দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২০ নভেম্বর: হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলে দণ্ডবিধি সংশোধন করে সড়ক দুর্ঘটনার মামলায় সাজা কমানোর সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করেছে হাই কোর্ট ৷একটি রিট মামলার নিষ্পত্তি করে বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানের বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এই রায় দেয়৷রায়ে বলা হয়, এই সংশোধনী বাংলাদেশের সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক৷১৯৮৫ সালে তখনকার এরশাদ সরকার দণ্ডবিধির ৩০৪ এ ধারা সংশোধন করে সড়ক দুর্ঘটনার মামলায় সর্বোচ্চ সাজা সাত বছর কারাদণ্ড থেকে কমিয়ে তিন বছর করে৷
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান সিদ্দিকী ওই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে এই রিট মামলা করেন৷বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ রায়ের পর সাংবাদিকদের বলেন, আদালত ওই সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করায় এখন সাত বছর সাজাই বহাল হবে৷ তবে বর্তমান বাস্তবতায় এই সাজাও যথেষ্ট নয় বলে রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছে আদালত৷আদালত রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছেন,সড়ক দুর্ঘটনায় সাজার মেয়াদ আরো বৃদ্ধি করা প্রয়োজন৷আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ৷ রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. খুরশীদুল আলম৷১৯৮৫ সালের ১০ অক্টোবর ফৌজদারি কার্যবিধির সিডিউল এর কলাম ৭ এর সংশোধনী এবং ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৩০৪ বি ধারার সংশোধন করে সড়ক দুর্ঘটনায় দোষীদের (চালক) সাজার মেয়াদ ৭ বছর থেকে কমিয়ে ৩ বছর করা হয়৷
এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) নামের মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠনের পক্ষে অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান সিদ্দিকী, ছারওয়ার আহাদ চৌধুরী ও একলাছ উদ্দিন ভূঁইয়া নামের তিন আইনজীবী রিট আবেদন করেন৷এ রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১১ সালের ৪ জানুয়ারি বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনের বেঞ্চ রুল জারি করেন৷ রুলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, আইন, স্বরাষ্ট্র ও সংসদ সচিবালয়ের সচিবকে বিবাদী করা হয়৷রিট আবেদনে বলা হয়, গাড়িচালকদের অসতর্কতায় সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে সেজন্য দায়ী ব্যক্তির সাজা সাত বছর থেকে কমিয়ে তিন বছর করেছে সরকার৷ অথচ প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে৷ শাস্তির পরিমাণ কমে যাওয়ায় সড়ক দুর্ঘটনার হার বেড়ে গেছে৷
শুনানিতে বলা হয়, অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান, কানাডাসহ বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রে সাজার পরিমাণ ১০ বছরের উর্ধে৷ সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বেঁচে থাকা মানুষের মৌলিক অধিকার৷ কিন্তু বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে, পঙ্গুত্ব বরণ করতে হচ্ছে৷ ফলে মানুষ তার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে৷ এ অবস্থায় ১৯৮৫ সালের আইন সংশোধন করে সাজা কমানো অসাংবিধানিক ও বেআইনি৷