দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ,২৬ নভেম্বর: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মতপার্থক্য এক পাশে রেখে এতদাঞ্চলের জনগণের প্রকৃত সমৃদ্ধি আনতে সর্বশক্তি নিয়ে কাজ করার জন্য সার্ক নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷তিনি বলেন, সার্ক প্রকৃতপক্ষেই সার্বিক রাজনৈতিক সদিচছা ও উচ্চাশা অর্জন করতে পারে৷ এজন্য আমাদের মতপার্থক্য একপাশে রেখে এতদাঞ্চলের জনগণের প্রকৃত সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি আনয়নে সর্বশক্তি নিয়ে কাজ করতে হবে৷প্রধানমন্ত্রী বুধবার এখানে কাঠমান্ডু সিটি হলে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার (সার্ক) ১৮তম শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে ভাষণে এ আহ্বান জানান৷
আরো বাসত্মবসম্মত, ফলাফলমুখী এবং সম্মিলিত সমৃদ্ধির লক্ষ্যে পারস্পরিক কল্যাণমূলক অংশীদারিত্বের পদক্ষেপ গ্রহণে সার্ক নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আসুন, আরো শানত্মিপূর্ণ, সমৃদ্ধ ও জ্ঞানভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়া গঠনে অবদান রাখার অঙ্গীকার করি৷তিনি বলেন, দ্রুত উন্নয়নে সার্ক দেশগুলোকে তাদের সার্বিক প্রচেষ্টা, উন্নয়ন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার এবং প্রয়োগ সর্বপর্যায়ে জোরদার করতে হবে৷
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য, কৃষি, খাদ্য ও জলবায়ূ পরিবর্তন প্রযুক্তি খাতে সহযোগিতা আরো গভীরতর করার আহবান জানিয়ে বলেন, সার্কের কর্মকান্ডে গতিশীলতা আনয়নে আমাদের মধ্যে আরো খোলামেলা আলোচনা হওয়া দরকার৷শেখ হাসিনা বলেন, দারিদ্র্য সার্ক অঞ্চলের অভিন্ন ও প্রধান শত্রম্ন৷ এটি এ অঞ্চলের শানত্মি ও উন্নয়নকে ব্যাহত করছে৷ ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যাকে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি খাদ্য ও পুষ্টির নিরাপত্তা বিধানের আহবান জানান৷
শেখ হাসিনা বলেন, গত কয়েক দশকে উত্পাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে দক্ষিণ এশিয়া ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে৷ তা দারিদ্র্য বিমোচন এবং এমডিজি’র লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক হয়েছে৷ বাংলাদেশে গত ৫ বছর গড় প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ২ শতাংশ বজায় রয়েছে৷ দারিদ্র্যের হার ২০০৫ সালের ৪০ শতাংশ থেকে বর্তমানে ২৪ দশমিক ৪ শতাংশে নেমে এসেছে৷তিনি বলেন, বাংলাদেশ জনগণের নিরাপদ সুপেয় পানি এবং পয়ঃনিষ্কাশনের শাশ্বত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে৷ তবে যেহেতু আমরা বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত করতে চাই সেহেতু আমাদের আরো অনেক কিছু করতে হবে৷
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের জনগণের পুষ্টির নিরাপত্তা অর্জন এবং দারিদ্র্য বিমোচনে প্রধান খাদ্যশস্য, অভ্যনত্মরীণ মত্স্য ও পশুসম্পদের উত্পাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং কৃষি খাতে পানি ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ এজন্য সার্ক ফ্রেম ওয়ার্কের আওতায় ফুড ব্যাংক ও সিড ব্যাংক পরিচালনা খুবই জরম্নরি৷
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, সার্ক অঞ্চলে রয়েছে বিপুলসংখ্যক তরুণ জনসংখ্যা৷ মানসম্পন্ন শিক্ষা ও কার্যকর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের প্রাথমিকভাবে মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলা প্রয়োজন৷
বাংলাদেশে শিক্ষার উন্নয়নের ওপর আলোকপাত করে তিনি বলেন, সবার জন্য শিৰা নিশ্চিতকরণে নতুন নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে৷ স্নাতক পর্যায় পর্যনত্ম মেয়েরা এখন বিনা বেতনে শিক্ষা পাচ্ছে৷ দরিদ্র পরিবারগুলোর ১২ দশমিক ৮ মিলিয়ন ছাত্র-ছাত্রী মাসিক স্টাইপেন্ড পাচেছ৷ এদের মধ্যে ৭৫ শতাংশই মেয়ে৷তিনি বলেন, প্রতি বছর মাধ্যমিক পর্যায় পর্যনত্ম সকল ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে বিনামূল্যে ৩১৮ মিলিয়ন পাঠ্যপুসত্মক বিতরণ করা হচ্ছে৷ বর্তমানে আমরা আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের মানসম্পন্ন শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি৷
নারী ও পুরুষ সবার কাছে মানসম্পন্ন কারিগরি এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষা সহজলভ্য করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নের লক্ষ্য হতে হবে কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা সৃষ্টি৷বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নারীর ক্ষমতায়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, পুরুষের সঙ্গে জীবনের সর্বসত্মরে তাদের সমান অংশগ্রহণ টেকসই উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য৷এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ অসামান্য অগ্রগতি অর্জন করেছে৷ তিনি বলেন, এ সাফল্যের পেছনে আমাদের সরকারের বাসত্মবমুখী নীতি, সম্পদ বরাদ্দ ও জোরালো অঙ্গীকার গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে কাজ করেছে৷
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রযুক্তি বিশেষ করে আইসিটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে বহুমুখী করেছে৷ এটি আমাদের জীবনে পরিবর্তন এনেছে৷ জীবনযাপনে বহু সমস্যার সমাধান করেছে- যা কয়েক বছর আগেও আমরা ভাবতে পারিনি৷তিনি বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দেশব্যাপী ৫ হাজার ২৭৫টি ডিজিটাল সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে৷ এসব সেন্টার থেকে গ্রামীণ জনগণ প্রায় ২শ’ ধরনের আইসিটি সম্পর্কিত সেবা পাচ্ছে৷ তারা আইটি সংযুক্ত ১৩ হাজার ৫শ’ কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে বিনামূল্যে ওষুধসহ স্বাস্থ্য সেবাও পাচ্ছে৷
জলবায়ূ পরিবর্তনকে বাংলাদেশ ও দৰিণ এশিয়ার হুমকি হিসেবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দুর্যোগের তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ এ কারণে বাংলাদেশের বার্ষিক ডিজিপি ৩ শতাংশ হ্রাস পাচ্ছে৷ ২০৫০ সাল নাগাদ প্রায় ৩ কোটি লোক বাস্তুচু্যত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে৷তিনি বলেন, জলবায়ূ পরিবর্তন জনিত ঝুঁকি কার্যকর ও ব্যাপকভাবে মোকাবেলায় তাঁর সরকার একটি জাতীয় জলবায়ূ পরিবর্তন কৌশল ও একটি জাতীয় কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে৷
শেখ হাসিনা বলেন, অভিযোজন ও প্রশমনে তাঁর সরকার এ পর্যনত্ম নিজস্ব সম্পদ থেকে ৩৮৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ করেছে৷ সার্ক পর্যায়ে জলবায়ূ পরিবর্তনজনিত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আনত্মঃসীমানত্ম উদ্যোগের মাধ্যমে আঞ্চলিক চুক্তি ও পরিকল্পনার নিরাপদ ও ফলাফলমুখী বাসত্মবায়ন প্রয়োজন৷জ্বালানি খাতে সার্ক দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার ওপর গুরম্নত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, এখন সময় এসেছে এ খাতের উন্নয়নে আঞ্চলিক, উপ-আঞ্চলিক ও দ্বিপক্ষীয় উদ্যোগ গ্রহণের৷
তিনি আরো বলেন, আমাদের জনগণের স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়নের জন্য জ্বালানির সর্বোচ্চ সরবরাহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ এ প্রসঙ্গে তিনি জ্বালানি সহযোগিতা সংক্রানত্ম সার্ক ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্টের অগ্রগতিকে প্রশংসনীয় বলে উল্লেখ করেন৷আঞ্চলিক যোগাযোগ প্রসঙ্গে বাংলাদেশর প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার সার্বিক শানত্মি, অগ্রগতি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিতের জন্য যোগাযোগ অবকাঠামো খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাপকভাবে যোগাযোগ বিসত্মারে আগ্রহী৷ আমরা চিনত্মা-ভাবনা, জ্ঞান, প্রযুক্তি, সংস্কৃতি, জনগণ, সড়ক-রেল-বিমান, পণ্য, সেবা ও বিনিয়োগ ও চলাচলে যোগাযোগ বিসত্মারে বিশ্বাসী৷তিনি বলেন, সার্ক দেশগুলোর আনত্মঃআঞ্চলিক বাণিজ্যের ওপর আলোকপাত করা প্রয়োজন৷ এ ছাড়া সাপটা’র দ্রুত ও কার্যকর বাসত্মবায়নও জরম্নরি৷শেখ হাসিনা সার্ক ফোরামের পর্যবেক্ষকদের অবদানকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, বিগত বছরগুলোতে তারা জ্ঞানভিত্তিক সমর্থন দিয়েছে৷ বাংলাদেশ তাদের অবদানকে মূল্য দিয়ে থাকে৷
াংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সার্ক ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় প্রতিষ্ঠিত সেন্টারগুলোতে প্রয়োজনীয় সমর্থন দেয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, এসব কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক পণ্য, জ্ঞান ও ধারণার বাহক৷ এগুলোর উন্নয়নে আমাদের অবশ্যই সম্ভাব্য সব ধরনের সমর্থন ও সহায়তা দিতে হবে৷ এদিকে, নৈরাশ্যকে আশাবাদে’ পরিণত করতে একযোগে কাজ করার জন্য সার্কভুক্ত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷
প্রথমবারের মতো সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়ে এ জোটের দেশগুলোর জন্য ভারতের ভিসা সহজলভ্য করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি৷বুধবার নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে অষ্টাদশ সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনে বক্তব্য দেন নরেন্দ্র মোদী৷চিত্িসার জন্য রোগী ও তার এক সঙ্গীর জন্য তাত্ক্ষণিক চিকিত্সা ভিসা ছাড়াও ব্যবসায়ীদের জন্য ৩ থেকে ৫ পাঁচ বছর মেয়াদী ভিসা দেওয়ার কথা বলেন তিনি৷দক্ষিণ এশিয়ায় যোগাযোগ বৃদ্ধিতে অবকাঠামো উন্নয়নে ভারতের অর্থায়নের প্রতিশ্রুতিও তিনি দেন৷
এ অঞ্চলের উন্নয়নে সম্মিলিত প্রচেষ্টার আহ্বান জানিয়ে মোদী বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় সমন্বিত উদ্যোগ যতোটা জরুরি, বর্তমান বিশ্বের আর কোথাও ততোটা জরুরি নয়৷সার্ক নিয়ে হতাশা ও সংশয় রয়েছে- মন্তব্য করে উপস্থিত রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের উদ্দেশ্যে নরেন্দ্র মোদী বলেন, এই নৈরাশ্যকে আশাবাদে রূপান্তর করতে আমাদের অবশ্যই কাজ করতে হবে৷
নরেন্দ্র মোদী বলেন, ভবিষ্যত্ ভারত নিয়ে তিনি যে স্বপ্ন দেখেন পুরো সার্ক অঞ্চলে যেন তার বাস্তবায়ন ঘটে তিনি সে প্রার্থনা করেন৷আমাদের একে অন্যের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে- একসঙ্গে অনেক কিছু করারও আছে৷ আমি জানি ভারতকেই নেতৃত্ব দিতে হবে এবং আমরা আমাদেরটা করব৷ আমি আশা করি আপনারাও তা করবেন৷
বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান,নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানের আঞ্চলিক জোট সার্ক৷ এই জোটভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ২০০৮ সালে ১৪০ মিলিয়ন ডলারের বাণিজ্যের জায়গায় ২০১২ সালে তা বেড়ে ৮৭৮ ডলারে পৌঁছেছে৷ তবে এখনো তা এই অঞ্চলের মোট বাণিজ্যের পাঁচ শতাংশেরও কম৷এ বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত করে মোদী বলেন, অবাধ বাণিজ্য চুক্তি থাকার পরও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পাঁচ শতাংশেরও কম বাণিজ্য হয়৷ব্যাংকক ও সিঙ্গাপুর যাওয়ার চেয়ে আমাদের অঞ্চলে ভ্রমণ এখনো কঠিন৷অবকাঠামোকে এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় দুর্বল জায়গা হিসেবে চিহ্নিত করে মোদী বলেন, আমি যখন সড়ক পথে কাঠমান্ডু আসার কথা চিন্তা করলাম তখন সীমান্তের রাস্তার কথা ভেবে অনেক কর্মকর্তা শঙ্কিত হয়ে পড়লেন৷
অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য যোগাযোগ বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, এখন ভারতের পাঞ্জাব থেকে পাকিস্তানের পাঞ্জাবে পণ্য আনা নেওয়ার জন্য নয়া দিলি্ল, মুম্বাই, দুবাই ও করাচি হয়ে আসতে হয়, যা যাত্রাপথকে ১১ গুণ বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ব্যয় চারগুণ বাড়িয়ে দেয়৷বিশেষ বিজনেস ও মেডিকেল’ ভিসার ঘোষণা দিয়ে জোটভুক্ত দেশগুলোর প্রতি ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করা, সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো এবং কাগজপত্রের ঝামেলা কমিয়ে আনার আহ্বান জানান নরেন্দ্র মোদী৷সীমান্তে আমাদের কার্যক্রম গতিশীল করার প্রতিশ্রুতি আমি দিচ্ছি, বলেন তিনি৷
অন্যদিকে, পারস্পরিক লড়াই নয় বিদ্যমান সমস্যার সমাধানকে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ৷সার্ক অঞ্চলের মানুষের উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও শান্তি প্রতিষ্ঠাকে পাকিস্তান সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয় বলেও জানান পাক প্রধানমন্ত্রী৷
বুধবার নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর রাষ্ট্রীয় গৃহ সভাতে অনুষ্ঠিত সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রথম পর্বের বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন৷ শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য গভীর সংযোগ এ প্রতিপাদ্যে নেপালে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ১৮তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলন৷এসময় নওয়াজ শরীফ বলেন, আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে পাকিস্তান সব সময়ই সাকের্র পাশে থাকবে৷ ১৮তম সম্মেলনের প্রতিপাদ্যটিতে সকল রাষ্ট্রের মানুষের মনের আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হয়েছে৷
আমাদের উচিত সকলের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করার৷ দারিদ্র্যকে সকলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ জাতীয় সমস্যার সমাধান করতে সার্কভুক্ত সকল রাষ্ট্রকে একত্রে কাজ করতে হবে৷ এ অঞ্চলে সন্ত্রাস দমনে সকল সার্ক দেশের সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালনোর আহ্বান জানানোর মধ্য দিয়ে বুধবার নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে ১৮তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলন শুরু হয়েছে৷নেপালের প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালা বুধবার সকালে কাঠমান্ডুর সিটি হলে দু’দিনের এই শীর্ষ সম্মেলন উদ্বোধন করেন৷
সম্মেলনে নেপালের প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালার সাথে আফগানিসত্মানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ভূটানের প্রধানমন্ত্রী টিশেরিং তোবগায়া, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ ইয়ামিন আব্দুল গাইয়ূম, পাকিসত্মানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ এবং শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট মহিন্দ রাজাপাকসে যোগ দিয়েছেন৷
এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ‘শানত্মি ও উন্নয়নে গভীর সংহতি’৷ সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণে নেপালের প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালা বলেন, সন্ত্রাসবাদ আমাদের অভিন্ন শত্রু এবং দৰিণ এশিয়া এর ভয়াবহ শিকার৷ সন্ত্রাসবাদ, চরমপন্থা এবং ধমর্ীয় মৌলবাদ দৰিণ এশিয়ার শানত্মি ও স্থিতিশীলতাকে ব্যাহত করছে৷ তাই সন্ত্রাসবাদ দমনে আমাদেরকে সম্মিলিত ও দ্ব্যর্থহীন পদক্ষেপ নিতে হবে৷তিনি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সকল প্রতিষ্ঠান ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা গুলোর মধ্যে স্বচছ ও কার্যকর সহযোগিতাসহ সার্কের আওতায় একটি প্রাতিষ্ঠানিক ফ্রেমওয়ার্ক গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন৷
নেপালের প্রধানমন্ত্রী এ অঞ্চলের দারিদ্র্য বিমোচন এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ৰতি রোধে সকল সার্ক দেশের সম্মিলিত প্রচেষ্টার আহ্বান জানান৷ তিনি শানত্মি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সার্ক দেশগুলোর সহযোগিতা কামনা করেন৷এর আগে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ ইয়ামিন আব্দুল গাইয়ূম নেপালের প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালার কাছে সার্কের চেয়ারম্যানশিপ হসত্মানত্মর করেন৷
১৯৮৭ সালের নভেম্বর এবং ২০০২ সালের জানুয়ারির পর এনিয়ে তৃতীয়বার নেপালে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে৷ ২০০৮ সালে নেপাল ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতন্ত্রে পরিণত হওয়ার পর এই শীর্ষ সম্মেলন কূটনৈতিক দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷সম্মেলনে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মরিশাস, মায়ানমার, ইরান ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৯ জন পর্যবেক্ষকও যোগ দিয়েছেন৷
বৃহস্পতিবার কাঠমান্ডু ঘোষণা গ্রহণ এবং কয়েকটি আঞ্চলিক চুক্তি স্বাৰরের মধ্যদিয়ে কাঠমান্ডু সিটি হলে শীর্ষ সম্মেলন শেষ হবে৷ শীর্ষ সম্মেলনে মঙ্গলবার সমাপ্ত হওয়া সার্ক মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক এবং এর আগে সার্ক মন্ত্রীদের সভার প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা হতে পারে৷শীর্ষ সম্মেলনে আঞ্চলিক পর্যায়ে তিনটি চুক্তি স্বাৰরিত হতে পারে৷ এগুলো হচ্ছে- সার্ক এগ্রিমেন্ট অন মোটর ভেহিকেলস, সার্ক এগ্রিমেন্ট অন রেলওয়ে সার্ভিস এবং সার্ক ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট অন এনার্জি কো-অপারেশন৷নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মহেন্দ্র বাহাদুর পান্ডে বলেছেন, এসব চুক্তির ব্যাপারে আলোচনা চলছে৷
সার্ক হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার ৮টি দেশের সমন্বয়ে গঠিত একটি অর্থনৈতিক ও ভৌগোলিক সংস্থা৷ ১৯৮০’র দশকে দক্ষিণ এশিয়ার এ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংক্রানত্ম সংগঠনটির ধারণা আসে এবং ১৯৮৫ সালে ৮ ডিসেম্বর ঢাকায় এর প্রথম শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়৷ তখন বাংলাদেশ, ভূটান, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল ও শ্রীলংকাকে নিয়ে সার্ক গঠিত হয়৷ এরপর আফগানিসত্মানকে নতুন সদস্য ও বেশকয়েকটি দেশকে পর্যবেক্ষক হিসেবে গ্রহণের মধ্য দিয়ে এর সম্প্রসারণ ঘটে৷