দৈনিকবার্তা-ঢাকা, 0১ ডিসেম্বর: বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হত্যার কোনো পরিকল্পনা জামায়াতুল মুজাহিদিনের (জেএমবি)নেই৷ভারতীয় পত্রিকাগুলোতে এ সংক্রান্ত যেসব সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে তা সঠিক নয়৷বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়া সাত সদস্যের তদন্তকারী দলের জেরার মুখে গ্রেপ্তারকৃত জেএমবির শীর্ষ নেতা রহমতউল্লাহ ওরফে সাজিদ এই কথা বলেছেন৷অন্যদিকে বর্ধমানের খাগড়াগড়ে যে বোমা বিস্ফোরণ ঘটেছিল তা কোনো নাশকতার উদ্দেশ্যে করা হয়নি বলেও দাবি করেছেন তিনি৷ভারত সফরে যাওয়া তদন্ত দলের এক সদস্য এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন৷
বর্ধমান বিস্ফোরণ ঘটনার পর আটককৃত জঙ্গিদের বরাত দিয়ে ভারতের বিভিন্ন শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা সংবাদ প্রকাশ করে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসনকে হত্যার উদ্দেশ্যে ৩০০জঙ্গি বাংলাদেশে অবস্থান করছে৷ এমন সংবাদের পর নড়েচড়ে বসে বাংলাদেশের গোয়েন্দারা৷ গত ১৭নভেম্বর ভারতীয় জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইয়ের মহাপরিচালক শারদ কুমারের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা সফর করে৷ উভয় দেশের গোয়েন্দাদের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই বিষয়টি উপস্থাপন করা হয় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে৷ কিন্তু তখনও ভারতীয় গোয়েন্দারা বিষয়টি নিশ্চিত করনেনি৷
তবে এমন সংবাদ প্রথম প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক বার্তাসংস্থা রয়টার্স৷ বার্তাসংস্থাটির ভারতীয় সাংবাদিক এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দাবি করেন, জেএমবি জঙ্গিরা খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা করছে৷ভারতীয় গোয়েন্দা দল ঢাকা ত্যাগ করার গত ২৭ থেকে ২৯ নভেম্বর বাংলাদেশের সাত সদস্যেও প্রতিনিধি দল ভারত সফরকালে কথা বলেন আটককৃত জেএমবির শীর্ষ নেতা সাজিদের সঙ্গে৷ কিন্তু বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদেও তিনি এ ধরনের কোনো তথ্যের সত্যতা স্বীকার করেননি৷ গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যেসব জঙ্গি ভারতে আত্মগোপন করেছে তারা মাঝারি ধরনের কোনো নাশকতা করার মতো শক্তিও এখনো পর্যন্ত অর্জন করে উঠতে পারেনি৷
ভারতে পলাতক জঙ্গিদের আর্থিক অবস্থাও খুব ভালো নয়৷ তারা তাদের সদস্যদের স্ত্রীদের মাধ্যমে বোরকা তৈরি করে বিভিন্ন দোকান ও বাসায় ফেরি করে বিক্রি করে সংসারের ব্যয় নির্বাহ করছে৷ গত দুই বছর ধরে তারা বাংলাদেশ থেকে ভারতের বর্ধমানে ঘাঁটি তৈরি করে৷ তবে ভারতীয় গোয়েন্দা নজরদারির কারণে তারা ঘনঘন স্থান পরিবর্তন করতো৷
ভারত সফরকালে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল বর্ধমানের বোমা বিস্ফোরণের স্থানটি পরিদর্শন করে৷ এসময় তারা বিস্ফোরিত বোমার আলামতও পরীক্ষা করে৷ বর্ধমানে যে বোমার বিস্ফোরণ ঘটনানো হয়েছিল সেটি বিশেষ ধরনের কোনো বোমা ছিল না৷ বাংলাদেশে হরতালের সময় ককটেল তৈরিতে যে ধরনের উপকরণ ব্যবহার করা হয়, বর্ধমান বিস্ফোরণের ঘটনায় ব্যবহৃত বোমার উপকরণও ছিল সেরকমই৷
বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের সাজিদ আরো জানান, গত ২৩ ফেব্রুয়ারিতে ময়মনসিংহের ত্রিশালে জঙ্গি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা হয় বর্ধমানে৷ এই ছিনতাই ঘটনার নেতৃত্ব দেয়া জঙ্গি নেতা আনোয়ার হোসেন ফারুক ঘটনায় ৫ মাস আগে গত সেপ্টেম্বরে বর্ধমানে আসে এই হামলার পরিকল্পনা করতে৷বর্ধমান বিস্ফোরণের ঘটনার সময় ক্রিশালের ঘটনায় ছিনতাই হওয়া জঙ্গি বোমারু মিজান ও সালেহিনও সেখানে উপস্থিত ছিলেন বলে জানান সাজিদ৷
এদিকে, ভারতের বর্ধমান বিস্ফোরণের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে মিয়ানমারের তিন নাগরিককে ঢাকায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের সঙ্গে নিষিদ্ধ সংগঠন জামায়াতুল মুজাহেদিন বাংলাদেশের ( জেএমবি) সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে গোয়েন্দা পুলিশের ধারণা৷ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (দক্ষিণ) উপ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় জানান, রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে লালবাগ এতিমখানা মোড় থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়৷এই তিনজন হলেন- নূর হোসেন ওরফে রফিকুল ইসলাম (২৬), ইয়াসির আরাফাত (২২) ও ওমর করিম (২৫)৷
তাদের কাছে পাঁচটি ডেটোনেটর, দুটি জেল বোমা এবং বিস্ফোরক তৈরির উপাদান পাওয়া গেছে বলে গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার সাঈদুর রহমান জানন৷তিনি বলেন, এরা রোহিঙ্গা জঙ্গি৷ মিয়ানমারের জঙ্গি সংগঠন রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও), আরাকান রোহিঙ্গা ইউনিয়ন (এআরইউ) ও নেদারল্যান্ডসভিত্তিক এনজিও গ্লোবাল রেহিঙ্গা সেন্টারের (জিআরসি) সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে৷
গত ২ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে একটি বাড়িতে বিস্ফোরণে দুজন নিহত হওয়ার পর তদন্তের দায়িত্ব নিয়ে এনআইএ কর্মকর্তারা বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সম্পৃক্ততার কথা জানায়৷ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়, যাদের মধ্যে শেখ রহমতুল্লাহ সাজিদ নারায়ণগঞ্জের মাসুম বলে বাংলাদেশের গোয়েন্দারাও নিশ্চিত হয়েছেন৷
বর্ধমানের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে হায়দ্রাবাদ থে