দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৭নভেম্বর: নিজের রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের সঙ্গে কথা হয়নি বলে মন্ত্রিসভায় জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই৷সোমবার কয়েকজন মন্ত্রী সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ইমামের সামপ্রতিক মন্তব্যের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি এমন কথা বলেন৷
এদিকে,প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্য৷মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় তারা এ দাবি তুলেন৷ যদিও প্রধানমন্ত্রী সরাসরি এর কোন জবাব না দিয়ে মন্ত্রীদের উদ্দেশে বলেছেন, সরকার বিব্রত হয় এ ধরনের কথা বলা থেকে আপনারা বিরত থাকবেন৷ এসময় বিবিসিকে দেয়া এইচটি ইমামের বক্তব্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিতে আনলে তিনি বলেন, তার সঙ্গে এ নিয়ে আমার কোন কথা হয়নি৷ বৈঠক সূত্র জানায়, অনির্ধারিত আলোচনায় শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ আরও কয়েকজন মন্ত্রী এইচটি ইমামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি তুলেন৷
গত বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের অনুষ্ঠানে এইচটি ইমাম ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন ও বিসিএস পরীক্ষা নিয়ে কথা বলেন৷ তার বক্তব্যে নির্বাচন নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে গেছে বলে দাবি করেছে বিএনপি৷ একই সঙ্গে বিসিএস পরীক্ষায় ছাত্রলীগকে বিশেষ সুবিধা দেয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে নানা মহলে৷তার এ বক্তব্যে ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের নেতারা৷ তারা মনে করছেন, এইচটি ইমামের বক্তব্য দল ও সরকারকে বিব্রত করেছে৷ এমন অবস্থায় আজ সকালে সংবাদ সম্মেলন করে বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম৷ছাত্রলীগের সভায় গত সংসদ নির্বাচন নিয়ে এইচটি ইমামের বক্তব্য প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, এখানে ক্রেডিট নেয়ার কী আছে৷ ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে পুলিশ কাজ করেছে৷ শুধুই কী সেখানে পুলিশ ছিল? জনগণ ইলেকশন করেছে৷ তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে নির্বাচন হতে পারত না৷এসময় প্রধানমন্ত্রী দুঃখ করে বলেন, আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি ভালো কাজ করার জন্য৷ যখন একটি ভালো কাজ নিয়ে আগাই আপনারা সে সম্পর্কে বলবেন৷ সেটা না করে নতুন কিছু বলে বিতর্ক সৃষ্টি করা ঠিক নয়৷ যার যার দায়িত্ব নিয়ে কথা বলতে হবে৷
ইমামের এই বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা হয়৷ তাঁর এই বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী ও সরকারি দলের নেতারা নাখোশ হন৷ বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে তিনি রোববার প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাত্ পাননি৷ তিনি নানাভাবে যোগাযোগ করে গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাত্ লাভেরও চেষ্টা চালান৷ তিনি বলেন, সাক্ষাতের সুযোগ না পেলেও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হয়েছে৷ তবে কী ধরনের যোগাযোগ, তা তিনি খোলাসা করেননি৷ প্রসঙ্গত, গত বুধবার ছাত্রলীগের সভায় এইচ টি ইমাম গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে বলেন, নির্বাচনের সময় পুলিশ ও প্রশাসনের যে ভূমিকা, নির্বাচনের সময় আমি প্রত্যেকটি উপজেলায় কথা বলেছি, সব জায়গায় আমাদের যাঁরা রিক্রুটেড, তাদের সঙ্গে কথা বলে তাদের দিয়ে মোবাইল কোর্ট করিয়ে আমরা নির্বাচন করেছি৷ তারা আমাদের পাশে দাড়িয়েছেন, বুক পেতে দিয়েছেন৷
এই বক্তব্য দিয়ে সমালোচনা শুরু হওয়ার পর রোববার এইচটি ইমাম বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে বলেন, ছাত্রলীগের সভায় বক্তব্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার কথা হয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রীর উপদেশ অনুযায়ী সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বিষয়টি খোলাসা করতে বক্তব্য দেবেন৷এদিকে নির্ধারিত সংবাদ সম্মেলনে এইচটি ইমাম দাবি করেন, গণমাধ্যম তার বক্তব্য খণ্ডিত ও বিকৃতভাবে উপস্থাপন করেছে৷তবে প্রধনমন্ত্রী মন্ত্রিসভার বৈঠকে বললেন, এই সংবাদ সম্মেলন করার আগে এইচটি ইমামের সঙ্গে তার কোনো কথাও হয়নি, দেখাও হয়নি৷সার্বিক বিষয় নিয়ে এইচ টি ইমাম সোমাবর ধানমন্ডিতে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন৷ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত্ না হওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি অসুস্থ৷ অতিরিক্ত পরিশ্রম করছেন৷ তাঁর বিশ্রাম দরকার৷ রোববার সারা দিনই প্রধানমন্ত্রী বিশ্রামে ছিলেন৷ অল্প সময়ের জন্য সংসদে গিয়েছিলেন৷ তাই তাঁর সঙ্গে দেখা হয়নি সংবাদ সম্মেলনের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানেন বলে তিনি জানান৷
মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এইচ টি ইমামের যোগাযোগের বিষয়ে কয়েকজন মন্ত্রী জানতে চান৷ তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন,এ বিষয়ে কোনো কথা হয়নি৷এ ধরনের কোনোসম্মতিও দেইনি৷মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশের শ্রমিকদের মালয়েশিয়ায় কর্মসংস্থানের বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সংশোধনের প্রটোকল স্বাক্ষরের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা৷ বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশের শ্রমিকেরা মালয়েশিয়ায় সব জায়গায় কাজ করার সুযোগ পান না৷ এই প্রটোকল সই হলে বাংলাদেশের শ্রমিকেরা সারাওয়াক প্রদেশে কাজ করার সুযোগ পাবেন৷ বৈঠকে মালয়েশিয়ার সঙ্গে ভিসা বিষয়ে আরেকটি চুক্তি অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা৷ ওই চুক্তি অনুযায়ী, দুই দেশের সরকারি ও কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীরা ভিসা ছাড়াই উভয় দেশে আসা-যাওয়া করতে পারবেন৷ ৯০ দিন পর্যন্ত ভিসার মেয়াদ থাকবে৷ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের শ্রমিক অধিকার নিয়ে বিদেশিদের উপদেশবাণীতে এক প্রকার উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, শ্রমিক অধিকার নিয়ে আমেরিকানরা বিভিন্ন সময় উপদেশ দেন৷ আপনরাও তাদের দেশ পরিদর্শন করুন এবং দেখুন তারা শ্রমিকদের কতটুকু অধিকার দিচ্ছে৷মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে ১২টি দেশের এ ধরনের চুক্তি রয়েছে৷ আরও ১৮টি দেশের সঙ্গে আলোচনা চলছে৷
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের বলেন,কর্মী প্রেরণের বিষয়ে মালয়েশিয়ার সঙ্গে জি-টু-জি যে চুক্তি রয়েছে তার সংশোধন চুক্তি স্বাক্ষর হবে৷ মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণে বিদ্যমান যে চুক্তি তা মূল ভূখণ্ডের জন্য প্রযোজ্য, এ প্রটোকল স্বাক্ষর হলে সারওয়াক প্রদেশে কাজ করারও সুযোগ পাবে৷তিনি জানান, আগের যে চুক্তি রয়েছে তা একই থাকবে, শুধু সারওয়াক প্রদেশ এর সঙ্গে যুক্ত হবে৷এছাড়া মালয়েশিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের ভিসা অব্যাহতি চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তাবেও অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা৷ মোশাররাফ হোসাইন জানান, এ চুক্তি হলে দুই দেশের কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীরা ভিসা অব্যাহতি পাবেন৷ ৯০ দিনের জন্য তারা এ সুবিধা পাবেন এবং ট্রানজিট করতে পারবেন৷ এর চেয়ে বেশি থাকতে চাইলে নিজ নিজ দেশের নিয়ম অনুযায়ী তারা নবায়ন করতে পারবেন৷কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীদের পরিবার ও ২১ বছরের নিচে অবিবাহিত সন্ত্রানরাও এ সুবিধা পাবেন বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব৷বর্তমানে বাংলাদেশের সঙ্গে ১২টি দেশের ভিসা অব্যাহতি চুক্তি রয়েছে এবং আরও ১৮টি দেশের সঙ্গে এ চুক্তির বিষয়ে আলোচনা চলছে৷
যেসব দেশের সঙ্গে এ চুক্তি রয়েছে সেসব দেশে ভিসা ছাড়াই নির্দিষ্ট পেশার লোকজন যেতে পারেন৷ এ ছাড়া সভায় বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন বোর্ড আইন-২০১৪-এর খসড়া নীতিগতভাবে অনুমোদন করা হয়েছে৷ পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় প্রস্তাব দিয়েছিল, এই বোর্ড হবে বিধিবদ্ধ স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা৷ কিন্তু মন্ত্রিসভা এই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে বলেছে, এই বোর্ড সংযুক্ত অধিদপ্তর হিসেবে কাজ করবে৷বৈঠকে সার্কভুক্ত দেশগুলোর এক দেশের যানবাহন যেন আরেক দেশে যেতে পারে, সে-সংক্রান্ত একটি চুক্তির খসড়া অনুমোদন করা হয়েছে৷ মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, আসন্ন সার্ক সম্মেলনে সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে এ চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার কথা রয়েছে৷ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সার্কভুক্ত এক দেশের যানবাহন আরেক দেশে গেলে যোগাযোগ বাড়বে৷ এতে এসব দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও আর্থ-সামজিক উন্নয়ন হবে৷সদ্য প্রয়াত শিক্ষাবিদ জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী ও স্মৃতিসৌধের স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেনের মৃত্যুতে মন্ত্রিসভায়ং শোক প্রস্তাব নেওয়া৷এ ছাড়া জিম্বাবুয়েকে ৩-০ ব্যবধানে হারানোয় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন জানায় মন্ত্রিসভা৷