দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৯ নভেম্বর: আবাসন খাতে যেসব ফ্ল্যাট এখনও অবিক্রিত আছে তা বিক্রিতে সহায়তা করতে দেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন৷মন্ত্রী বলেন, উন্নত দেশগুলোতে ফ্ল্যাট কেনার জন্য গ্রাহকদের মাত্র ৩ শতাংশ সুদের হারে ঋণ দেওয়া হয়৷ কিন্তু আমাদের দেশে এ হার অনেক বেশি৷ তাই অনেকের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ফ্ল্যাট কিনতে পারেন না৷
শনিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই) আয়োজিত জনস্বার্থে গৃহনির্মাণ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ আহবান জানান৷ সেমিনারে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি মেম্বার অর্থনীতিবিদ ড. নুরুল আমিন ‘অর্থনৈতিক উন্নয়নে আবাসন খাতের ভূমিকা এবং এ খাতের সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন৷
ডিসিসিআই’র সভাপতি মোহাম্মদ শাহজাহান খানের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন- রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার জিএম জয়নাল আবেদিন ভূঁইয়া, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মো. আবুল কাশেম এবং রিহ্যাবের প্রতিনিধিরা৷
মন্ত্রী বলেন, রাজধানীতে অনেক মধ্যবিত্ত এখনও ফ্ল্যাটের মালিক হতে পারেননি৷ কারণ, ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদের হার৷ তাই ব্যাংকগুলো যদি সহজ শর্তে ও স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করে তবে অবিক্রিত ফ্ল্যাট বিক্রি হবে৷ অর্থাত্ স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করে মধ্যবিত্তদের ফ্ল্যাট কেনায় সহায়তা দেওয়া উচিত৷
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের গরিব ও মধ্যবিত্তদের ঋণ দিলে সেটা কখনও মার যায় না৷ তাদের ঋণ দিলে হলমার্ক, বিসমিল্লাহ, যুবক, ডেসটিনির মতো হবে না৷ কারণ, তারা ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করেন৷ বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও সরকারি চাকরিজীবীরা ঋণ নিয়ে দ্রুত পরিশোধ করে দেন৷ তবে আবাসন কোম্পানির মালিকদের লক্ষ্য রাখতে হবে, এসব মানুষদের জন্য ১২শ’ স্কয়ার ফিটের মধ্যে ফ্ল্যাট দিতে হবে৷ তাদের যদি ৫ হাজার স্কয়ার ফিটের ফ্ল্যাট দেওয়া হয়, তবে তারা টাকা পরিশোধ করতে পারবেন না৷ বড় বড় ফ্ল্যাটে ধনী ব্যবসায়ীরা ক্রয় করবেন৷
মোশাররফ হোসেন বলেন, ঢাকা ও আশপাশে পরিকল্পিতভাবে নগরায়ন হয়নি৷ আগে যারা নগর পরিকল্পনাবিদ ছিলেন তারা এ দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে মিল রেখে পরিকল্পনা করেনি৷ তাদের কোনো ধারণাই ছিল না যে, ভবিষ্যতে ঢাকা কতোটুকু সমপ্রসারিত হবে৷ তাই শহরের আজ এ অবস্থা৷ যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ৬শ’ বছরের পরিকল্পনা করে নগরায়ন করেছে৷ ফলে তাদের শহরগুলো অনেক সুন্দর৷
তিনি বলেন, ঢাকার নগরায়নে আমরা যেসব প্রকৌশলী জড়িত তারা পরিকল্পনায় ভুল করেছি৷ কারণ, এ শহরের মধ্যেই আমরা ট্যানারি ও গার্মেন্টস শিল্প করেছি৷ যার বজর্্য গিয়ে পড়ছে বুড়িগঙ্গাসহ অনেক নদীতে৷ ফলে নদী দূষিত হয়ে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে৷ যদি প্রকৌশলীরা কারখানাগুলোতে ইটিপি’র ব্যবস্থা করতেন, তবে এ সমস্যা হতো না৷ লন্ডনের টেমস নদীর অবস্থাও আমাদের দেশের মতো ছিল৷ কিন্তু তারা সেখান থেকে নদীকে রক্ষা করতে পেরেছে৷ আমরাও আশা করছি, নদী দূষণমুক্ত করতে পারবো৷বসত্মিবাসীদের জন্য রাজধানীর মিরপুরে স্বল্প মূল্যে ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন৷
তিনি বলেন, ‘বসত্মিবাসীদের জন্য রাজধানীর মিরপুরে স্বল্প মূল্য ফ্ল্যাট নিমার্ণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে৷ জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপৰ (এনএইচএ) এই ভবন নির্মাণ করবে৷ নির্মাণ খরচের ওপর মাত্র ১০ শতাংশ সার্ভিস চার্জ ধরে কোন গ্যারিান্টি ছাড়াই বসত্মিবাসীদে কাছে দৈনিক কিসত্মির ভিত্তিতে এটি বিক্রি করা হবে৷ দৈনিক ২৬০ টাকা কিসত্মিতে ২০ বছরে বসত্মিবাসীরা ৪৫০ স্কয়ার ফুটের ফ্ল্যাটের মালিকানা পেয়ে যাবেন৷’
বসত্মিবাসীদের আবাসন সুবিধার জন্য স্বল্প মূল্যের এই ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প সফল হলে ভবিষ্যতে গ্রামেও এ ধরনের প্রকল্প বাসত্মবায়ন করা হবে বলে তিনি জানান৷মন্ত্রী বলেন, ঢাকা নগরায়নে পরিকল্পনাবিদের ভূল ছিল৷ জনসংখ্যা প্রবৃদ্ধির হিসাব না করেই এ সব পরিকল্পনা নেয়া হয়৷ এ কারনে রাজধানীর চারপাশের বুড়িগঙ্গাসহ সব নদী আজ দূষিত হয়ে গেছে৷ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অকেজো হয়ে পড়েছে৷ এখন থেকে সু্যয়েরেজ ট্রিটমেন্ট পস্ন্যান্ট (সিটিপি) ছাড়া কোন ভবনের অনুমোদন দেয়া হবে না বলে তিনি জানান৷তিনি বলেন, সরকার ঢাকার চারপাশের নদীগুলোকে দূষণমুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে৷ জাপানের আর্থিক সহায়তায় এখানে বেশ কিছু প্রকল্প বাসত্মবায়ন করা হবে৷
বর্তমানে ৬২ হাজার ফ্ল্যাট অবিক্রিত অবস্থায় আছে উল্লেখ করে মোশাররফ হোসেন বলেন, পৃথিবীর প্রায় সব দেশে গৃহায়ন খাতে ৩ শতাংশ ঋণ দেয়া হয়৷ কিন্তু আমাদের দেশে ঋণের সুদহার বেশি৷ অবিক্রিত এ সব ফ্ল্যাট বিক্রির জন্য গরীব ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীদের জন্য স্বল্প সুদহারে ঋণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ব্যাংকসমূহের প্রতি আহবান জানান তিনি৷
অনুষ্ঠানে ডিসিসিআই সভাপতি মোহাম্মদ শাহজাহান খান দেশে পরিকল্পিত নগরায়নের জন্য আবাসন খাতে সিঙ্গেল ডিজিট সুদহারে ব্যাংকঋণের দাবি জানান৷অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বর্তমানে জিডিপিতে আবাসান শিল্পের অবদান ১২ থেকে ১৫ শতাংশ৷