দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৯নভেম্বর: ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বিমানের ক্যাপ্টেন ও ডিজিএমসহ সোনা চোরাচালান চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে৷ রাজধানীর বিমানবন্দর, উত্তরা ও বসুন্ধরা এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়৷গ্রেফতারকৃতরা হলেন, বিমানের ক্যাপ্টেন আবু মোঃ আসলাম শহিদ (চীফ অব প্লানিং এন্ড সিডিউলিং), ডিজিএম মোঃ এমদাদ হোসেন, (ফ্লাইট সার্ভিস), সিডিউলিং ম্যানেজার মোঃ তোজাম্মেল হোসেন, বিমানের ঠিকাদার মাহমুদুল হক পলাশ ও উত্তরার ফারহান মানি এঙ্চেঞ্জের মালিক মোঃ হারুন অর রশিদ ৷
এদিকে, স্বর্ণ চোরাচালান মামলায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ডিজিএমসহ গ্রেফতার পাঁচজনের চারদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত৷বুধবারঢাকা সিএমএম আদালতের বিচারক মোহাম্মদ এরফান উল্লাহ রিমান্ড শুনানি শেষে এ আদেশ দেন৷এর আগে আসামিদের আদালতে হাজির করে ১০ দিন করে রিমান্ড চায় গোয়েন্দা পুলিশ৷
পুলিশ জানায়, চলতি মাসের ১২ নভেম্বর বাংলাদেশ বিমানের কেবিন ক্রু বিজি-০৪৬ ফ্লাইটের মাজহারুল আফসার ওরফে রাসেলকে বিমানবন্দর কাস্টমস কর্তৃপৰ ২ কেজি ৬০০ গ্রাম স্বর্ণ ও ৬টি আইপ্যাডসহ গ্রেফতার করে৷গ্রেফতারকৃত রাসেলের দেয়া তথ্যানুযায়ী তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়৷কাস্টমস কতর্ৃপক্ষ বিমানবন্দর থানায় বিশেষ ৰমতা আইনে রাসেলের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে৷পরে মামলাটি ডিএমপি’র গোয়েন্দা ও অপরাধতথ্য বিভাগে হস্তানত্মর করা হয়৷
ডিবি’র সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার মিনহাজুল ইসলামকে এ মামলার তদনত্মকারী কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হয়৷মামলার তদনত্ম কর্মকর্তা গ্রেফতারকৃত মাজহারম্নল আফসার ওরফে রাসেলকে ৩ দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেন৷মাজহারুল আফসার জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে৷ তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে বিমানবন্দর কেন্দ্রিক স্বর্ণ ও মুদ্রা চোরাচালান চক্রের সাথে জড়িত সদস্যদের নাম বেরিয়ে আসে৷
ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (উত্তর)শেখ নাজমুল আলম জানান, মঙ্গলবার গভীর রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়৷গত প্রায় বছর দুই ধরে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রায় প্রতিদিনই সোনার চালান ধরা পড়লেও এই প্রথম গুরুত্বপূর্ণ কাউকে গ্রেপ্তার করা হলো৷
শাহজালাল বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের দায়িত্বে থাকা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের কারো সহযোগিতা ছাড়া এভাবে নিয়মিত সোনা চোরাচালন যে সম্ভব নয়- সে সন্দেহ আগে থেকেই ছিল৷এসব ঘটনায় কখনো যাত্রীদের ব্যাগে বা শরীরে লুকানো অবস্থায়, আবার কখনো উড়োজাহাজের টয়লেট বা আসনের নিচে পরিত্যক্ত অবস্থায় বিভিন্ন পরিমাণ সোনার বার পাওয়া যায়৷এর মধ্যে গত ২৬ এপ্রিল দুবাই থেকে আসা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজে ১০৬ কেজি সোনা পান শাহজালাল বিমানবন্দরের শুল্ক কর্মকর্তারা৷
মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, গত ১২ নভেম্বর বিমানের একটি ফ্লাইট থেকে সোনা উদ্ধারের পর মাজহারুল আফসার নামের এক কেবিন ক্রুকে আটক করা হয়৷ তিন দিনের রিমান্ডে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই মঙ্গলবার রাতে অভিযান চালানো হয়৷সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মূলত শফিউল আজম নামের এক ব্যক্তি দুবাই থেকে চোরাচালানের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করেন৷ আর পলাশ এ কাজের সমন্বয় করতেন৷
অর্থ আদান প্রদানের বিষয়টি দেখতেন হারুন অর রশিদ৷ বিদেশ থেকে আনা চালান নির্বিঘ্নে কাস্টমস পার করতে বিমানের ক্যাপ্টেন থেকে শুরু করে অন্যান্য পর্যায়ে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব ভাগ করে দেয়া হতো৷
ঠিকাদার পলাশ বেশ প্রভাবশালী৷ তাকে আমরা ভোরে গ্রেপ্তার করি৷ এখনো তার সাথে কথা বলার সুযোগ হয়নি৷ আমাদের কাছে কিছু তথ্য আছে, আমরা সেগুলো যাচাই বাছাই করে দেখব৷মনিরুল জানান, বিমান বালা থেকে শুরু করে বিমানের বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজনের নাম এসেছে তাদের তদন্তে৷ পলাশের স্ত্রী নিজেও একজন বিমানবালা৷এই চক্রের সঙ্গে আরো কয়েকজন কেবিন ক্রু জড়িত বলে তথ্য আছে পুলিশের হাতে৷ তবে পুরোপুরি নিশ্চিত হয়েই তাদের বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নিতে চায়৷ গ্রেপ্তারকৃতরা ছাড়াও এ চক্রের সাথে জড়িত আরো বেশ কিছু নাম এসেছে৷ এগুলো যাচাই বাছাই করে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে৷বিমানবন্দর কাস্টমসের কেউ এতে জড়িত কি না জানতে চাইলে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “যার যার নাম আসবে সকলকেই আইনের আওতায় আনা হবে৷
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ভারপ্রাপ্ত ব্যাবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন মোসাদ্দেক আহমেদ বলেন, আমরা গণমাধ্যমের খবরে তাদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানতে পেরেছি৷ অপরাধে জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷