দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৮নভেম্বর: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হাইকোর্টের আদেশের বিরম্নদ্ধে বেগম খালেদা জিয়ার আপিল করার অনুমতি চেয়ে (লিভ টু আপিল) করা আবেদনের ওপর আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানি অব্যাহত রয়েছে৷শুনানি বুধবার পর্যনত্ম মূলতবি করেছে আপিল বিভাগ৷মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ৫ সদস্যের বেঞ্চ এ আদেশ দেন৷ খালেদা জিয়ার পক্ষে দ্বিতীয় দিনের মতো শুনানি করেন সিনিয়র এডভোকেট জয়নুল আবেদীন৷ অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও দুদকের পক্ষে এডভোকেট খুরশিদ আলম খান এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন৷
আপিল বিভাগের অবকাশকালীন বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা গত ১৪ অক্টোবর এক আদেশে খালেদা জিয়ার আবেদনের উপর আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে ২৭ নভেম্বর শুনানির দিন ধার্য করেছিলেন৷ এরপর দুর্নীতি দমন কমিশন(দুদক) শুনানির দিন এগিয়ে আনতে গত ১৬ অক্টোবর আবেদন করে৷ দুদকের আবেদন গ্রহণ করে শুনানির দিন এগিয়ে এনে আদেশ দেয় আদালত৷
ঢাকার বিশেষ জজ-৩ বাসুদেব রায় গত ১৯ মার্চ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াসহ অন্য আসামিদের বিরম্নদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন৷ এ অভিযোগ গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে খালেদা জিয়া গত ১৩ এপ্রিল হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন করেন৷ হাইকোর্ট ২৩ এপ্রিল আবেদনটি খারিজ করে দেন৷ এ খারিজ আদেশের বিরম্নদ্ধে খালেদা জিয়া আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল আবেদন করেন৷এ মামলায় বিচারিক কার্যক্রম ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত ভবনের পরিবর্তে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে নির্মিত অস্থায়ী আদালত ভবনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে৷ আগামী ২৪ নভেম্বর মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য তারিখ ধার্য করা হয়েছে৷
এতিমখানা মামলায় অভিযোগ আমলে নেওয়ার বিষয়ে খালেদার আবেদন ২০১১ সালের ১৪ ডিসেম্বর হাই কোর্টে খারিজ হয়৷এছাড়া দাতব্য ট্রাস্ট ও এতিমখানা দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠনের বিষয়ে খালেদার আবেদনও ২৩ এপ্রিল হাই কোর্ট খারিজ করে দেয়৷ এরপর তিনি আপিল বিভাগে আসেন৷জিয়া এতিমখানা ট্রাস্টে অনিয়মের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা করে৷এতিমদের সহায়তার জন্য একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয় এ মামলায়৷দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ ২০১০ সালের ৫ অগাস্ট বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া, ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেন৷
মামলার অপর আসামিরা হলেন- মাগুরার সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী এবং প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান৷তারেক রহমান উচ্চ আদালতের জামিনে গত ছয় বছর ধরে বিদেশে অবস্থান করছেন৷ সালিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন আছেন জামিনে৷ বাকি দুজন পলাতক৷২০১১ সালের ৮ অগাস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ চার জনের বিরুদ্ধে জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ৷ তেজগাঁও থানার এ মামলায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাত্ করার অভিযোগ আনা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে৷
২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি খালেদা জিয়াসহ চারজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা৷এ মামলার অপর আসামিরা হলেন- খালেদার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডবি্লউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান৷এদের মধ্যে হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু হতেই পলাতক৷ তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও রয়েছে৷ খালেদাসহ বাকি দুই আসামি জামিনে রয়েছেন৷গত ১৯ মার্চ এ দুটি মামলায় অভিযোগ গঠন করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিচার শুরু করে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত৷