দৈনিকবার্তা-যশোর, ১৯নভেম্বর: রাজধানীর ধানমন্ডিতে নিহত নারী চিকিত্সক শামারুখ মাহজাবিনের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাল্টে দেওয়ার আশঙ্কা করছেন তাঁর বাবা নূরুল ইসলাম৷ বুধবার দুপুরে যশোর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ আশঙ্কার কথা জানান৷যশোর-৫ আসনের সরকারদলীয় সাবেক সাংসদ খান টিপু সুলতানের পুত্রবধূ শামারুখের লাশ গত বৃহস্পতিবার তাঁর ধানমন্ডির বাড়ির বাথরুম থেকে উদ্ধার করা হয়৷ শামারুখকে শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগ তোলেন তাঁর বাবা যশোরের ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির সহকারী প্রকৌশলী নূরুল ইসলাম৷ ওই রাতেই তিনি ধানমন্ডি থানায় একটি হত্যা মামলা করেন৷ মামলায় নিহত শামারুখের স্বামী হুমায়ুন সুলতান, শ্বশুর খান টিপু সুলতান ও শাশুড়ি চিকিত্সক জেসমিন আরা বেগমকে আসামি করা হয়৷ স্বামী হুমায়ুন সুলতানকে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ এবং শ্বশুর ও শাশুড়ি উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিনে আছেন৷
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়৷ এ জন্য আমাদের পক্ষ থেকে কোনো তদবির বা চাপ নেই৷ অথচ ফরেনসিক মেডিসিনের প্রধান বলেছেন, কেসটা নিয়ে আমরা ভীষণ চাপে আছি৷ এই চাপটা দিচ্ছে কে?’ তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাঁর মেয়ে হত্যার বিচার দাবি করেন৷যশোর ডা. শামারম্নখ মাহাজাবিন শামার হত্যাকারীদের দৃষ্টানত্মমূলক শাসত্মি দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর হসত্মক্ষেপ কামনা করেছেন নিহতের পিতা প্রকৌশলী নূরুল ইসলাম৷
তিনি লাশের ময়না তদনত্ম রিপোর্ট নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে অভিযোগ করে বলেন, এ নৃশংস হত্যার সাথে জড়িতরা প্রশাসনসহ বিভিন্ন মহলের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে৷ তিনি এ ঘটনার প্রধান আসামি যশোর-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য খান টিপু সুলতানকে খুনি আখ্যায়িত করে বলেন, আমার মেয়ের বিয়ের পর থেকে তার পরিবার অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে আসছিলো৷গত ১৩ নভেম্বর খান টিপু সুলতান ও তার স্ত্রী-পুত্র আমার মেয়েকে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যার অপপ্রচার চালায়৷ তিনি ন্যায় বিচারের স্বার্থে আসামিদের গ্রেফতারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাসত্মির দাবি জানান৷
সংবাদ সম্মেলনে যশোর আইডিবির সভাপতি আবুল হোসেন, যশোর বিএএফ শাহিন কলেজের অধ্যক্ষ মকবুল হোসেন, আইন সহায়তা কেন্দ্রের উপদেষ্টা জিবি আলমসহ তার পরিবারের স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন৷এদিকে শামারুখ হত্যা মামলায় রেগ্রপ্তার তার স্বামী হুমায়ুন সুলতানকে রিমান্ডের নামে থানায় জামাই আদরে রাখা হয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে৷শামারুখ মাহজাবিনের ভাই শাহানুর শরিফ আশঙ্কা করে সাংবাদিকদের বলেন, বোনের এই নির্মম মৃতু্যর ঘটনাকে খান টিপু সুলতান পরিবার ভিন্নখাতেনেয়ার জোর চেষ্টা চালাচ্ছে৷ টিপু সুলতান পুলিশকে প্রভাবিত করছে৷ পোস্টমর্টেম প্রতিবেদনের ব্যাপারেও ডাক্তারদের ওপর নানা চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে৷ একই সঙ্গে পরোক্ষভাবে তাদের ওপর নানা হুমকি আসছে৷
তিনি অভিযোগ করে বলেন, শামারুখের মৃতু্যর আলামত ইতোমধ্যে নষ্ট করে ফেলা হয়েছে৷ শামারুখ মারা যাওয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে কোনো আলামত সংগ্রহ করতে পারেনি৷ শামারুখের ডায়েরি নিয়েও বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে৷তিনি বলেন, ‘২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমাদের মা মারা যাওয়ার পর দুই ভাই-বোন বাবাকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন৷ শামারুখ ছোট হলেও সে আমাদের আগলে রেখেছে৷ শামারুখ তখন মাকে উদ্দেশ্য করে ডায়েরিতে কিছু কথা লিখতো৷ কিন্তু সেই ডায়েরির কথাগুলো নিয়ে খান টিপু সুলতান ও তার পরিবারের লোকজন ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করছে৷স্বজনদের অভিযোগ, বিয়ের পর থেকে শামারুখকে বিভিন্ন অজুহাতে খান টিপু সুলতান ও তার স্ত্রী নির্যাতন করছিলেন৷
শামারুখের বাবা নুরুল ইসলামের অভিযোগ, খান টিপু সুলতান, তার স্ত্রী জেসমিন আরা ও ছেলে হুমায়ুন সুলতান পরস্পর যোগসাজশে পরিকল্পিতভাবে শামারখককে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছেন৷ মামলার পর থেকেই খান টিপু সুলতানের পক্ষ থেকে নানাভাবে তাকে ও আত্মীয়-স্বজনকে হুমকি দেয়া হচ্ছে৷এদিকে রিমান্ডে শামারুখের স্বামী হুমায়ুন সুলতান মুখ খুলছেন না বলে দাবি পুলিশের৷ মৃত্যুরহস্য উদঘাটনের জন্য পুলিশ তাকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে৷ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ধানমণ্ডি থানার এসআই কাজী শরীফুল ইসলাম জানান, হুমায়ুন সুলতানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে৷ তবে শামারুখের মৃত্যুর বিষয় এখনো মুখ খোলেনি৷ বারবারই হুমায়ুন দাবি করছেন, তার স্ত্রী আত্মহত্যা করেছেন৷ বুধবার তার রিমান্ড শেষ হবে৷
গত ১৩ নভেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুরে শ্বশুর খান টিপু সুলতানের ধানমণ্ডির বাসায় শামারুখের রহস্যজনক মৃতু্য হয়৷ সংজ্ঞাহীন অবস্থায় তাকে তার শাশুড়ি সেন্ট্রাল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিত্সক মৃত ঘোষণা করেন৷ শামারুখের গলায় নীল জখম ও হাতে কাটা চিহৃ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন ময়না তদন্তকারী চিকিত্সা কর্মকর্তা৷
এ ঘটনায় মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে শ্বাসরোধ করে হত্যা করার অভিযোগ এনে ওই রাতেই শামারুখের বাবা নুরুল ইসলাম ধানমন্ডি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন৷ মামলায় শামারুখের স্বামী হুমায়ুন সুলতান, শ্বশুর আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য খান টিপু সুলতান ও শাশুড়ি ডাক্তার জেসমিন আরাকে আসামি করা হয়েছে৷ ওই দিন রাতে পুলিশ হুমায়ুন সুলতানকে গ্রেপ্তার করে৷ টিপু সুলতান স্ত্রীকে নিয়ে আত্মগোপন করলেও পরে উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিন পেয়েছেন৷
