দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৫নভেম্বর: বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটকে বিষফোঁড়া অভিহিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৷ তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের নিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় এসেছে৷ যুদ্ধাপরাধী হিসেবে যাদের সাজা হয়েছে বিএনপি নেত্রীর জনসভায় তাদের মুক্তি দাবি করা হয় এর জবাব তিনি কি দেবেন৷শনিবার বিকেলে যুবলীগের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত এক সমাবেশে এ কথা বলেন৷
বিকেল ৩টা সোহরাওয়ার্দী ময়দানে যুবলীগের মিলন মেলা শুরু হয়৷ জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে সমাবেশের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী৷তবে যুবলীগ সভাপতির ঘোষণা অনুযায়ী ৫ লাখ লোক জমায়েতের টার্গেট পূরণ হয়নি৷ উদ্যানের ভেতরে জনসভাস্থল ছিল ফাকা৷তবে কিছু লোক ছিল রমনা কালী মন্দির ও টিএসসি এলাকায়৷ সমাবেশ শুরুর আগেই অনেককে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছেড়ে চলে যেতে দেখা গেছে৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা স্বাধীনতায় বিশ্বাসী ছিলেন না, সেই রাজাকার আলবদরদের জিয়া রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন৷ আর খালেদা জিয়া তাদের মন্ত্রী বানিয়েছেন৷ তারা এখনো ২০ দলেই আছে৷ খালেদা জিয়ার সঙ্গে রাজনীতি করছে৷ এই ২০ দলে যারা আছে তারা রাজনীতির বিষফোড়া বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী৷
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, খুনি মোশতাক ছিল মোনাফেক, আর জিয়া ছিল তার দোসর৷ তারা ৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে শুধু হত্যাই করেনি, বাংলাদেশের স্বাধীনতার চেতনাকে তারা নস্যাত্ করতে চেয়েছে৷শেখ হাসিনা বলেন, ৭৫-এর ১৫ আগস্ট খুনি মোশতাক-জিয়া জাতির পিতাকে শুধু হত্যাই করেনি, বাংলাদেশের স্বাধীনতার চেতনাকে তারা নস্যাত্ করতে চেয়েছে৷ এটাই হচ্ছে সবচেয়ে দুর্ভাগ্য৷ প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই মোশতাক আমাদের সাথেই ছিল৷ বঙ্গবন্ধুর সাথেই ছিল, এতে সন্দেহ নেই৷ খুনি মোশতাক ছিল মোনাফেক, জিয়া ছিল তার দোসর৷
প্রধানমন্ত্রী বলেন,১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে যারা হত্যা করেছে, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে যাঁরা মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে বাঙালি জাতির বিজয় এনে দিয়েছিল,সেই জাতীয় চার নেতাকে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে তারাই নির্মমভাবে হত্যা করেছিল৷ যারা বঙ্গবন্ধুকে ১৫ আগস্ট হত্যা করেছিল, সেই খুনিদের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়েছিল খুনি মোশতাক৷ তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়াউর রহমানকে ওই খুনি মোশতাক সামরিক বাহিনীর প্রধান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল৷ যদি মোশতাকের সাথে জিয়াউর রহমান না-ই থাকবে ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড ঘটাতে, তাহলে কেন জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান করবে৷ বাংলাদেশে ৭৫-এর পর থেকে হত্যা ও কু্যর রাজনীতি শুরু হয়৷
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জিয়া মুক্তিযুদ্ধবিরোধী রাজাকার, আলবদরদের প্রতিষ্ঠিত করেছিল৷ এমনকি বর্তমানে ২০ দলে যারা আছে, তাঁরা বাংলাদেশের জন্য বিষফোঁয়ার মতো৷ এই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার একে একে বাংলার মাটিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী৷
যুবলীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ ও জাতির উন্নয়নে আত্মত্যাগে সচেষ্ট থাকবে, এমন কোনো কর্মকাণ্ড করবে না, যাতে বদনাম হয়৷ আন্দোলনের নামে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে বিএনপি যে নাশকতা চালিয়েছে তার জন্য খালেদা জিয়াকে জবাব দিতে হবে বলেও জানান শেখ হাসিনা৷২০ দলীয় জোটকে বিষফোঁড়া অভিহিত করে শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের নিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় এসেছে৷ যুদ্ধাপরাধী হিসেবে যাদের সাজা হয়েছে বিএনপি নেত্রীর জনসভায় তাদের মুক্তি দাবি করা হয় এর জবাব তিনি কী দেবেন?
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বিচার চলছে, এ বিচার চলবে৷ দেশি ও বিদেশি যতো চাপই আসুক না কেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের রায় একে একে কার্যকর করা হবে৷ দেশের উন্নয়নে এবং যে কোনো পরিস্থিতিতে যুবলীগকে প্রস্তুত থাকার পাশাপাশি নিজেদের কর্মকাণ্ডের কারণে দলের যেনো কোনো দুর্নাম না হয় সে ব্যাপারে তাদেরকে সতর্ক থাকতে বলেন শেখ হাসিনা৷
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা শমসের মোবিন চৌধুরির কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতাকে যারা হত্যা করেছে, পঁচাত্তরের পর জিয়াউর রহমান সেই হত্যকারীদের ভোটের এবং রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন৷ মোবিনের সহায়তায় খুনিরা বিদেশে পালিয়ে গিয়েছিল৷ সূর্যসেন হলের ছাত্রলীগের ৭ খুনের মূল আসামি শফিউল আলম প্রধান এখন খালেদা জিয়ার সঙ্গে রাজনীতি করে৷ এতে বোঝা যায় ২০ দলের নেতা এদেশের জন্য বিষ ফোঁড়া৷
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান শুধু খুনিদের আশ্রয় ও তাদের বিভিন্ন দেশে পুনর্বাসনই করেননি তার স্ত্রী খালেদা জিয়াও স্বামীর পথ অনুসরণ করে যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানিয়েছেন৷ তার সমাবেশে মানবতাবিরোধী অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারদের মুক্তির দাবি করা হয়৷ এর থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষের নাকি রাজাকারদের পক্ষে আছেন৷
প্রধানমন্ত্রী বলেন ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের জনগণ বুঝতে পারে একটি সরকারই কেবল দেশের জনগণের জন্য৷ তাই তারা আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতায় এনেছিল৷ ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল জনগণের জন্য ছিল স্বর্ণযুগ৷
২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সময়ে আমরা দেশের ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, ‘বিভিন্ন বেসরকারি খাতের অনুমতি দিয়েছি যাতে যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়৷ যুবকেরা যেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে তার সুযোগ সৃষ্টি করেছি৷ শুধু খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণই হইনি, বরং খাদ্য রপ্তানিও করছি৷ আন্তর্জাতিক খাদ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে৷
শেখ হাসিনা আরো বলেন, ২০২১ সালের আগেই মধ্যম আয়ের দেশ হবে বাংলাদেশ এতে কোনো সন্দেহ নেই৷ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ হবে একটি সমৃদ্ধ দেশ৷
শেখ হাসিনা আরো বলেন, খালেদা জিয়া পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর দোসরদের হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছিলেন৷ আমরা ওয়াদা করেছিলাম তাদের বিচার করবো, বিচার করছি৷ আর বিএনপি কী করছে? আন্দোলনের নামে খালেদা জিয়া সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে, গাছ কেটেছে, গাড়ি পুড়িয়েছে৷ এর জবাব তাকে একদিন দেশের মানুষের কাছে দিতে হবে
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে, বিচার চলবে৷ একে কেউ বাধাগ্রস্থ করতে পারবে না৷ যারা স্বজন হারিয়েছে তাদের মানবাধিকার রক্ষা করতে হবে,খুনিদের নয়৷ যখন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কাজ চলে তখন মাবাধিকার সংগঠন তেঁতেওঠে৷ বাংলাদেশ স্বাধীন, কারো কাছে মাথা নত করবে না৷’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামীতে প্রত্যেক ঘরে ঘরে আলো জ্বালাবো, কোনো মানুষ অন্ধকারে থাকবে না৷
যুবসমাজের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, যুবকদের কর্মসংস্থানের জন্য জামানত ছাড়া কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে ২ লাখ টাকা ঋণ নেয়া যাবে৷ যা ১৯৯৬ সালে ১ লাখ টাকা ছিল৷ সুনাম ক্ষুন্ন করে এমন কোনো কর্মকাণ্ডে না জড়াতে সহযোগী সংগঠন যুবলীগের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা৷এমন কোনো কর্মকাণ্ড করবেন না, যাতে যুবলীগের বদনাম হয়৷
অন্তঃকোন্দল, দরপত্রে প্রভাব বিস্তারসহ নানা অনিয়মে যুবলীগকর্মীদের জড়িয়ে পড়ার অভিযোগের প্রেক্ষাপটে এই আহ্বান জানালেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী৷
তিনি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের লক্ষ্য অর্জনে সহযোগী যুব সংগঠনটিকে আরো তত্পর হওয়ার আহ্বানও জানান৷প্রত্যেকটি ঘরে বিদু্যত্, প্রত্যেকটি মানুষের ঘর পাওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী৷
গণতন্ত্র টওতিষ্ঠায় যুবলীগের ভূমিকা টওসঙ্গে শেখ হাসিনা ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর নূর হোসেনের আত্মত্যাগের কথা তুলে ধরেন৷নূর হোসেন গাড়ির জানলা দিয়ে মাথা ঢুকিয়ে আমাকে বললো, আপা, আমার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দেন৷ গণতন্ত্রের জন্য জীবন দিয়ে যাব৷এরশাদবিরোধী আন্দোলনে তিন জোটের ঢাকা অবরোধের ওই কর্মসূচিতে বুকে-পিঠে স্বৈরাচার নিপাত যাক’, গণতন্ত্র মুক্তি পাক লিখে রাজপথে নেমেছিলেন নূর হোসেন, পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান তিনি৷
যুবলীগসহ স্বাধীনতার পক্ষে শক্তিরা সক্রিয় ছিল বলেই কোনো ষড়যন্ত্র এদেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে পারেনি মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ভবিষ্যতেও পারবে না৷একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের চলমান বিচার শেষ করার বিষয়ে নিজের অবস্থান পুনরায় তুলে ধরে তিনি বলেন, যারা স্বজন হারিয়েছে, তাদের মানবাধিকার রক্ষা করতে হবে৷ যুদ্ধাপরাধীদের মানবাধিকার রক্ষা না৷যারা আমাদের মা-বোনদের হত্যা করেছে৷ গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে৷ তাদের স্থান এই বাংলার মাটিতে হবে না৷
দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ বিক্রি করতে রাজি না হওয়ায় আওয়ামী লীগ ২০০১ সালে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসতে পারেনি দাবি করে তিনি বলেন, “২০০১ এ গ্যাস বিক্রিতে রাজি হইনি৷ ষড়যন্ত্রের শিকার হই৷ ক্ষমতায় আসতে পারিনি৷দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি-জামায়াত জোটের সহিংস আন্দোলনের কথা তুলে ধরে খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, কেন মানুষ হত্যা করেছে? এর জবাব বিএনপি নেত্রীকে একদিন দিতে হবে৷
এরআগে জাহাঙ্গীর কবির নানক তার বক্তব্যে খালেদা জিয়ার উদ্দেশ্য বলেন, ক্ষমতা কি মামার হাতের মোয়া? যুব সমাজ ভুলে যায়নি৷ আপনার ছেলেকে দিয়ে হাওয়া ভবন সৃষ্টি করে দেশের সম্পদ নষ্ট করেছেন৷ আবার ক্ষমতায় এসে শাপলা চত্বর শাপলা চত্বর খেলবেন? আবার আব্দুল আলীম,নিজামী-মুজাহিদদের মতো রাজাকারদের মন্ত্রী বানাবেন? বাংলাদেশের যুব সমাজ আর কোনদিন তা হতে দেবে না৷
যুবলীগেরচেয়ারম্যান ওমর ফারুখ চৌধুরীর সভাপতিত্বে সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকী, আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলির সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজম প্রমুখ৷ এর আগে আওয়ামী যুবলীগের ৪২তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে সভা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়৷ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে দুপুর থেকেই রাজধানীর সোহরাওয়র্দী উদ্যানে সমবেত হন দলের নেতাকর্মীরা৷ সভার সভাপতিত্ব করছেন যুবলীগের চেয়াম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী৷ পরে পুর্নমিলনীতে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাবেশ স্থলে পৌঁছে দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন৷ যুবলীগের পক্ষ থেকে ৩টি বইয়ের মোড়ক উম্মোচনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীকে ক্রেস্ট প্রদান করেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান৷