দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৬নভেম্বর: বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী আয়োজিত চারম্নকলা বিষয়ক সর্ববৃহত্ প্রদর্শনী হলো ‘দ্বিবার্ষিক এশীয় চারম্নকলা প্রদর্শনী বাংলাদেশ’৷ এশিয়া ও প্রশানত্ম মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর বিশিষ্ট শিল্পীদের অংশগ্রহণে এ অনন্য প্রদর্শনী ১৯৮১ সালে যাত্রা শুরম্ন করে৷ এরই ধারাবাহিকতায় ১ ডিসেম্বর ২০১৪ থেকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় চিত্রশালায় আয়োজন করা হচ্ছে মাসব্যাপী ‘১৬তম দ্বিবার্ষিক এশীয় চারম্নকলা প্রদর্শনী বাংলাদেশ-২০১৪’৷
আগামী ১ ডিসেম্বর ২০১৪ বেলা ১১ টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত,এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করতে সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন৷ সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ড.রণজিত্ কুমার বিশ্বাস এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর,এমপি এবং স্বাগত বক্তব্য রাখবেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক জনাব লিয়াকত আলী লাকী৷ মাসব্যাপী এ প্রদর্শনী ১ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ পর্যনত্ম প্রতিদিন বেলা ১১ টা থেকে রাত ৮ টা এবং শুক্রবার বেলা ৩ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যনত্ম দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে৷
‘১৬তম দ্বিবার্ষিক এশীয় চারম্নকলা প্রদর্শনী বাংলাদেশ-২০১৪’ এ অংশগ্রহণের লৰ্যে এ পর্যনত্ম মোট ৩০টি দেশ তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে৷ দেশগুলো হলো:- আফগানিসত্মান, অস্ট্রেলিয়া, বাহরাইন, ভূটান, ব্রম্ননাই, চীন, পূর্ব তিমুর, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইরাক, জাপান, কুয়েত, কাজাকিসত্মান, লেবানন, মিয়ানমার, নেপাল, ওমান, পাকিসত্মান, ফিলিসত্মিন, ফিলিপাইন, কাতার, দৰিণ কোরিয়া, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, সিরিয়া, থাইল্যান্ড, তুরস্ক ও সংযুক্ত আরব আমিরাত৷ এসব দেশের ১০৪ জন শিল্পীর ২০৪ টি শিল্পকর্ম প্রদশনীতে স্থান পাবে৷ অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্য থেকে ৫৫ জন শিল্পী/শিল্প সমালোচক এ প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে৷
এ প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশের ৫১৮ জন শিল্পী তাদের শিল্পকর্ম জমা দেন৷ এসব শিল্পকর্ম থেকে নির্বাচন কমিটি যাচাই বাছাই করে ২০৯জন শিল্পীর ২২৮টি শিল্পকর্ম নির্বাচন করেন, যা এখানে প্রদর্শিত হবে৷ বাংলাদেশর শিল্পীদের শিল্পকর্ম নির্বাচনের জন্য পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি শিল্পকর্ম নির্বাচন কমিটি গঠন করা হয়৷ কমিটির সদস্যরা হলেন-শিল্পী সমরজিত্ রায় চৌধুরী, শিল্পী মনিরম্নল ইসলাম, শিল্পী সৈয়দ আব্দুলস্নাহ খালিদ, শিল্পী মনসুর উল করিম ও শিল্পী ড. ফরিদা জামান৷
‘১৬তম দ্বিবার্ষিক এশীয় চারম্নকলা প্রদর্শনী বাংলাদেশ-২০১৪’ উপলৰে ৩টি গ্রান্ড প্রাইজ দেয়া হবে যার মূল্য প্রতিটি দুই লৰ টাকা এছাড়াও ৬টি সম্মান সূচক পুরস্কার দেয়া হবে যার প্রতিটির মূল্য পঞ্চাশ হাজার টাকা৷ প্রথমবারের মতো এবারের প্রদর্শনীতে ‘পারফরমেন্স আর্ট’ প্রদর্শিত হবে৷ এতে ১০ জন শিল্পী অংশগ্রহণ করবেন৷ এ প্রদর্শনীতে ‘ঈড়হঃবসঢ়ড়ত্ধত্ু ঘব িগবফরধ অত্ঃ চত্ধপঃরপবং’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করা হবে৷ সেমিনারের বিষয়বস্তুর কবু ঘড়ঃব চধঢ়বত্ উপস্থাপন করবেন শিল্পসমালোচক জিয়াউল করিম এবং এর উপর আলোচনা করবেন শিল্পী মোসত্মফা জামান মিঠু, শিল্পী হাসান আশিক ও শিল্পসমালোচক মাহমুদুল হোসেন৷
‘১৬তম দ্বিবার্ষিক এশীয় চারম্নকলা প্রদর্শনী বাংলাদেশ-২০১৪’ উপলৰে তুরস্ক থেকে টমঁত্ধপধহ অশুুঁ , ভারত থেকে জধহধনরত্ ঝরহময কধষবশধ ও চীন থেকে এধড় চবহম বাংলাদেশে আগমন করবেন৷ বাংলাদেশ থেকে জুরি হিসেবে থাকবেন শিল্পী হাসেম খান ও স্থপতি রবিউল হোসেন৷ এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, মিশর ও ব্রাজিল থেকে পর্যবেৰক আসবে বলে আশা করা যাচ্ছে৷ চারম্নশিল্পী, শিল্প সমালোচক ও জুরি কমিটির সদস্যবৃন্দ জাতীয় স্মৃতিসৌধ, শহীদ মিনার, লালবাগ কেলস্না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারম্নকলা ইন্সটিটিউট ও বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর পরিদর্শন করবেন৷
এ প্রদর্শনীর প্রতিদিনের কার্যক্রম সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ ও প্রচারের লৰ্যে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ, চারম্নশিল্পী, শিল্প সমালোচক ও জুরী কমিটির সদস্যবৃন্দসহ সংশিস্নষ্ট সবার সুবিধার্থে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় চিত্রশালায় একটি তথ্য কেন্দ্র স্থাপন করা হবে৷ বিদেশী শিল্পী ও অতিথিদের জন্য বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা কেন্দ্র স্থাপন করা হবে৷’১৬তম দ্বিবার্ষিক এশীয় চারম্নকলা প্রদর্শনী বাংলাদেশ-২০১৪’ উপলৰে ব্রোশিউর ও পোস্টার মুদ্রণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে৷ প্রদর্শনীটিকে উত্সবমুখর ও দৃষ্টিনন্দন করার জন্য জাতীয় প্রেস ক্লাবের কদম ফোয়ারা থেকে শাহবাগ পর্যনত্ম এবং ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থান আকর্ষণীয়ভাবে সাজানো হবে৷ এ প্রদর্শনী উপলৰে ০১ (এক) টি স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করা হবে৷ প্রদর্শনীর উদ্বোধনী দিনে সন্ধ্যায় জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে৷
মাসব্যাপাী ১৬তম দ্বিবার্ষিক এশীয় চারম্নকলা প্রদর্শনী বাংলাদেশ ২০১৪ উপলৰে আজ ২৬ নভেম্বর বেলা ১২টায় একাডেমীর জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়৷ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় সংস্কৃতি মন্ত্রী জনাব আসাদুজ্জমান নূর, এম.পি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. রণজিত্ কুমার বিশ্বাস, এনডিসি, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক জনাব লিয়াকত আলী লাকী, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহবুবা মশকূর ও একাডেমীর চারম্নকলা বিভাগের পরিচালক জনাব মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন৷
সংবাদ সম্মেলনে সংস্কৃতি মন্ত্রী জনাব আসাদুজ্জমান নূর, এম.পি বলেন- বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সহস্রাব্দপ্রাচীন৷ আমরা আমাদের আবহমান এ সংস্কৃতিকে পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে দিতে চাই৷ দ্বিবার্ষিক এ চারম্নকলা প্রদর্শনী একটি আনত্মর্জাতিক কার্যক্রম এবং চারম্নকলা বিষয়ে বাংলাদেশের সর্ববৃহত্ আয়োজন৷ চারম্নকলা বিষয়ে পৃথিবীর অন্যান্য আয়োজনের মধ্যেও এটি অন্যতম৷ এ দ্বিপাৰিক প্রদর্শনীতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ অংশগ্রহণ করে এবং এর মাধ্যমে তাদের শিল্প-সংস্কৃতি সম্পর্কে আমরা সম্যক ধারণা পেয়ে থাকি, যা আমাদের শিল্প-সংস্কৃতির উন্নয়ন ও বিকাশে গুরম্নত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে৷ অন্যদিকে অংশগ্রহণকারী দেশসমূহের শিল্পীগণ আমাদের সমৃদ্ধ শিল্প-সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারে এবং তা স্ব স্ব দেশের জনগণের সামনে উপস্থাপন করতে পারে৷ এর ফলে আমাদের মধ্যে গড়ে ওঠে এক নিবিড় সাংস্কৃতিক যোগাযোগ, যা দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কন্নোয়নে তাত্পর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ আমরা মনে করি, এ আয়োজনের মাধ্যমে একটি সংস্কৃতিমনা জাতি হিসেবে আমাদেরকে বিশ্বসভায় তুলে ধরতে পারবো এবং এর ফলে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হবে৷
এছাড়া বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক জনাব লিয়াকত আলী লাকী বলেন-শিল্প সংস্কৃতির বিকাশে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে, এরই ধারাবাহিকতায় চারম্নশিল্পের উন্নয়নে শিল্পকলা একাডেমী জাতীয় চারম্নকলা প্রদর্শনী, নবীন চারম্নকলা প্রদর্শনী, ঢাকা আর্ট সামিট, জাতীয় ভাস্কর্য প্রদর্শনী, শিল্পকলা একাডেমীর সংগৃহীত বিশিষ্ট চারম্নশিল্পীদের শিল্পকর্ম নিয়ে প্রদর্শনী, সামদানী আর্ট ফাউন্ডেশন এর সাথে যৌথভাবে ঢাকা আর্ট সামিট প্রদর্শনী আয়োজন, বিভিন্ন দেশী-বিদেশী শিল্পীদের সাথে যৌথ প্রদর্শনী আয়োজন করা হয়৷ এছাড়াও ফটোগ্রাফি বিভাগের বিভিন্ন কর্মশালার আয়োজন করা হয়৷ এবার ১৬তম দ্বিবার্ষিক এশীয় চারম্নকলা প্রদর্শনী একাডেমীর চারম্নকলা ভবনের ০৭টি গ্যালারীতে অনুষ্ঠিত হবে৷ এর আগে ১ম থেকে ১৪তম প্রদর্শনীগুলো ওসমানী স্মৃতি মিলনায়ন, জাতীয় জাদুঘর ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর ১টি গ্যালারীসহ ৩টি যায়গায় অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ ১টি গ্যালারী থেকে বৃদ্ধি করে গত ১৫তম দ্বিবার্ষিক এশীয় চারম্নকলা প্রদর্শনী একাডেমীর নবনির্মিত চারম্নকলা ভবনে ০৭টি গ্যালারীতে অনুষ্ঠিত হয়৷ ১৬তম দ্বিবার্ষিক এশীয় চারম্নকলা প্রদর্শনী ২০১৪ এর ব্যাপক প্রচারের স্বার্থে দেশের ৬৪টি জেলা শিল্পকলা একাডেমী, অংশগ্রহণকারী ৩০টি দেশের বাংলাদেশী দূতাবাসে এবং ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্টারসহ পত্র প্রেরণ করা হয়েছে৷ এছাড়াও ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে দেয়াল পোস্টার লাগানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ গণ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারের জন্য পত্র প্রেরণ করা হয়েছে৷ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের মাধ্যমে মাসব্যাপী ‘১৬তম দ্বিবার্ষিক এশীয় চারম্নকলা প্রদর্শনী বাংলাদেশ-২০১৪’ ব্যাপক প্রচার লাভ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন৷ এৰেত্রে সংশিস্নষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেন৷