দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৮নভেম্বর: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদবিএনপি আবার ক্ষমতায় গেলে সবার আগে সমপ্রচার নীতিমালা বাতিল করা হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ৷ শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন৷বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) যৌথভাবে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে৷ দেশে গণতন্ত্র নেই, রাজনীতি নেই এমন অভিযোগ করে মওদুদ বলেন, স্বৈরাচার সংবাদপত্র ভয় পায়, সমালোচনাকে ভয় করে৷ বর্তমান একনায়কতন্ত্র অতীতের ধারাবাহিকতা৷
বর্তমান সরকার অতীতের স্বৈরাচারের চেয়েও নিষ্ঠুর এমনটা দাবি করে বিএনপির এই নেতা বলেন, সরকার গণতন্ত্রের আবরণে সংবাদপত্রকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে৷ সংবাদপত্রের ওপর যারাই হাত দিয়েছে, তাদের হাত পড়ে গেছে৷সাংবাদিকদের মধ্যে ঐক্য থাকায় এরশাদবিরোধী আন্দোলন সফল হয়ে ছিল এমনটা উল্লেখ করে মওদুদ বলেন, সাংবাদিকদের মধ্যে আবার ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে৷বিএনপি পুনরায় ক্ষমতায় গেলে কোনো টেলিভিশন চ্যানেল বন্ধ করা হবে না এমন আশ্বাস দিয়ে মওদুদ বলেন, সাংবাদিকদের আর সাংবাদিকতার জন্য জেলে যেতে হবে না৷
আগামীর বিএনপি সরকার বিচার বিভাগ,দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক),পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি), নির্বাচন কমিশনসহ গণতন্ত্র সুসংহত করে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতা নিশ্চিত করবে বলে জানান তিনি৷বিএনপির বর্তমান সংগ্রাম ক্ষমতায় যাওয়ার সংগ্রাম নয়, বরং হারানো গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার সংগ্রাম এমনটা দাবি করে মওদুদ বলেন, বেগম খালেদা জিয়াই একমাত্র নেত্রী, যিনি এ আন্দোলনকে নেতৃত্ব দিতে পারেন৷আলোচনায় ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেন, অনেকদিন যাবত আমি কথা বলিনি৷ এতোদিন কথা বলার জন্য অনুপ্রাণিত বা উত্সাহিত বোধ করিনি৷ কারণ দেশে রাজনীতি নেই৷তিনি বলেন, আজ দেশের মানুষের মনে প্রশ্ন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কি করবে? তারা কি আগের মত সরকার চালাবে?৷ আমাদের পরবর্তী সরকার হবে ভিন্ন ধরণের৷
মওদুদ বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে ক্ষমতায় যাওয়াই আমাদের লক্ষ্য নয়৷ জনগণ যদি মনে করে ক্ষমতায় যাওয়াই আমাদের লক্ষ্য৷ তাহলে তারা গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলনে নামবে না৷ আন্দোলন সফল হবে না৷ আমাদের বুঝাতে হবে, এ সংগ্রাম গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার৷ এটা অব্যাহত সংগ্রাম৷ এই সংগ্রামে সকল মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে খালেদার নেতৃত্বে এগিয়ে যেতে হবে৷এসময় তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, এ সংগ্রাম সফল হতে বাধ্য৷ স্বৈরাচার সরকার কখনো মানুষের মন জয় করতে পারে না৷ তারা (জনগণ) এখন ক্ষুব্ধ৷ নির্বাচন হলে তারা তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করবে৷
সাংবাদিকদের উদ্দেশে মওদুদ বলেন, এই সংগ্রাম চিরন্তন৷ অনেকে আপনাদের সঙ্গে নেই৷ তারা ভুল করছে৷ তারা এও জানে যে, আপনার কারেক্ট (সঠিক)৷ কিন্তু নিজেদের রাজনৈতিক আদর্শের কারণে তারা এ সরকারের সমর্থন করছে৷ খালেদাই একমাত্র নেত্রী, যিনি এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে পারে বলেও দাবি করেন মওদুদ৷বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কি কি করবে এমন ফিরিস্তিও তুলে ধরেন বিএনপির এ নেতা৷ তিনি বলেন, আমরা ক্ষমতায় গেলে বর্তমান সরকারের সংবাদপত্রের প্রতি সীমিত ও সংকুচিত নীতি বাতিল করবো৷ কোনো অজুহাতে কোনোভাবেই পত্রিকা বা টিভি চ্যানেল বন্ধ করবো না৷ আমাদের ক্ষমতায় থাকাকালীন কোনো সাংবাদিক জেলে যাবে না৷ আমরা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে চলতে দেবো৷
তিনি আরো বলেন, আমরা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে উজ্জীবিত রাখবো৷ বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত করে দেব৷ ভবিষ্যত্ সরকারকে কার্যকর করতে বিরোধী দলকে সম্মান করবো৷ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), নির্বাচন কমিশন (নিক), পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) কে স্বাধীন ও নির্মোহভাবে কাজ করতে দেবো৷মওদুদ বলেন, স্বৈরাচাররা সংবাদপত্রকে ভয় করে৷ সমালোচনাকে ভয় করে৷ মানুষের কন্ঠরোধ করতে চায়৷ বর্তমান স্বৈরাচার আরও নিষ্ঠুর ধরণের৷ তারা গণতন্ত্রের আবরণে সংবাদপত্র নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে৷ এ পর্যন্ত যারা সংবাদপত্রে আঘাত দিয়েছে, তাদের নিজেদের হাত উড়ে গেছে৷ ১৯৯০ সালের সাংবাদিকরা ঐক্যবদ্ধ ছিল, তাই স্বৈরাচার প্রতিরোধে সফল হয়েছে৷ আজকেও সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংবাদপত্রের পক্ষে নামতে হবে৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সরকার ভাবছে তারা সুষ্ঠুভাবে দেশ পরিচালনা করছে৷ মানুষ রাস্তায় নামছে না৷ কিন্তু তাদের এই ধারণা সঠিক নয়৷ মানুষ সময়ের অপেক্ষায় রয়েছে৷ সঠিক সময়ে গণ-বিস্ফোরণ ঘটবেই৷অধ্যাপক এমাজউদ্দিন বলেন, মানুষ বিএনপির দিকে তাকিয়ে আছে৷ এই মুহূর্তে সকল গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নামতে হবে৷
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ওই আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন- মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএফইউজের মহাসচিব এম এ আজিজ, সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, ডিইউজে’র সভাপতি আব্দুল হাই শিকদার৷সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএফইউজের সিনিয়র সহ-সভাপতি এম আব্দুল্লাহ৷