দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৯নভেম্বর: পথবাসী ও বস্তিবাসী মানুষের প্রতি সাংবিধানিক অধিকার দিতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান৷ তিনি বলেন, পথবাসী মানুষের অধিকার নিশ্চিত করতে গৃহহীন পথবাসী মানুষেরা যে যেখানে বসবাস করে সেটাকে তাদের বর্তমান ঠিকানা ধরে নাগরিক পরিচয় পত্র দিতে হবে৷ বুধবার সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে নগর পথবাসী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় চিহ্নিত সমস্যা নিরসনে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন৷
পথবাসী মানুষের উন্নয়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় সহযোগী বেসরকারী সংস্থা কনসার্ণ ওয়াল্ড ওয়াইড,বস্নাস্ট, ও কোয়ালিশন ফর দ্যা আরবান পুওর(কাপ) এর উদ্যোগে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, মো. ইশরাফিল আলম এমপি, নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব আবু জাফর সরকার, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সচিব এম এ সালাম৷ আইন কমিশনের কর্মকর্তা ফাতেমা জাহান স্বর্ণা৷সভায় পথবাসী মানুষের নাগরিক অধিকারের প্রতিবন্ধকতা নিয়ে ধারণাপত্র পড়ে শোনান ব্লাস্ট-এর অনারারি নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন৷অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন মানবাধিকার কমিশনের সচিব এম এ সালাম, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. এ জাফর সরকার, কনসার্ন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর এ কে এম মুসা প্রমুখ৷
ড. মিজানুর রহমান বলেন, পথবাসী মানুষেরাও এদেশের নাগরিক, সকল নাগরিকের মতো এদেরও অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব৷ড. মিজান বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের বাস্তবায়ন দেখতে চাই৷ আমরা চাই সমতা, ন্যায় বিচার এবং মানবতার ভিত্তিতে বাংলাদেশ গড়ে উঠুক৷তিনি বলেন, পথবাসী জনগণের ক্ষেত্রে বর্তমান ঠিকানা না থাকায় অনেকেই জাতীয় পরিচয়পত্র পাচ্ছেন না এবং ভোটার হতে পারছেন না৷ এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ঠিকানা না থাকার অযুহাতে তাদেরকে সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করছেন৷ কিন্তু আইনে এটা কোনো বাধা নয়৷ একজন মানুষ সে যেখানেই থাকুন না কেন তিনি তার নাগরিক অধিকার প্রাপ্য হবেন৷
জাতীয় পরিচয়পত্র বা ভোটার আইডি আইনের প্রশংসা করে তিনি বলেন, এটি একটি জনবান্ধব আইন৷ তবে আইনের বাস্তবায়নকারীরা জনবান্ধব নয়৷ আমলাতান্ত্রিক জটিলতাই এর বড় বাধা৷তিনি বলেন, রাষ্ট্রের প্রকৃত জনগণরা অ-জনগণে রুপান্তরিত হচ্ছে৷এ থেকে বেড়িয়ে আসতে হলে প্রথমে সড়ষে থেকে ভূত তাড়াতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷মিজানুর রহমান বলেন, পথবাসীদের মৌলিক অধিকারসহ ভোটার আইডি কার্ড ও জন্মনিবন্ধন করার অধিকার থাকলেও মানসিক দৈন্যের কারণে তাদের উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছেনা৷
মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান বলেন, জন্ম ও মৃতু্য নিবন্ধন আইন, জাতীয় পরিচয়পত্র আইন এবং ভোটার আইডি আইন প্রণেতারা দরিদ্র ও জনবান্দব উলেস্নখ করে তিনি বলেন, সংবিধানে আইনগুলোতে পথবাসীদের অধিকার সংরৰণে কোন জটিলতা না থাকলেও শুধুমাত্র দায়িত্বশীল সংশ্লিষ্টদের গাফিলতি ও দৃষ্টিভঙ্গির কারণে পথবাসীরা তাদের সকল রাষ্ট্রীয় অধিকার ও সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে৷তিনি পথবাসীদের সকলপ্রকার অধিকার সংরক্ষণে সরকারী ও বেসরকারী উন্নয়নসংস্থাকে একযোগে কাজ করার আহবান জানান৷
সভার বিশেষ অতিথি মো. ইসরাফিল আলম এমপি বলেন, বাংলাদেশে পথবাসীদের সংখ্যা কতো তার সঠিক হিসেব সরকারের কাছে নেই৷ ধারণা করা হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ হাজার হবে৷ তাদের অনেক নাগরিক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে৷ কিন্তু বিষয়টা যতোটা না আইনগত তার চেয়ে বেশি দৃষ্টিভঙ্গিজনিত৷ তাই সকলকে সচেতনতার বিষয়ে জোড় দিতে হবে৷তিনি বলেন, পথবাসীদের মধ্যে নারী এবং শিশু পথবাসীদের সমস্যাটা বেশি৷ এজন্য সরকারের খাস জায়গাগুলোতে তাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা যেতে পারে৷ সেইসঙ্গে দুস্থ মানুষের জন্য সরকারি সহযোগিতা ঠিক ব্যক্তিকে দেয়া হলে এই সমস্যা কিছুটা কমবে৷মতবিনিময় সভায় পথবাসী মানুষের নাগরিক অধিকারে প্রতিবন্ধকতা বিষয়ে বস্নাস্ট এর অনারারি নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন এক ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন৷
ধারণাপত্রে,আইন ও বিধিমালায় বাঁধা না থাকলেও জন্মনিবন্ধন,ভোটার রেজিস্ট্রেশন এবং জাতীয় পরিচয় পত্র নিবন্ধন ফরম এ সুনির্দিষ্ট স’ায়ী ও অস্থায়ী(বাড়ির হোল্ডিং নম্বরসহ)ঠিকানা লিপিবদ্ধ বাধ্যতামূলক হওয়ায় নগর পথবাসী মানুষেরা তাদের জন্মনিবন্ধন ও ভোটার নিবন্ধন করাতে পারছে না৷ জন্মনিবন্ধন সনদ ছাড়া ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয় পত্র পাওয়া সম্ভব নয় এ কারণে পথবাসীরা তাদের নাগরিক অধিকার ও ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ায় রাষ্ট্রের অন্যান্য সুযোগ ও সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয় ৷অধ্যাপক মিজানুর রহমানের পরিচালনায় এক উন্মুক্ত আলোচনায় জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজ, সাংবাদিক, উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন৷মতবিনিময় সভায় বক্তারা জন্মনিবন্ধন ও ভোটার আইডি না থাকার কারণে ফুটপাতে বসবাসকারী পথবাসী মানুষের নানান নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে৷ সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে তারা চাকুরী,ব্যাংক একাউন্ট খুলতে পারছে না৷তারা বলেন,আইনের ৰেত্রে কোন প্রতিবন্ধকতা না থাকা সত্বেও দৃষ্টিভঙ্গি ও আইনের যথাযথ চর্চার অভাবে পথবাসীরা নাগরিক সুযোগ ও সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে৷
মতবিনিময় সভায়,জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও সিভিল সোসাইটি জন্মনিবন্ধনের জন্য কি কি প্রয়োজন তা সমর্্পকে সকল নিবন্ধককে স্বচছধারণা দেয়ার জন্য সিটি কর্পোরেশনকে নির্দেশনা প্রদান করা, বিশেষ করে জন্মনিবন্ধন করার জন্য হোল্ডিং নম্বরের ব্যবস্থা না রাখা,শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে শিৰাথর্ীর জন্মনিবন্ধন করেছে কিনা তা তথ্য অধিকার আইনের মাধ্যমে জানতে চাওয়া,সামাজিক নিরাপত্তা নীতিতে পথবাসী জনগনের বিষয় অনর্ত্মভুক্তির জন্য এডভোকেসি করা,জাতীয় পরিচয় পত্রের আবেদনপত্রে পরিবর্তনের জন্য নির্বাচন কমিশনের সাথে এডভোকেসি করণ, হোল্ডিং নম্বর ব্যাতিত জন্মনিবন্ধন করা, বিষয়টি সকল নিবন্ধককে স্বচছভাবে জানানোর জন্য সিটি কর্পোরেশনের সাথে এডভোকেসি করা এবং জন্ম নিবন্ধনের ক্ষেত্রে সরকারী কর্মকর্তাদের দায়িত্বপালনে অবহেলার জন্য জেলা মেজিস্ট্রেট বরাবরে আপীল বা অভিযোগ দায়ের করার বিষয়ে সুপারিশ করা হয়৷