দৈনিকবার্তা-কুষ্টিয়া, 0১ডিসেম্বর: শিক্ষার্থী মৃতু্যর পর গাড়ি পোড়ানোকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হলে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় রোববারই বন্ধ ঘোষণা করা হয়৷ তবে সোমবার পরিবহন মালিকদের ডাকা ধর্মঘটের ফলে ক্যাম্পাস ছাড়তে পারছেন না শিক্ষার্থীরা৷ আবার কেউ ক্যাম্পাস ত্যাগ করতে চাইলেও তাদের ওপর চড়াও হচ্ছেন দুবর্ৃত্তরা৷ ফলে মারাত্মক দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা৷ সোমবার এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ৩ হাজার জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ৷
রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেটের সামনে বিশ্ববিদ্যালযের একটি ভাড়া করা বাসের নিচে পড়ে প্রাণ হারান বাইয়োটেকনোলজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের মেধাবী শিক্ষার্থী তোহিদুর রহমান টিটো৷ এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০টি ভাড়া করা বাসসহ ৪২টি বাস পুড়িয়ে দেয়৷ হামলা ও ভাঙচুর করে ভিসির বাসভবন, প্রশাসনিক ভবনসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থাপনায়৷পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনতে গেলে সংঘর্ষে বেঁধে যায়৷ এতে আহত হন ২০ শিক্ষার্থী৷ এ ঘটনায় কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে সোমবার সকাল ১০টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেন৷
এদিকে, বাস পুড়নোর প্রতিবাদে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ জেলার পরিবহন মালিক শ্রমিকরা৷ ফলে হলের ডাইনিং বন্ধ হয়ে গেলেও ক্যাম্পাস ছাড়তে পারছেন না শিক্ষার্থী৷জানা গেছে, আবার কেউ কেউ ক্যাম্পাস ছাড়ার চেষ্টা করলেও তাদের ওপর চড়াও হচ্ছে দুবর্ৃত্তরা৷ তাদের কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হচ্ছে ল্যাপটপ, মোবাইল ফোনসহ মূল্যমান জিনিসপত্র৷
এদিকে, কুষ্টিয়া বাস-মিনিবাস সমিতার মকবুল হোসেন লাবলু জানিয়েছেন, তাদের ক্ষতিপূরণ না দেয়া পর্যন্ত তারা ধর্মঘট অব্যাহত রাখবেন৷আর কুষ্টিয়ার সহকারি পুলিশ সুপার লিমন রায় জানিয়েছেন, ক্যাম্পাস ও এর আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে৷ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি প্রফেসর ড. আব্দুল হাকিম সরকার বলেন, বাস মালিকদের সঙ্গে আলোচনা চলছে, শিগগিরই পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে৷এদিকে, সোমবার সহিংস ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে৷ এসব মামলায় মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আসামি করা হয়েছে৷
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) বাস চাপায় ছাত্র নিহতের ঘটনায় ভাড়ায়চালিত ও ইবির নিজস্ব মোট ৩৫টি বাসে অগি্নসংযোগ ও ক্যাম্পাসে ভাঙচুরের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে৷
পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা মোট দেড় হাজার জনকে আসামি করে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেছে৷ এর মধ্যে দুটিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং অন্যটিতে পুলিশ বাদী হয়েছে৷তবে ছাত্রদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও নিহত ছাত্র টিটুকে চাপা দেওয়া বাস চালকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি৷ এমনকি ওই চালকের বিরুদ্ধে কোনো মামলাও করা হয়নি৷সোমবার দুপুর আড়াইটার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিবুল ইসলাম৷
তিনি জানান, টিটুর পরিবার এখনো শোক কাটিয়ে উঠতে না পারায় মামলা করতে দেরি হচ্ছে৷ তবে খুব দ্রুতই মামলা হবে৷তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ওই চালকের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে ওসি জানান৷এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. টি এম লোকমান হাকিম বলেন, ওই চালকের বিরুদ্ধে মামলা করাটা প্রক্রিয়ার ব্যাপার৷ এজন্য একটু দেরি হয়েছে৷ তবে আমরা সব প্রসেসিং করে থানায় পাঠিয়ে দিয়েছে৷ দ্রুতই মামলা হবে৷
রোববার দুপুরে বাস উঠতে গিয়ে চাপা পড়ে নিহত হন ইবি ছাত্র টিটু৷ এতে বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে থাকা অন্তত ৩৫টি বাস পুড়িয়ে দেয়৷ এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থাপনা, ভবন, অফিস, প্রশাসনিক ভবন, উপাচার্যের বাস ভবনেও ব্যাপক ভাঙচুর চালায় তারা৷শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর ক্যাম্পাসে নির্বিচারে গাড়ি পোড়ানোর জের ধরে ক্যাম্পাসে সংঘর্ষের পর কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন প্রায় তিন হাজার আবাসিক শিক্ষার্থী৷