দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৯ নভেম্বর: বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্টি (বিএমপি) নামে নতুন একটি রাজনৈতিক দলের ঘোষণা দিলেন বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা৷
শনিবার রাজধানীর তোপখানা রোডের মেহেরবা প্লাজায় নিজ ব্যবসায়িক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে নাজমুল হুদা এই দলের ঘোষণা দেন৷নাজমুল হুদা বলেন, এই দল বাংলাদেশের তৃতীয় রাজনৈতিক জোট তথা বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যালায়েন্সের চালিকাশক্তি হিসেবে জোটের অন্যান্য শরিক দলের সঙ্গে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় একযোগে কাজ করবে৷
তিনি দেশের সব মানবাধিকার সংগঠনকে মানবাধিকার পার্টির পতাকাতলে জড়ো হতে আহ্বান জানান৷ অন্য যে কেউ চাইলে এই দলের প্রধান হতে পারবে বলে তিনি জানান৷ তিনি বলেন, তাঁর দলের লক্ষ্য হলো, জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে এমন জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করা৷
বিএনপির সঙ্গে মিল রাখতেই বিএমপি নাম দেওয়া হয়েছে কি না, জানতে চাইলে নাজমুল হুদা বলেন, না এটা বিভ্রান্ত করতে করা হয়নি৷ সংক্ষিপ্ত নামে মিল থাকলেও যখন পুরো নাম বলা হবে, তখন পরিষ্কার হবে৷ আমরা সবাই শিক্ষিত৷ এটা নিয়ে সমস্যা হবে না৷
বিএনপিতে যোগ দেওয়ার গুঞ্জনের বিষয়ে নাজমুল হুদা বলেন, লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়নি৷ তবে বৈঠকের ব্যাপারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের সঙ্গে বেশ কয়েকবার কথা হয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন৷ বর্তমান বিএনপি যে রাজনীতিতে ঝুঁকে পড়েছে, সেই রাজনীতি পছন্দ করেন না বলে জানান নাজমুল হুদা৷ তিনি বলেন, এখন বিএনপিতে যাওয়া আমার ঠিক হবে না৷নাজমুল হুদা বলেন, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় আমাদের মানবাধিকার সংস্থাগুলো এখন সেমিনার, সিম্পোজিয়াম আর গোলটেবিলে সীমাবদ্ধ রয়েছে৷ প্রশাসন এসব কর্মকাণ্ড ভ্রুক্ষেপ করছে না৷ এ কারণে মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে গা ঝাড়া দিয়ে উঠতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি৷
নাজমুল হুদা বলেন, আইন প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে আমাদেরও যেতে হবে ক্ষমতায়৷ গঠন করতে হবে সরকার৷ মানবাধিকারকে আর রাজনীতির বাইরে রাখা সম্ভব নয়৷ নাজমুল হুদা বাংলাদেশ জাতীয় জোট নামে একটি জোটও ঘোষণা করেছেন৷ তবে তাতে কোন কোন দল অন্তর্ভুক্ত হবে তা জানাননি আলোচিত-সমালোচিত এই নেতা৷
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন,নির্যাতিত অবহেলিত নিপীড়িত জনগণের অধিকার রক্ষায় অনেক মানবাধিকার সংগঠন থাকলেও স্বৈরাচারী সরকার সে অধিকার বাস্তবয়নে নির্বাক ও নিক্রিয় থেকেছে৷ কোনো কোনো ক্ষেত্রে হয়েছে মারমুখি৷ আইনের শাসন বলতে কিছু নেই৷ বরং আইনকেই আজ শাসকগোষ্ঠী শাসন করছে৷
বিএনপিতে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নাজমুল হুদা বলেন, অসুস্থ রাজনীতির অংশ হতে চাই না৷ সুস্থ রাজনীতি করার চেষ্টা করবো৷ বিএনপি আগের নীতি থেকে সরে এসেছে৷ দলটি আবার সহিংস আন্দোলনের দিকে যাচ্ছে৷ সহিংসতা আমার নীতি বিরুদ্ধ৷ মাঝখানে কথা হয়েছিল শান্তিপূর্ণ আন্দোলন হবে৷ আবার তারা জ্বালাও- পোড়াও এর দিকে যাচ্ছে৷ এর সঙ্গে আমি থাকতে পারি না৷
গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের জন্য বিএনপিকে দায়ী করে দলটির প্রতিষ্ঠাতা স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, কোটি কোটি মানুষ ভোট দেয়ার জন্য প্রস্তুতি ছিল৷ যদি বলি বিএনপি মানুষকে ভোট থেকে বঞ্চিত করেছ- তা কি ভুল হবে? আমি বার বার বলেছি বিএনপি ভুল করেছে৷ একের পর এক ভুল করতে করতে দলটির এখন দৈন্যদশা৷এসময় উপস্থিত ছিলেন বিএনএর ভাইস চেয়ারম্যান পরশ ভাসানী, রফিকুল ইসলাম আরজু, যুগ্ম-মহাসচিব কেএম বেলায়েত প্রমুখ৷
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে নাজমুল হুদা বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) গঠন করেন৷ মতবিরোধের কারণে ২০১৩ সালে এক সংবাদ সম্মেলনে নাজমুল হুদা এটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন৷ এ বছরের মে মাসে নাজমুল হুদা বাংলাদেশ ন্যাশনাল এলায়েন্স (বিএনএ) নামে আরেকটি দল গঠন করেন৷দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কার্যকলাপের জন্য ২০১০ সালে তত্কালীন ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাকে বহিষ্কার করেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া৷ এরপর তিনি গঠন করেন বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ)৷ পরবর্তী সময়ে তাকে বিএনএফ থেকেও বহিষ্কার করা হয়৷ পরে গত মে মাসে তিনি গঠন করেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স-বিএনএ৷ তবে তাতেও তেমন সাড়া পাননি৷ গত ১ অক্টোবর গুজব ছড়ায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নাজমুল হুদাকে ডেকেছেন৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত্ করতে পারেননি৷