bd3

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৬ নবেম্বর: সাগরিকার ফেনীল ঢেউয়ে প্রতিধ্বনি উঠেছিল বাংলাওয়াশের। একই সঙ্গে ছিল ইতিহাসের হাতছানিও।

অবশ্য ক্রিকেটাররা মুখে স্পষ্ট করে কেউ তোপ দাগেননি। কিন্তু সাকিব আল হাসান, মুমিনুল হক, তামিম ইকবাল, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, তাইজুল ইসলাম ও জুবায়ের হোসেনদেরর শরীরী ভাষা স্পষ্ট করে জানান দিয়েছে বাংলাদেশের একমাত্র লক্ষ্যের কথা, ভাবী পরিণতির কথা।

হ্যাঁ, মিথ্যা হয়ে যায়নি কোটি মনের অপেক্ষার সেই ক্ষণগননা। ঢাকা ও খুলনার পর চট্টগ্রাম টেস্টেও দাপুটে জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। এদিন চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সফরকারী জিম্বাবুয়েকে ১৮৬ রানে হারিয়েছে মুশফিক বাহিনী। সেই সাথে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজে প্রতিপক্ষকে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ কিংবা বাংলাওয়াশের লজ্জা উপহার দিল স্বাগতিকরা। এই প্রথমবারের মত কোন টেস্ট সিরিজে প্রতিপক্ষকে ৩-০ ব্যবধানে পরাজিত করে ইতিহাস তৈরী করলো মুশফিকুর রহিম অ্যান্ড কোং।

রোববার চট্টগ্রাম টেস্টের শেষ দিনের রোমাঞ্চে সম্ভাব্য ফল হিসেবে ‘তিন দুয়ারি’ ছিল বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ের মধ্যকার সিরিজের তৃতীয় এই ম্যাচটি। জয়ের পাল্লাটা মুশফিকদের দিকে্ে ঝুঁকে ছিল বেশি। কিন্তু ঔপনিস্যাকিরে কলম কিংবা ক্রিকেটের চরম নাটকীয়তার মোড়কে তা জিম্বাবুয়ের দিকেও ‘পল্টি’ নিতে পারত! অবশ্য তার জন্য টেস্ট ক্রিকেটের সর্বোচ্চ রানের লক্ষ্য তাড়া করে নতুন একটা বিশ্বরেকর্ড উপহার দিতে হতো ব্রেন্ডন টেলর বাহিনীকে। তা শেষ পর্যন্ত করে দেখাতে পারেননি সিকান্দার রাজা-হ্যামিল্টন মাসাকাদজারা। কোনো রূপকথারও জন্ম হয়নি।

বাংলাদেশের ছুঁড়ে দেওয়া ৪৪৮ রানের লক্ষ্য তাড়ায় জিম্বাবুয়ে টেস্টের চতুর্থ দিন শেষে অর্থাৎ, শনিবার দিন শেষে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ১৯ ওভার ব্যাট করে ১ উইকেট হারিয়ে ৭১ রান সংগ্রহ করে। তখন জয়ের জন্য অবশিষ্ট ৯ উইকেটে টেস্টের শেষ দিনে ৩৭৮ রান দরকার ছিল জিম্বাবুয়ের। পক্ষান্তরে বাংলাদেশের দরকার নয়টি উইকেট। এরপরও রোববার টেস্টের পঞ্চম ও শেষ দিনে আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান হ্যামিল্টন মাসাকাদজা (২৬) ও সিকান্দার রাজা (৪৬) দুলঙ্ঘ্য হিমালয় পাড়ি দেয়ার পণ করে উইকেটে নামেন।

অবশ্য তাদের পণ শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি। নতুন দিনের শুরুতেই ফিরে যান অভিজ্ঞ মাসাকাদজা (৩৮)। ২৬.৩ ওভারে দলীয় ৯৭ রানে শুভাগত হোমের শিকার হন তিনি। ৩১তম ওভারে গিয়ে হুমকি হয়ে ওঠা সিকান্দার রাজাও ‘পার্টটাইম’ বোলার হোমেরই শিকার। তারপরই পর্দায় আর্বিভাব তরুণ স্পিনার জোবায়ের হোসেনের। ১৪ রানের ব্যবধানে তার শিকার হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন ব্রেন্ডন টেলর (২৪) ও এলটন চিগম্বুরা (৯৫)। ষষ্ঠ উইকেটে গিয়ে দৃশ্যপটের পরিবর্তন আসে।

জিম্বাবুয়ের শেষ স্বীকৃত জুটি হিসেবে বাংলাদেশের জয়ের পথে বাধা সৃষ্টি করেন রেজিস চাকাভা ও ক্রেইগ আরভিন। এই জুটি ভাঙে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের হাতে। তখন স্বস্তির সুবাতাস গোটা জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। কিন্তু অস্টম উইকেট জুটিতে গিয়ে পানিয়াঙ্গারাকে নিয়ে বাংলাদেশকে ভালোই জ্বালায় চাকাভা। শেষে পেসার রুবেল হোসেনে পরিত্রাণ। পরে টাইগারদের জয়ের জন্য বাকি আনুষ্ঠানিকতা টুকু সারেন শফিউল ইসলাম।

দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে অম্লান হয়ে থাকতে জিম্বাবুয়ের লেজকে কেটে দেন বাংলাদেশের ক্ষীণদেহী এই পেসার। আর নাম লেখান দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অভিজাত এক ক্লাবে। জিম্বাবুয়ে চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ২৬২ রান করে অলআউট হয়। ৮৫ ওভার ব্যাট করে তারা। বাংলাদেশের পক্ষে দুটি করে উইকেট নেন রুবেল হোসেন, শফিউল ইসলাম, জুবায়ের হোসেন ও শুভাগত হোম।