দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ,২৬ নভেম্বর:বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ের মধ্যকার পাঁচ ম্যাচ সিরিজে আগেই দুই ম্যাচ জেতা টাইগাররা নিজেদের তৃতীয় ম্যাচেও জয় পেল৷ ফলে, ৩-০তে এগিয়ে সিরিজটি নিজেদের করে নিল মাশরাফি বাহিনী৷আরাফাত সানির ক্যারিয়ার সেরা বোলিং আর এনামুল হক বিজয়ের অসাধারণ ব্যাটিংয়ে টাইগাররা জয় পেল ১২৪ রানের বিশাল ব্যবধানে৷ জিম্বাবুয়েকে ৩৯.৫ ওভারে ১৭৩ রানেই গুটিয়ে দিয়েছে টাইগাররা৷
শতরানের উদ্বোধনী জুটির পর এবার আর পথ হারাননি ব্যাটসম্যানরা৷ তাই তৃতীয় ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়েকে বড় লক্ষ্য দেয় বাংলাদেশ৷ প্রায় তিনশ’ রানের সেই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দুইশ’ রানও করতে পারেনি অতিথিরা৷টানা তিন ম্যাচ জিতে সিরিজ নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ৷ ১২৪ রানের জয়ে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ৷ চলতি বছর ওয়ানডেতে মিরপুরে এটাই বাংলাদেশের প্রথম জয়৷
বুধবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৬ উইকেটে ২৯৭ রান করে বাংলাদেশ৷ জবাবে ৩৯ ওভার ৫ বলে ১৭৩ রানে অলআউট হয়ে যায় জিম্বাবুয়ে৷জিম্বাবুয়ে দলে তিনটি পরিবর্তন এনে ব্যাটিং গভীরতা বাড়ালেও কোনো কাজ হয়নি৷ আরেকটি বড় হার এড়াতে পারেনি অতিথিরা৷মাশরাফি বিন মুর্তজার তোপে মাত্র ২২ রানে দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হ্যামিল্টন মাসাকাদজা ও ভুসি সিবান্দাকে হারিয়ে শুরুতেই ধাক্কা খায় জিম্বাবুয়ে৷নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানোয় কখনোই সেই ধাক্কা সামলে উঠতে পারেনি অতিথিরা৷
দলে ফেরা শফিউল ইসলাম চোট পেয়ে বাইরে চলে গেলে আরেক পেসার রুবেল হোসেনের ওপর দায়িত্ব অনেক বেড়ে যায়৷ সেই দায়িত্ব ভাল ভাবেই সামাল দিয়েছেন তিনি৷রুবেল দলে ফেরা টিমিসেন মারুমাকে ফিরিয়ে দেয়ার পর চতুর্থ উইকেটে সলোমন মায়ারকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়েন ব্রেন্ডন টেইলর৷মায়ারকে স্ট্যাম্পিং করিয়ে ৪১ রানের জুটি ভাঙেন আরাফাত সানি৷ পরের ওভারে ফিরে যান টেইলরও৷ সাকিব আল হাসানের বলে এলবিডবি্লউর ফাঁদে পড়েন তিনি৷
রেগিস চাকাবভাকে নিয়ে ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করেছিলেন এল্টন চিগুম্বুরা৷ কিন্তু মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের বলে চাকাবভা বোল্ড হয়ে গেলে সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়৷ পরের ওভারে অভিষিক্ত পিটার মুরকে এলবিডবি্লউ করে অতিথিদের বিপদ আরো বাড়ান রুবেল৷ব্যাটিং পাওয়ার প্লের প্রথম ওভারের (৩৬) শেষ বলে নেভিল মাডিজিভা ও টিনাশে পানিয়াঙ্গারাকে বিদায় করে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগান সানি৷ চিগুম্বুরা সানির হ্যাটট্রিক ঠেকিয়ে দিলেও দলের বড় হার এড়াতে পারেননি৷
টাফাজওয়া কামনুগোজিকে বোল্ড করে টানা দ্বিতীয় ম্যাচে চার উইকেট নেন সানি৷ আগের ম্যাচে ২৯ রানে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন সানি৷ এবার ২৭ রানে ৪ উইকেট নিয়ে নিজের ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড আরেকটু উজ্জ্বল করেছেন তিনি৷৫৩ রানে অপরাজিত থেকে যান জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক চিগুম্বুরা৷এর আগে স্বাগতিকদের ভালো সূচনা এনে দেন এনামুল হক ও তামিম ইকবাল৷ টানা দ্বিতীয় ম্যাচে উদ্বোধনী জুটিতে শতরান করেন তারা৷
প্রথম ওভারের শেষ বলে এগিয়ে এসে ছক্কা হাঁকিয়ে শুরুটা তামিম করলেও বাংলাদেশকে দ্রুত রান এনে দেয়ার কৃতিত্ব এনামুলের৷ ম্যাচ সেরাও হন তিনি৷তামিমের (৪০) রান আউটে ভাঙে ২৫ ওভার ৫ বল স্থায়ী ১২১ রানের জুটি৷ দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে শেষ সময়ে তামিমের হাত থেকে ব্যাট পড়ে যায়৷ হ্যামিল্টন মাসাকাদজা স্ট্যাম্প ভেঙে দেয়ার সময় তামিম দাগ পার হলেও পা ছিল শূন্যে৷ তাই টানা দ্বিতীয় ম্যাচে রান আউট হয়ে বিদায় নিতে হয় এই তাকে৷প্রথম ওয়ানডেতে তামিমের বিদায়ে ভেঙেছিল ১৫৮ রানের উদ্বোধনী জুটি৷ এরপর দিক হারানো বাংলাদেশ কোনোমতে আড়াইশ’ পার হয়৷
দ্বিতীয় উইকেটে ৩৯ রানের জুটি গড়ে মাত্র ৭ রানের ব্যবধানে মুমিনুল হক ও এনামুলের বিদায়ে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে বাংলাদেশ৷ তিন নম্বরে ফেরা মুমিনুল (১৫) হ্যামিল্টন মাসাকাদজার বলে টিমিসেন মারুমার ক্যাচে পরিণত হন৷শতকের সম্ভাবনা জাগানো এনামুল ফিরেন ব্যাটিং পাওয়ার প্লের প্রথম বলে৷ টাফাজওয়া কামুনগোজির বলে বদলি ফিল্ডার শিঙ্গি মাসাকাজার হাতে ধরা পড়েন তিনি৷ ৯৫ রান করা এনামুলের ১২০ বলের ইনিংসটি ৯টি চারে সাজানো৷এনামুলের বিদায়ের পর পাওয়ার প্লেতে মাত্র ২৭ রান তুলে বাংলাদেশ৷ তবে এরপরই আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেন সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম৷ শেষ পর্যন্ত ৪৮ বলে ৭২ রানের জুটি গড়েন তারা৷
টিনাশে পানিয়াঙ্গারার এক ওভারে ফিরে যান সাকিব, মুশফিক৷ ৩৩ বলে ৪০ রান করেন চার নম্বরে নামা সাকিব৷ ভুসি সিবান্দার ওভারে স্লগ সুইপ করে ছক্কা হাঁকানো মুশফিক ২২ বলে করেন ৩৩ রান৷ সিবান্দার সেই ওভারে ১৮ রান নেন মুশফিক-সাকিব৷থিতু হওয়া দুই ব্যাটসম্যান ফিরে গেলেও তার কোনো প্রভাব পড়তে দেননি মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও সাবি্বর রহমান৷ ৩০ বলে ৪৬ রানের জুটি গড়েন দুই অলরাউন্ডার৷ নেভিল মাডজিভার বলে মারুমার ক্যাচে পরিণত হয়ে ফিরে যাওয়ার আগে মাত্র ১৩ বলে ২২ রান করেন সাবি্বর৷ শেষ পর্যন্ত ৩৩ রানে অপরাজিত থাকেন মাহমুদুল্লাহ৷ তার ২৬ বলের ইনিংসটি সাজানো ৫টি চারে৷
সাকিব-মুশফিকের পর মাহমুদুল্লাহ ও সাবি্বরের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে শেষ ১০ ওভারে ১০৩ রান তুলে বাংলাদেশ৷জিম্বাবুয়ের পানিয়াঙ্গারা ২ উইকেট নেন ৫৪ রানে৷এটি বাংলাদেশের ষোড়শ সিরিজ জয়; জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অষ্টম৷ ২০১০ সালের পর এই প্রথম জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ জিতল তারা৷
সংক্ষিপ্ত স্কোর:বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৯৭/৬ (তামিম ৪০, এনামুল ৯৫, মুমিনুল ১৫, সাকিব ৪০, মুশফিক ৩৩, মাহমুদুল্লাহ ৩৩*, সাবি্বর ২২, মাশরাফি ২*; পানিয়াঙ্গারা ২/৫৪, মাসাকাদজা ১/২৫, কামুনগোজি ১/৪০, মাডজিভা ১/৬০)৷
জিম্বাবুয়ে: ৩৯.৫ ওভারে ১৭৩ (মাসাকাদজা ১২, সিবান্দা ৯, মারুমা ৮, টেইলর ২৮, মায়ার ১২, চাকাবভা ১৪, চিগুম্বুরা ৫৩*, মুর ২, মাডজিভা ১১, পানিয়াঙ্গারা ০, কামুনগোজি ৪; সানি ৪/২৭, রুবেল ২/২২, মাশরাফি ২/২৪, সাকিব ১/১৯, মাহমুদুল্লাহ ১/২৯)৷