দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৬ নবেম্বর: পে কশিনের সুপারিশ অনুযায়ী নিম্ন আদালতের বিচারকদের অবসরের বয়সসীমা বৃদ্ধি না করার ফলে বিচারক সঙ্কটের আশঙ্কায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আপিল বিভাগ৷প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ তার উদ্বেগের কথা জানান৷ এ বিষয়ে দায়ের করা আলোচিত বিচারক মাসদার হোসেনের মামলার শুনানিকালে অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলমকে উদ্দেশ করে উদ্বেগ প্রকাশ করেন আদালত৷
আদালত বলেন, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নিম্ন আদালতের বিচারকদের অবসরের বয়সসীমা বৃদ্ধি না করা হলে ৪৮ জন জেলা ও দায়রা জজ অবসরে চলে যাবেন৷ এর ফলে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ও দক্ষ জেলা জজের এই শূন্য পদ পূরণ করা কঠিন হবে৷জুডিসিয়াল সার্ভিস পে কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এর আগে ২০১২ সালের ১ অক্টোবর নিম্ন আদালতের বিচারকদের অবসরের বয়সসীমা ৫৭ থেকে ৬২ বছরে উন্নীত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আদেশ দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ৷আদালতের ওই আদেশ বাস্তবায়নের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, বিচারকদের বয়সসীমা বৃদ্ধির বিষয়ে প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী বিভাগের প্রধানের সঙ্গে তার আলোচনা হয়েছে৷ এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি৷পরে আদালত এ মামলার শুনানির জন্য ১৪ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেন আদালত৷
এ মামলার বিষয়ে বাদীপক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আমির উল ইসলাম বলেন, ‘জুডিসিয়াল সার্ভিস পে কমিশনের সুপারিশের প্রেক্ষিতে সরকার বিচারকদের অবসরের বয়সসীমা বৃদ্ধির কোনো পদক্ষেপ নেয়নি৷ তবে সকল সরকারি কর্মকর্তাদের অবসরের বয়সসীমা ৫৯ বছর করায় বিচারকদের অবসরের বয়সসীমাও বর্তমানে ৫৯ হয়েছে৷ কিন্তু বিচারকদের বয়সসীমা ৬২ করার ক্ষেত্রে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি৷ ‘তিনি আরো বলেন, নিম্ন আদালতের বিচারকদের অবসরের বয়সসীমা বৃদ্ধির বিষয়টি আগামী শুনানির পূর্বেই বাস্তবায়ন করার পদক্ষেপ নিতে হবে৷ অন্যথায় আমরা এই ৪৮ জন বিজ্ঞ বিচারকদের হারাবো৷ এতে বিচার বিভাগ ক্ষতির মুখে পড়বে৷এতো অল্প সময়ে বাস্তবায়ন করার সম্ভব কি না জানতে চাইলে আমীর-উল ইসলাম বলেন, এখনো যে সময় আছে তাতেও অবসরের বয়স বৃদ্ধি করে এ সকল বিচারকদের ধরে রাখা সম্ভব৷’
আদালত শুনানি শেষে আগামী ১৪ ডিসেম্বর মাসদার হোসেন মামলার পরবর্তী শুনানির দিন রেখেছে৷আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন মাহবুবে আলম৷ বাদীপক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার এম আমীর উল ইসলাম৷শুনানিতে ব্যারিস্টার আমীর বলেন, আগামী সপ্তাহে বা তার পরের সপ্তাহের মধ্যে এই নির্দেশনা কার্যকর না করা গেলে বিচার বিভাগের অভিজ্ঞতার শূন্যতা সৃষ্টি হবে৷ এই সময়ের মধ্যে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বিচারক ৪৮জন জেলা জজ অবসরে যাবেন৷ তারা বিদায় নিলে মামলার মান ও নিষ্পত্তির হারে এর প্রভাব পড়বে৷বর্তমানে জেলা জজ ও সমপদমর্যাদার ১৭৯ জন বিচারক রয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নবীন বলে আদালতকে জানান ব্যারিস্টার আমীর৷
তিনি বলেন, ২০১২ সালের ১ অক্টোবর আপিল বিভাগ নিম্ন আদালতের বিচারকদের বয়স ৬২ বছর করার নির্দেশনা দেন৷প্রধান বিচারপতি নিম্ন আদালতের বিচারকদের বয়স বাড়াতে আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কে অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে জানতে চান৷জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বয়স বৃদ্ধির বিষয়ে রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহীও একমত৷ তবে এর প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত কথা বলে এটা জানাতে হবে৷
আদালত এই প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার তাগিদ দিলে অ্যাটর্নি জেনারেল আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় চান৷ এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ্য করে পেছন থেকে তার এক সহকারী বলে উঠেন, “এই সময়ের মধ্যে পারবেন?”কথাটি বিচারকরাও পেলে বেশ কিছুক্ষণ এটা নিয়েই কথা হয়৷এ সময় এক বিচারক অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “হিন্দি সিরিয়াল দেখেছেন? হিন্দি সিরিয়াল শেষ হতে পাঁচ বছর লেগে যায়৷ আমাদের এটাতো ১৫ বছরেও শেষ হলো না৷অন্য এক বিচারক বলেন, না পারলে ১৬ ডিসেম্বর (ওইদিন আদালত বন্ধ থাকে) দেই৷ প্রয়োজনে ২০১৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেই৷
ব্যারিস্টার আমীরের বক্তব্যের সূত্র ধরে প্রধান বিচারপতি বলেন, স্বল্প সময়ের মধ্যে ৪৮ জন বিচারক অবসরে গেলেতো সত্যিই একটা সমস্যা সৃষ্টি হবে৷ বিশেষ করে, সিভিল মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে আমরা অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এত বিচারক কোথায় পাবো?শুনানির এক পর্যায়ে আদালত আগামী ১৪ ডিসেম্বর পরবর্তী শুনানির দিন রেখে ওই দিনের মধ্যে অগ্রগতি জানাতে বলেন৷পরে অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতকে বলেন, আমরা বেতন-ভাতা সংক্রান্ত সুপারিশ বাস্তবায়ন করেছি৷ খাজাঞ্চিখানা থেকে টাকা আনা সবচেয়ে কঠিন৷ তাই অন্য সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করতে পারবো বলে আশা করি৷তিনি বলেন, এই বয়স বাড়ালে অন্য সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে কী প্রভাব পড়ে সেটা অনেক সময় সরকারকে দেখতে হয়৷ যদিও বিচারকদের সঙ্গে অন্য বিভাগের কর্মকর্তাদের কোনো তুলনা করা ঠিক না৷
“এই যেমন, সুপ্রিম কোর্টের বিচারকরা ৬৭ বছর বয়সে অবসরে যান৷ এটাতো আর কোথাও নেই৷ এইভাবে নিম্ন আদালতের বিচারকদেরকে আলাদাভাবেই দেখতে হবে৷২০০৯ সালের জুনে জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন নিম্ন আদালতের বিচারকদের বয়স ৬২ বছর করতে সুপারিশ করে৷ সেই সময় অবসরের বয়স ছিলো ৫৭ বছর৷২০১১ সালে প্রশাসনের অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে এই শ্রেণির বিচারকদের বয়সও বাড়িয়ে ৫৯ বছর করা হয়৷ মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষেত্রে এই সীমা ৬০ বছর৷বিখ্যাত মাসদার হোসেন মামলাতেই বিচার বিভাগ আলাদা হয়৷ সর্বোচ্চ আদালতে এই মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হলে গেলেও গুরুত্ব বিবেচনায় এটিকে চলমান (ম্যান্ডামাস) রাখা হয়৷