unnamed

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, 0১ ডিসেম্বর: বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম)রেগুলেশন আইন-২০১৪ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা৷ বিদেশি অনুদান নেওয়ার ক্ষেত্রে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করে এবং অনুমোদন ছাড়া প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন না করার বিধান রেখে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) জন্য নতুন আইন করার প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে সরকার৷ সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছাসেবী কাযক্রম) রেগুলেনশন আইন-২০১৪’এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়৷

সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের একথা জানান জানান, বাংলাদেশে এনজিও কার্যক্রম বেড়েছে৷ তারা যাতে আরও কাজ করতে পারে সে জন্য এ আইনটি করা হয়েছে৷ আইনে বলা হয়েছে নিবন্ধন ছাড়া কোনো এনজিও তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না৷

প্রকল্পের অনুমোদন ছাড়া তা বাস্তবায়ন করতে পারবে না৷এনজিওগুলোকে তাদের অনুদানের হিসাব সংরক্ষণ করতে হবে৷ প্রতিটি এনজিওর মাদার অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে৷প্রত্যেকটি এনজিও তাদের সব কার্যক্রম সম্পর্কে বাত্‍সরিক একটি রিপোর্ট দেবে৷ এই রিপোর্ট এনজিও বু্যরোতে দাখিল করতে হবে বলেও জানান তিনি৷

মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের বলেন, ১৯৭৮ ও ১৯৮২ সালের দুটি অধ্যাদেশ দিয়ে এখন বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন (এনজিও) কার্যক্রম পরিচালিত হয়৷ সামরিক শাসনামলের অধ্যাদেশ দুটি একত্র করে আইনে পরিণত করতে এ উদ্যোগ৷এনজিও কাযক্রম পরিচালনা করতে এনজিও বিষয়ক বু্যরো থেকে নিবন্ধন নিতে হবে, নিবন্ধন না নিয়ে কার্যক্রম চালাতে পারবে না৷এ আইন পাস হলে একটি এনজিও ১০ বছরের জন্য নিবন্ধন পাবে৷ তবে আইন অমান্য করলে যে কোনো সময় নিবন্ধন বাতিল বা স্থগিত করা যাবে৷

এনজিও বিষয়ক বু্যরোর অনুমোদন ছাড়া প্রকল্প প্রহণ ও বাস্তবায়ন করা যাবে না জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এনজিওতে বিদেশি উপদেষ্টা নিয়োগের ক্ষেত্রেও স্বারষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা ছাড় নিতে হবে৷ বিদেশি অনুদান একটি নির্দিষ্ট ব্যাংক হিসাবে (মাদার অ্যাকাউন্ট) থাকতে হবে৷ ব্যয়ের হিসাব অডিট করার পর এনজিও বিষয়ক বু্যরোর মহাপরিচালকের কাছে দিতে হবে৷

এনজিও বিষয়ক ব্যুরো এসব বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কার্যক্রম পরিদর্শন,পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন করবে৷মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন,এ আইন না মানলে প্রথমে সতর্ক করা হবে৷ নিবন্ধন বাতিল ও জরিমানার বিধানও আইনে রাখা হয়েছে৷কোনো এনজিও যদি ফৌজদারি অপরাধ করে- যেমন সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদে অর্থায়ন বা সহযোগিতা, নারী-শিশু পাচার, মাদক সংক্রান্ত অপরাধ, ইত্যাদির জন্য দেশের প্রচলিত আইনে আলাদাভাবে বিচার করা হবে৷

১৯৯০ সালে এনজিও বিষয়ক বু্যরো কার্যক্রম শুরু করে৷এ পর্যন্ত ব্যুরো ২ হাজার ৩০৩টি এনজিওর নিবন্ধন দিয়েছে,যার মধ্যে ২৩৩টি বিদেশি এনজিও রয়েছে৷সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এনজিওগুলোর নেওয়া বিদেশি অনুদানে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করাই নতুন আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্য৷

বিচারপতিদের পেনশনের বাধ্যতামূলক সমর্পণের আনুতোষিকের হার বাড়িয়ে একটি আইনের সংশোধনী অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা৷ এদিকে, সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে দ্য সুপ্রিম কোর্ট জাজেস (লিভ. পেনশন অ্যান্ড প্রিভিলিজেস) অর্ডিন্যান্স (অ্যামেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট, ২০১৪’ এর খসড়ার অনুমোদন দেওয়া হয়৷

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের জানান, সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট এবং আপিল বিভাগের বিচারপতিরা এই হারের আওতায় আসবেন৷

একটি উদাহরণ দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কোনো বিচারপতি যদি ৫৬ হাজার টাকা মূল বেতন পান তাহলে তার ৮০ শতাংশ বা ৪৪ হাজার ৮০০ টাকা পেনশন পাবেন৷ এই পেনশনের ৫০ শতাংশ বা ২২ হাজার ৪০০ টাকা বাধ্যতামূলক সমর্পণ করতে হয়৷বাধ্যতামূলক সমর্পণের ক্ষেত্রে প্রতি টাকার বিপরীতে কতো টাকা পাবেন, তার হার তিনটি স্তরে বৃদ্ধি হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব৷

তিনি বলেন, কেউ যদি ৪০-৪৫ বয়সে অবসরে যান তা হলে আগে ছিলো ২৩০ টাকা, এখন তা হয়েছে ২৬০ টাকা৷ ৪৫ থেকে ৫০ বছর বয়সে অবসরে গেলে আনুতোষিকের হার বাড়িয়ে ২১৫ থেকে ২৪৫ টাকা এবং ৫০বা তদুধর্্ব বয়সে অবসরে গেলে তার হার বাড়িয়ে ২০০ থেকে ২৩০ করা হয়েছে৷বিচারপতিরা যদি এখন ৫০ বছর বয়সের ওপরে অবসরে যান তাহলে বাধ্যতামূলক সমর্পণের যে অংশ তার সঙ্গে ২৩০ গুণ দিলে যা হবে তা তিনি পাবেন৷

অন্যদিকে,দশম জাতীয় সংসদের ২০১৫ সালের প্রথম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা৷ বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা বলেন, খসড়া অনুমোদনের পাশাপাশি মন্ত্রিসভা কিছু পর্যবেক্ষণও দিয়েছেন৷ পর্যবেক্ষণের আলোকে খসড়াটি চূড়ান্ত করা হবে৷সংবিধানের ৭৩ (২) ধারা অনুযায়ী, সাধারণত নির্বাচনের পর সংসদের প্রথম অধিবেশনের সূচনায় এবং প্রতি বছরের প্রথম অধিবেশনের শুরুতে রাষ্ট্রপতি জাতীয় সংসদে ভাষণ দিয়ে থাকেন৷

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ রাষ্ট্রপতির ভাষণের খসড়া প্রস্তুত করে থাকে৷ খসড়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতির পর মন্ত্রিসভা বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়৷মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ভাষণের খসড়া চূড়ান্ত করতে নতুন বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে তথ্য নেওয়া হবে৷

রাষ্ট্রপতির ভাষণে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি, সামষ্টিক অর্থনীতি, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ ও সাফল্য, রূপকল্প বাস্তবায়নে রূপরেখা, ডিজিটাল বাংলাদেশ বির্নিমাণে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়নকল্পে বিভিন্ন কর্মসূচির বাস্তবায়ন, দেশি-বিদেশি কর্মসংস্থান, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির প্রসার, বৈদেশিক সম্পর্কোন্নয়নে সাফল্য, প্রশাসনিক নীতি, কৌশল ও অগ্রযাত্রার দিক নির্দেশনা থাকবে৷

ভাষণে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের অগ্রগতি তুলে ধরা হবে বলে জানান তিনি৷মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ভাষণের একটি ইংরেজি ভার্সন তৈরি করা হবে৷এছাড়া বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী ও সাংবাদিক জগলুল আহমেদ চৌধুরীর মৃতু্যতে শোক প্রকাশ প্রস্তাব গ্রহণ করেছে মন্ত্রিসভা৷মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কাইয়ুম চৌধুরী একুশে ও স্বাধীনতা পদক পেয়েছেন৷

শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী রোববার (৩০ নভেম্বর) একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার সময় হঠাত্‍ অসুস্থ হয়ে পড়েন৷ পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিত্‍সকরা মৃত ঘোষণা করে৷এর আগে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে শনিবার (২৯ নভেম্বর) রাতে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিশিষ্ট সাংবাদিক জগলুল আহমেদ৷