‍ক্ষনিক সভাপতির স্বজনরা প্রতিবাদ করলে উভয় গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে নির্মাণ শ্রমিক যুবলীগ কমর্ী সাইফুল ইসলাম রক্তাক্ত জখমসহ উভয় পক্ষের অন্তত ৫ জন আহত হয়৷ এ খবর মোবাইল ফোনে ছাত্রলীগ নেতা শাওন হাওলাদার উপজেলার মাগুরা গ্রামে ও শ্রমিক লীগ নেতা শাহআলম লস্কর পাশর্্ববতর্ী কালকিনি উপজেলার ডাসার গ্রামে পৌছায়৷ খবর পেয়ে ওই দুই গ্রাম থেকে তিনটি ট্রাক যোগে সরকারি দলের শতাধিক নেতাকমর্ী ও সমর্থকরা লাঠিসোঁটা, দেশীয় ধারালো অস্ত্র নিয়ে সোমবার সন্ধ্যায় সংখ্যালঘু অধু্যষিত দোনারকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জড়ো হয়৷ এরপর উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা শাওন হাওলাদার, ডাসার গ্রামের শ্রমিক লীগ নেতা শাহআলম লস্কর, যুবলীগ নেতা টিপু মৃধা, আরাফাত শরীফের নেতৃত্বে সরকারি দলের শতাধিক নেতাকমর্ী দোকানারকান্দি গ্রামে হামলা চালায়৷ হামলাকারীরা রাত ৮টা পর্যন্ত ওই গ্রামে তান্ডব চালিয়ে সরকার বাড়ি সার্বজনিন দুর্গা মন্দিরের দূর্গা, স্বরসতী, কার্তিক, অশুর, মহাদেব, গনেশ, লক্ষী প্রতিমা ও গনেশ সরকার, সুশেন সরকার, কিরন বিশ্বাস, কেশব বিশ্বাস, অনিল বিশ্বাস, গৌতম সরকার, চিম্ময় সরকারের বাড়ি ব্যাপক ভাঙচুর করে৷ এ সময় গৌতম সরকার ও সুশেন সরকারের ঘরের ভেতরের ঠাকুর মন্দিরের রাধাকৃষ্ণ প্রতিমা ভাঙচুর ও মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায়৷ এ সময় হামলায় চিম্ময় সরকারের মায়ের মৃতু্যবার্ষিকীর অনুষ্ঠান পন্ড হয়ে যায়৷ অনুষ্ঠানে আগত দুই শতাধিক নারী পুরুষ ও এলাকার অধিকাংশ মানুষ প্রানের ভয়ে এদিকদ্বিগ ছুটাছুটি করে আত্মরক্ষা করেন৷

হামলায় শিক্ষক শঙ্কর সরকার, শিক্ষিকা দিপু সরকার, প্রতিবেশী অসিম সরকার, উজ্জল মলি্লক, অনিমেষ মালি্লক, বিরেন মলি্লক, গৌরী অধিকারীসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে৷ এ ছাড়া গতকাল মঙ্গলবার সকালে দোনারকান্দি গ্রামের নসিমন চালক নরোত্তপ বিশ্বাসকে বাকাই হাটে বসে প্রতিপক্ষ শাওনের পক্ষের লোকজনে মারধর করে৷ খবর পেয়ে রাতেই বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার একেএম এহসান উল্লাহ, গৌরনদী ইউএনও মাসুদ হাসান পাটোয়ারী, পৌর মেয়র মো. হারিছুর রহমান, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান মিজান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন৷ গৌরনদী থানার ওসি আবুল কালাম বলেন, এ ঘটনায় স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অভিনাষ সরকার বাদি হয়ে গতকাল মঙ্গলবার ২৪ জনের নাম উল্লেখ করে ৬৪ জনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেছেন৷ রাতেই ষাড়শি অভিযান চালিয়ে টিপু মৃধা, কামরুল সরদার, হারুন মোল্লা, সাইফুলকে গ্রেপ্তার করেছে হয়েছে৷ বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের জোর প্রচেষ্টা চলছে৷ এ ছাড়া দায়িত্ব অবহেলার কারণে থানার এস.আই মো. হাসানুজ্জামানকে গতকাল সকালে বরিশাল পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়েছে৷ অন্যদিকে, জনতা ব্যাংকের পরিচালক ও কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ নেতা অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস প্রদান করেন৷ অপর দিকে উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি কালিয়া দমন গুহ, সাধারন সম্পাদক প্রণব রঞ্জন বাবু দ্ত্ত ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যান ফ্রন্ডের গৌরনদী উপজেলা সভাপতি দুলাল রায় দুলু ঘটনার সাথে জড়িতে অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানান৷