দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৬ নবেম্বর: বর্ধমান বিস্ফোরণে বাংলাদেশে নাগরিক জড়িত বলে ভারতীয় গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হচ্ছে৷ তবে বাংলাদেশ এখনো স্বীকার করেনি যে এরা বাংলাদেশের নাগরিক৷ ভারতও এ বিষয়ে বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো তথ্য দেয়নি৷ এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বর্ধমান বিস্ফোরণে বাংলাদেশের নাগরিক জড়িত থাকার ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন নই৷ তবে বাংলাদেশ সরকার জঙ্গিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় না এবং কেউ জঙ্গি দমনে সহায়তা চাইলে তাদের সহায়তা দেয়া হয়৷
রোববার দুপুরে সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাব মন্ত্রী এ কথা বলেন৷মন্ত্রী জানান, সোমবার ভারতের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএর চার সদস্যের প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসছে৷ তারা যে ইনফরমেশন দেবে আমরা সে অনুযায়ী কাজ করব৷ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শহিদুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, এ হত্যাকাণ্ড রাজনৈতিক কিনা, কোনো জঙ্গিগোষ্ঠী এর সঙ্গে জড়িত কিনা সেটা এখনো স্পষ্ট নয়৷ ঘটনা উদঘাটনে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে৷
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. এ কে এম শফিউল ইসলাম জঙ্গিদের আক্রমণে নাকি রাজনৈতিক কারণে খুন হয়েছেন তা খতিয়ে দেখা হবে৷ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ কে এম শফিউল ইসলাম হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনে মাঠে নামছে গোয়েন্দা পুলিশ৷ জঙ্গি হামলা ও রাজনৈতিক বিষয়সহ সম্ভাব্য কারণগুলো মাথায় রেখে তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷ প্রতিমন্ত্রী বলেন, সম্ভাব্য সব কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷ দ্রুত সময়ের ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটন করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে৷
তিনি বলেন, আমরা বিস্মিত হয়েছি ও হতবাগ হয়েছি৷ আমরা আশা করছি যে, যে কোনো মূল্যে এ হত্যাকাণ্ডের আসল আসামিকে ধরতে পারবো৷ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরা কাজ করছে৷ বিভিন্ন বিষয় তাদের তালিকাতে রয়েছে তাই জোড় গলায় বলতে পারি খুব দ্রুতই আমরা আসামিকে ধরতে পারবো৷
এদিকে শফিউল ইসলাম হত্যার দায় স্বীকার করেছে আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশ-২’ নামের একটি জঙ্গি সংগঠন৷ হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হওয়ার মাত্র কয়েক ঘন্টা পরেই সংগঠনটি এ হত্যার দায় স্বীকার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছে৷ তবে এর আগে এ সংগঠনের কোনো নাম শোনা যায়নি৷
ভারত বাংলাদেশের জঙ্গি তত্পরতা সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, সোমবার ভারত থেকে একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসছে৷ তারা বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের সঙ্গে কাজ করবে৷ উভয় দেশের জঙ্গিপ্র্রতিরোধসহ সব বিষয়ে তথ্য সংগ্রহসহ জঙ্গি নির্মূল করা হবে৷
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল নেতারা জঙ্গি সহায়তা করার বিষয়ে বাংলাদেশে কোনো তথ্য নেই৷ তবে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার জঙ্গি দমনে বাংলাদেশকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছে৷
পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান বিস্ফোরণে বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন জামাআ’তুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ ( জেএমবি) এর যোগসূত্র নিয়ে আরো তথ্য জোগাড় করতে সোমবার বাংলাদেশ আসছে দেশটির তদন্ত সংস্থা ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির (এনআইএ) একটি দল৷ আইজি সঞ্জীব কুমার সিংয়ের নেতৃত্বে তদন্তকারী দলটি ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় যাবে৷ প্রাথমিকভাবে রাজশাহী ও সাতক্ষীরার মতো জঙ্গি অধ্যূষিত এলাকাগুলোতে তদন্ত চালাবে এনআইএ৷ দলের অন্য সদস্যদের মধ্যে থাকছেন দুই ডিআইজি অনুরাগ টাংখা ও সাজিদ ফারিদ সাপো৷ সফরকালে তারা বাংলাদেশে আটক কয়েকজন জঙ্গিকে জেরা করার পাশাপাশি কয়েকটি ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলবেন৷ এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংকও রয়েছে৷
ঢাকা ইতিমধ্যে এ ব্যাপারে দিলি্লকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে৷ গত ১০ নভেম্বর বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, এ বিষয়ে দিলি্লর লিখিত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ৷ এনআইএ সূত্রের বরাত দিয়ে একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্ধমান বিস্ফোরণে জেএমবির যোগসূত্রের বিষয়ে যাবতীয় তথ্য তুলে দেয়া হবে বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের হাতে৷ কীভাবে ভারতের মাটি ব্যবহার করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়াসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের হত্যা করার চক্রান্ত করেছিল জঙ্গিরা, সে বিষয়েও জানানো হবে ঢাকাকে৷
সমপ্রতি র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও গোয়েন্দা বিভাগ জেএমবি ও আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ জঙ্গিকে আটক করেছে৷ এনআইএর দাবি, এই জঙ্গিদের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গিদের সম্পর্ক রয়েছে৷ তাদেরকেও জেরা করবে এনআইএ৷ পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গিদের অর্থ জোগানের বিষয়েও বাংলাদেশের কয়েকটি ব্যাংকের সঙ্গে কথা কথা বলবে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা৷ এর মধ্যে ইসলামি ব্যাংকও রয়েছে৷
গত ১১ নভেম্বর দৈনিক বর্তমানের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছিল, ওই দিনই এনআইএ এর চার-পাঁচ সদস্যের একটি দিল দিলি্ল থেকে ঢাকা পৌঁছাবে৷ আর ওইদিনই নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার ফরাজীকান্দা থেকে মনোয়ার হোসেন মনা নামে এক ওয়েল্ডিং মিস্ত্রিকে আটক করে র্যাব৷ পরে তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়৷ তিনি বর্ধমান বিস্ফোরণের অন্যতম হোতা সাজিদের ভাই বলে দাবি করে আসছেন ভারতীয় গোয়েন্দারা৷