দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৭নভেম্বর: সন্ত্রাস দমনে একসাথে কাজ করবে বাংলাদেশ ও ভারত৷ ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থার (এনআইএ) প্রতিনিধি দলের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে সোমবার এ সিদ্ধান্ত হয়েছে৷স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সিনিয়র সচিব ড. মো. মোজাম্মেল হক খানের সভাপতিত্বে দুপুর ২টায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়৷এর আগে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা এনআইএ প্রতিনিধিদল দুদিনের সফরে সোমবার ১০টা ৩৫ মিনিটে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইটে করে ঢাকা এসে পৌছেন৷পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্ত করছে এ সংস্থা৷ সফরকালে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এনআইএ প্রতিনিধিদলের বৈঠকে পারস্পরিক তথ্যের আদান-প্রদান হতে পারে৷ ভারতীয় হাইকমিশনের মুখপাত্র জানিয়েছেন, ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ) মহাপরিচালক শারদ কুমার প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন৷ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চলমান নিরাপত্তা সহযোগিতার আওতায় প্রতিনিধিদলটি বৈঠকে মিলিত হয়৷ বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র সচিব জানান, বর্ধমান বিস্ফোরণ ঘটনার কোন প্রতিবেদন তদন্ত দল আমাদের দেয়নি৷ তবে বৈঠকে সন্ত্রাস দমনে এক সাথে কাজ করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে৷ এনআইএ প্রতিনিধিদলকে তদন্ত কাজে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কামাল উদ্দিনের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের প্রতিনিধিদল সহযোগিতা করবে বলে সচিব জানান৷
ভারতের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার (এনআইএ) প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড.মো. মোজাম্মেল হক খান জানিয়েছেন,ভারত ও বাংলাদেশে বিচরণকারী দুষ্কৃতিকারীদের নির্মূলে ভারত সরকারকে সহায়তার আশ্বাস দেয়া হয়েছে৷একই সঙ্গে বাংলাদেশে সফররত এনআইএ প্রতিনিধিদলকে সহায়তার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. কামালউদ্দিন আহমেদ চৌধুরীকে প্রধান করে ৬ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে৷সচিব জানান, ভারতের প্রতিনিধি দল সন্দেহ প্রকাশ করে বলেছে, দুদেশে যে দুষ্কৃতকারী রয়েছে তাদের নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন৷ তারা এই দুষ্কৃতকারীদর খুঁজে বের করতে সহায়তা কামনা করেছেন৷সচিব বলেন, তাদের ধারণা একদম অমূলক নয়৷এনআইএ চার সদ্যস্যের এ দল আরো দুদিন বাংলাদেশে অবস্থান করবে৷ এসময় তারা মাঠ পর্যায়ে কোনো তদন্ত করবে কিনা এমন প্রশ্রের জবাবে সচিব বলেন,এ বিষয়ে এখনো আলোচনা চলছে৷ আমরা আমাদের সুবিধা দেখব তাদের চাহিদাও দেখব৷
এনআইএর মহাপরিচালক শারদ কুমারের নেতৃত্বে চার সদস্যের এই প্রতিনিধি দল ঢাকা পৌঁছানোর পর দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসে৷ সংস্থার উপ মহা পরিদর্শক সজীব ফরিদও এ প্রতিনিধি দলে রয়েছেন৷ বৈঠক শেষে বেরিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র সচিব বলেন,ভারতের সন্দেহ, ভারত ও বাংলাদেশে দুই দেশেই দুষ্কৃতীরা রয়েছে৷ এদের খুঁজে বের করা দরকার৷তাদের এই আবেদন উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয় বলে আমরা মনে করি৷গত ২ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে একটি বাড়িতে বিস্ফোরণে দুজন নিহত হওয়ার পর তদন্তে নেমে বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সম্পৃক্ততার কথা জানায় এনআইএ৷
সেই সঙ্গে আন্তঃদেশীয় একটি জঙ্গি নেটওয়ার্কের তথ্য পাওয়ার কথাও জানায় সংস্থাটি৷ তারা দাবি করে, বাংলাদেশের দুই নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে হত্যারও ছক কষছে জঙ্গিরা৷এর পরপরই বাংলাদেশে তদন্ত চালানোর বিষয়টি মাথায় আনে এনআইএ৷ বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনার পর তাদের আসার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়৷সচিব বলেন, দুই দেশই মনে করে, আমাদের ভূখণ্ড দুষ্কৃতীদের ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না৷ আমাদের সঙ্গে স্বল্প সসময়ের বৈঠক হয়েছে৷ তাদের চার সদস্যের প্রতিনিধি দলের সঙ্গ সার্বিক বিষয়ে আলোচনার জন্য আমাদের ছয় সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছ৷ তারাই বিস্তারিত আলোচনা করবেন৷স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত এই কমিটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে জানান সচিব৷
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এই পরিচিতি বৈঠকের পর র্যাব ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করেন এনআইএর প্রতিনিধিরা৷সচিব ও অতিরিক্ত সচিব ছাড়াও পুলিশ মহাপরিদর্শক হাছান মাহমুদ খন্দকার, র্যা বের মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমান, জাতীয় নিরাপত্তা ওেগায়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) মহাপরিচালক সামছুল হক, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) প্রধান আকবর হোসেন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহা পরিচালক আজিজ আহমেদ, পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি)প্রধান জাবেদ পাটোয়ারি, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান মোখলেসুর রহমান, র্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান আবুল কালাম আজাদ, গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম পরিচিতি সভায় অংশ নেন৷
বর্ধমান বিস্ফোরণে জড়িত সন্দেহে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করছে এনআইএ, যার মধ্যে শেখ রহতুল্লাহ সাজিদসহ কয়েকজন বাংলাদেশিও রয়েছে বলে তাদের দাবি৷গত ৮ নভেম্বর সাজিদকে কলকাতায় গ্রেপ্তারের পর বলা হয়, ৪০ বছর বয়সী এই ব্যক্তি জেএমবির কমান্ডার৷ তার বাড়ি বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের ফরাজীকান্দায়৷সাজিদ নামে কাউকে সনাক্ত করা না গেলেও মাসুম নামে এক ব্যক্তিকে চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশের র্যাব৷ ধারণা করা হচ্ছে, এই মাসুমই ভারতে গ্রেপ্তার সাজিদ৷ মাসুমের এক ভাইকে গত ১১ নভেম্বর গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে বোমা বিস্ফোরণের ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে দেশটির জাতীয় তদন্ত সংস্থা এনআইএর চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসেছে৷ তারা ইতিমধ্যে তদন্তকাজ শুরু করেছেন৷ এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলছেন৷
সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইটে এনআইএর দুই সদস্য হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান৷ বাকি দুইজন রোববার রাতেই ঢাকায় পৌঁছান৷ এই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এনআইএর মহাপরিচালক শারদ কুমার৷ সংস্থার উপ মহাপরিদর্শক সজীব ফরিদও প্রতিনিধি দলে রয়েছেন৷পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা৷ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গেও তাদের সাক্ষাতের সম্ভাবনা রয়েছে৷রোববার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের নিয়েও একটি দল গঠন করা হয়েছে৷ এই দুই দল মিলেই কাজ করবে৷
ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সোম ও মঙ্গলবার দুই দিনের সফরে এনআইএর প্রতিনিধিরা দুই দেশের নিরাপত্তার বিষয়ে চলমান সহযোগিতার অংশ হিসাবে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করবেন৷গত ২ অক্টোবর বোমা বিস্ফোরণে শাকিল আহমেদ ও সুবহান মণ্ডল নামে দুজন নিহত এবং আবদুল হাকিম নামে এক ব্যক্তি আহত হন৷ তাঁরা জেএমবির সদস্য বলে প্রাথমিক তদন্তে এনআইএ জানতে পেরেছে৷ ওই ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া সাজিদ নারায়ণগঞ্জের ফরাজীকান্দার বাসিন্দা বলে ভারতীয় গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে৷
ভারতীয় গণমাধ্যমে বলা হয়, এনআইএর প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মুর্শিদাবাদ, মালদহ ও নদীয়া জেলায় ইসলামি রাষ্ট্র গড়ার ছক এঁকেছিল জেএমবি৷ বিস্ফোরণে জড়িত ১২ জনের চারজন বাংলাদেশের৷এরপরে বাংলাদেশেও তদন্ত চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় এনআইএ৷ বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনার পর তাদের আসার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়৷ বর্ধমান বিস্ফোরণে জড়িত সন্দেহে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করছে সংস্থাটি৷ যার মধ্যে শেখ রহতুল্লাহ সাজিদসহ কয়েকজন বাংলাদেশিও রয়েছে বলে তাদের দাবি৷ গত ৮ নভেম্বর জেএমবির কমান্ডার শেখ রহতুমুল্লাহ সাজিদকে কলকাতায় গ্রেফতার করে পুলিশ ৷ তার বাড়ি বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের ফরাজীকান্দায়৷
প্রসঙ্গত,গত ২ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের খাগড়াগড়ে জঙ্গিদের এক গোপন আস্তানায় বোমা বিস্ফোরণে দুই জঙ্গি নিহত হয়৷ পরে এ ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে ভারতীয় গোয়েন্দারা জানতে পারেন ভারতে বসে বাংলাদেশের ভেতরে জঙ্গি তত্পরতার পরিকল্পনা আঁটছে জেএমবির সদস্যরা এবং কিছু ভারতীয় জঙ্গি তাদের এ কাজে সহায়তা করছিল৷প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বাংলাদেশের শীর্ষ রাজনীতিকদেরও হত্যার পরিকল্পনা ছিল এ জঙ্গিদের৷ সেই সঙ্গে আন্তঃদেশীয় একটি জঙ্গি নেটওয়াকের্র তথ্য পাওয়ার কথাও জানায় সংস্থাটি৷ তারা দাবি করে, বাংলাদেশের দুই নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে হত্যার একটি ছকও কষছে জঙ্গিরা৷