টি ইমাম20141114233311

দৈনিকবার্তা-ঢাকা,১৭নভেম্বর: ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের প্রতিষ্ঠিত করা নিয়ে দেওয়া বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম৷ কোনো কোনো গণমাধ্যমে বক্তব্যের খণ্ডিত অংশ প্রচার করা হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি৷ পরস্পর থেকে আলাদা করে ও খণ্ডিতভাবে প্রচারের জন্য বক্তব্যের সারমর্মই বদলে গেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি৷ পুরো বক্তব্য প্রচার করলে ভুল বোঝাবুঝির অবসান হবে বলে মনে করেন এইচ টি ইমাম৷

এইচ টি ইমাম বলেন, তাঁর বক্তব্য ছিল ৪৭ মিনিট৷ পুরো বক্তব্য শুনলে পাঠক ও শ্রোতা বুঝতে পারবে যে খণ্ডিত বক্তব্য প্রচার করে তাঁকে হেয় করার অপচেষ্টা করা হয়েছে৷ পুরো বক্তব্য শুনলে বোঝা যাবে কোন পরিস্থিতিতে তিনি কোন কথা বলেছেন৷ তিনি সামগ্রিকভাবে তাঁর বক্তব্য তুলে ধরার জন্য সাংবাদিকদের প্রতি অনুরোধ জানান৷সোমবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এইচ টি ইমাম এসব কথা বলেন৷ একটি মহল তাঁকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে বলেও দাবি করেন তিনি৷

আর ওই বক্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপন করে একটি মহল সরকারের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেছেন৷এইচ টি ইমাম বলেন, আমার বিনীত অনুরোধ খণ্ডিতভাবে নয়, বস্তুনিষ্ঠভাবে আমার সামগ্রিক বক্তব্যের সারমর্ম শুনে ও বুঝে দেশবাসীর সামনে আপনারা তুলে ধরবেন৷ আমি নিঃসন্দেহ আপনাদের সহযোগিতায় আমার বক্তব্যকে কেন্দ্র করে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা ব্যর্থ হবে৷ সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা বলেন, আমার বক্তব্যের অপব্যাখ্যা করছেন; তারা আর কেউ নয়, তাদের কাজই হচ্ছে শুধুমাত্র অন্যের ত্রুটি খুঁজে বেড়ানো, অন্যায়ভাবে সরকারের সমালোচনা করা৷ ধূম্রজাল সৃষ্টি করে স্বার্থ হাসিল করা অথবা দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার গতিকে স্তিমিত করার অপপ্রয়াস যেন অনেকের কাছে নিত্যনৈমিত্তিক অভ্যাসে পরিণত হয়েছে৷

গত বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক অনুষ্ঠানে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার বক্তব্যের সূত্র ধরে বিএনপি বলে আসছে, ওই বক্তব্যেই সরকারের দলীয়করণ প্রমাণ হয়েছে৷ ওই বক্তব্যের কারণে প্রধানমন্ত্রীও তার ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলে গণমাধ্যমের খবর৷ ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে ওই অনুষ্ঠানে এইচ টি ইমাম বলেন, আমি নিজে অনেক উপজেলায় গিয়েছি৷ সেখানে আমাদের যারা ছিল, তাদের সঙ্গে কথা বলে নির্বাচন করেছি৷ তারা আমাদের পাশে আছে৷ তারা বুক পেতে দিয়েছে৷ জামায়াত-শিবিরের হামলায় পুলিশের ১৯ জন প্রাণ দিয়েছে৷

এর ব্যাখ্যায় সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, স্বাভাবিকভাবেই আমি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে, এই নির্বাচনের পূর্বে বিএনপি-জামায়াত জোটের নাশকতা, গণহত্যা, অসাংবিধানিক পন্থায় ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্র এবং চলমান উন্নয়ন অভিযাত্রাকে ভণ্ডুল করার অপপ্রয়াসের কথাও প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ করি৷

কিন্তু আমার সামগ্রিক বক্তব্য প্রকাশ বা প্রচার না করে মূল ভাবার্থের বিকৃতি ঘটিয়ে দুটি বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে৷প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, প্রশাসনিক কোনো হস্তক্ষেপ না করেই আমরা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান এবং বিএনপি-জামায়াত চক্রের পরিচালিত নাশকতা, হত্যা, সন্ত্রাস,ভোট কেন্দ্র দখল, অগি্নসংযোগ, প্রভৃতি প্রতিরোধে নির্বাচন কমিশনকে এবং বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকার প্রশাসনকে অবহিত করেছি৷আইন ও বিধি মেনে সব কিছু করা হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন৷এইচ টি ইমাম বলেন, আমাদের রিক্রুট করা মানে সকল প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা কর্মচারীকে বুঝিয়েছি, যাদের কোনো দলীয় পরিচয় ছিল না৷

সমালোচনাকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, নির্বাচনী কর্মকর্তা ও স্থানীয় প্রশাসনে সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনরত কর্মকর্তাদের কাছে এ ব্যাপারে সাহায্য চাওয়া বা প্রতিকার চাওয়াকে যারা কারসাজি আখ্যা দিয়ে মুখোশ খুলে পড়েছে বলে উল্লাস প্রকাশ করেছেন তাদের এই ববর্রতার জবাব বাংলাদেশের জনগণই দিয়েছেন, ভবিষ্যতেও দেবেন৷

ওই অনুষ্ঠানে সরকারি চাকরিপ্রার্থী ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর দেখবেন’ বলেও উপদেষ্টা আশ্বাস দেন৷এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, প্রতিযোগিতামূলক যে কোনো পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে গেলে যে কঠোর অধ্যাবসায়ের প্রয়োজন তার ওপর গুরুত্ব দিয়ে ছাত্রলীগের এই আলোচনা সভায় উপস্থিত ছাত্র/ছাত্রীদেরকে লিখিত ও ভাইভা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য প্রয়োজনে আমি তাদের কোচিং করানোর কথাও বলি৷

তিনি গত ছয়টি বিসিএসে নিয়োগ পাওয়াদের উদাহরণ টেনে বলেন, অনুগ্রহ করে একটু খোঁজ নিয়ে দেখুন এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোনোরকম প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টাও হয়েছে কি না? কোনো অনিয়ম হয়েছে কি না? যারা নিয়োগ লাভ করেছেন তাদের মধ্যে কতজন সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন? বিএনপির প্রতিক্রিয়ার জবাবে প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা বলেন, “যারা পানি ঘোলা করে মাছ শিকারের মওকা খুঁজছেন তারা এমনটি করছে৷ তাদেরকে বলব মিথ্যাচার থেকে বিরত থাকুন৷পাশাপাশি গণমাধ্যমে পুরো বক্তব্য এলে ভুল বোঝাবুঝির অবসান হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন৷

আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় উপদেষ্টার ওই বক্তব্য নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে এইচ টি ইমাম পাশে থাকা প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী আব্দুস সোহবান গোলাপকে দেখিয়ে বলেন, এ নিয়ে একেক পত্রিকায় একেক রকম খবর দেখেছি৷ রেগালাপ সেদিন ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন৷ তিনি জানিয়েছেন, সেখানে এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি৷তার বক্তব্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি কথা হয়নি বলেও উল্লেখ করেন এইচ টি ইমাম৷

ছাত্রলীগকে বাড়তি সুযোগ দেওয়া নয় ভালোভাবে পড়াশোনা করার পরামর্শ দিয়েছেন দাবি করে এইচ টি ইমাম বলেন, সরকারি চাকরিতে মেধাবীরা আসবেন এটাই নিয়ম৷ তিনি বলেছেন যে ছাত্রলীগ কর্মীদের পড়াশোনা করতে হবে৷যোগ্য হলেই তারা উত্তীর্ণ হবে৷ অসত্‍ অভিপ্রায় থাকলে তাদের লেখাপড়া করার কথা বলতেন না বলে জানান তিনি৷ তরুণদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যের উদ্দেশ্য শিক্ষামূলক ছিল বলেও মন্তব্য করেন এইচ টি ইমাম৷এইচ টি ইমাম আরও বলেন, সরকার প্রজাতন্ত্রের সব স্তরে সব মেধাবীর নিয়োগ দিতে চায়৷ এর প্রমাণ বিগত পরীক্ষাগুলোর ফলাফলের ক্ষেত্রে পাওয়া যাবে৷ এসব পরীক্ষায় যাঁরা উত্তীর্ণ হয়েছেন, তাঁরা কতজন সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন বা পরীক্ষায় কোনোরকম প্রভাব ফেলা হয়েছে কি না খতিয়ে দেখা যেতে পারে৷

৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচন কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্বপালন করার কথা বলেছেন বলে দাবি করেন এইচ টি ইমাম৷ তিনি বলেন, প্রশাসনের কাজে হস্তক্ষেপ না করে আইন ও নির্বাচনী বিধি মেনে তাঁরা কাজ করেছেন৷ বক্তব্যে সব জায়গায় আমাদের যাঁরা রিক্রুটেড বলতে নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের কথা বলা হয়েছে৷ তাদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় ছিল না৷

বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের প্রতি ইঙ্গিত করে এইচ টি ইমাম বলেন, তারা নির্বাচন বানচাল করতে চেয়েছিল৷ তারা ভোটকেন্দ্র পুড়িয়ে দিয়েছিল, মানুষ হত্যা করেছিল৷ নির্বাচন বানচালের জন্য তাদের অপচেষ্টা ও নাশকতা ঠেকাতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা কাজ করেছেন৷ নির্বাচনী কর্মকর্তা, সাংবাদিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি সবাই দায়িত্ব নিয়ে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন সফল করেছেন৷ তাই তিনি তাঁর বক্তব্যে তাঁদের প্রশংসা করেছেন৷ কিন্তু সেই বক্তব্য নিয়ে একটি মহল রং চড়ানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন এইচ টি ইমাম৷

এইচ টি ইমাম আরও বলেন, নির্বাচন নিয়ে যারা নাশকতা করেছে, ঠেকাতে না পেরে জনরোষের ভয়ে গর্তে ঢুকেছে, তারাই তার বক্তব্যের বিকৃত ব্যাখ্যা দিয়ে মিথ্যার ডুগডুগি বাজাচ্ছে৷ কিন্তু তা ব্যর্থ হতে বাধ্য৷প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত্‍ না হওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে এইচ টি ইমাম বলেন, তিনি অসুস্থ৷ অতিরিক্ত পরিশ্রম করছেন৷ তাঁর বিশ্রাম দরকার৷ রোববার সারা দিনই প্রধানমন্ত্রী বিশ্রামে ছিলেন৷ অল্প সময়ের জন্য সংসদে গিয়েছিলেন৷ তাই তাঁর সঙ্গে দেখা হয়নি৷ সংবাদ সম্মেলনের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানেন বলে জানান এইচ টি ইমাম৷

নীরবতার কথা অস্বীকার করে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের প্রচার উপপরিষদের চেয়ারম্যান এইচ টি ইমাম বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার পরদিনই তিনি বেসরকারি টিভি চ্যানেল এটিএন নিউজের সঙ্গে এক আলোচনায় টেলিফোনের মাধ্যমে যোগ দিয়েছিলেন৷বক্তব্যের কারণে পদত্যাগ করার প্রশ্নই ওঠে না বলে মন্তব্য করেন এইচ টি ইমাম৷

গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের প্রতিষ্ঠিত করা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে দল ও সরকারের ভেতরে-বাইরে প্রচণ্ড সমালোচনার মুখে পডড়েন৷ প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হন বলে দলীয় সূত্রগুলো জানায়৷ গত শুক্রবার আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের বৈঠকে দলের সব জ্যেষ্ঠ নেতা এইচ টি ইমামের ওই বক্তব্যের সমালোচনা করেন৷ সেখানে প্রধানমন্ত্রী তাঁর প্রতি বিরক্তি ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন৷

গত বুধবার ছাত্রলীগের এক সভায় এইচ টি ইমাম ৫ জানুয়ারির নির্বাচন সম্পর্কে বলেন, ‘নির্বাচনের সময় বাংলাদেশ পুলিশ ও প্রশাসনের যে ভূমিকা, নির্বাচনের সময় আমি তো প্রত্যেকটি উপজেলায় কথা বলেছি, সব জায়গায় আমাদের যাঁরা রিক্রুটেড, তাঁদের সঙ্গে কথা বলে, তাঁদের দিয়ে মোবাইল কোর্ট করিয়ে আমরা নির্বাচন করেছি৷ তাঁরা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, বুক পেতে দিয়েছেন৷

গণমাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর এই মনোভাব প্রকাশের পরদিন গত শনিবার হঠাত্‍ করেই এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আওয়ামী লীগের প্রচার উপপরিষদের বৈঠক ডাকেন এইচ টি ইমাম৷ তিনি প্রচার উপপরিষদের চেয়ারম্যান৷ বৈঠকটি রোববার বেলা ১১টায় হওয়ার কথা থাকলেও তিনি উপস্থিত হননি৷