40_0_43655_0

দৈনিকবার্তা-রাজশাহী, ১৫ নভেম্বর: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম শফিউল ইসলাম লিলনকে আজ শনিবার কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা৷রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন জানান, বিকেল পৌনে চারটার দিকে গুরুতর জখম অবস্থায় অধ্যাপক শফিউল ইসলামকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়৷ তখনই তাঁকে অস্ত্রোপচারের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়৷ সেখান থেকে তাঁকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়৷ পৌনে পাঁচটার দিকে অধ্যাপক শফিউল ইসলামকে মৃত ঘোষণা করা হয়৷

এর আগে হাসপাতাল থেকে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছিলেন, দুপুর আড়াইটার দিকে শফিউল ইসলাম মোটরসাইকেলে করে বিশ্ববিদ্যালয় হাউজিং সোসাইটির (বিহাস) দিকে যাচিছলেন৷ এ সময় রাস্তায় দুবর্ৃত্তরা তাঁকে কুপিয়ে ফেলে যায়৷ পরে তাঁকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়৷মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন জানান, ঘটনাস্থল থেকে একটি চাপাতি উদ্ধার করা হয়েছে৷ পুলিশ ও র্যাব ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে৷ তবে কী কারণে এটা ঘটেছে, তা জানা যায়নি৷

এদিকে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. এ কে এম শফিউল ইসলাম নিলনকে (৩৯) হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়৷শনিবার সন্ধ্যায় বিচারের দাবিতে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করেছে রাবির শত শত শিক্ষার্থী৷ হত্যার বিচারের স্লোগান দিয়ে তারা এ অবরোধ অব্যাহত রাখে৷পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, শনিবার বিকেলে বাসায় ফেরার পথে নগরীর বিহাস এলাকায় সন্ত্রাসীদের কবলে পড়েন ওই শিক্ষক৷ পরে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিত্‍সাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান৷

রামেক হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. মমতাজ ও মতিহার থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন৷ভূতাত্তি্বক বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এম তাহের হত্যাকাণ্ডের আট বছরের মধ্যে খুন হলেন অধ্যাপক শফিউল৷ ২০০৬ সালে তাহেরকে ক্যাম্পাসে তার বাসায় হত্যা করা হয়েছিল৷

শনিবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ক্যাম্পাস সংলগ্ন চৌদ্দপাই এলাকার বাসায় ফিরছিলেন অধ্যাপক শফিউল৷ পথে বিহাস পল্লীতে তিনি হামলার শিকার হন বলে পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে৷ গুরুতর অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতি নেওয়ার মধ্যেই এই শিক্ষকের মৃতু্য হয় বলে চিকিত্‍সকরা জানান৷

হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের নিবন্ধক ডা. মমতাজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ওই শিক্ষকের মাথা, ঘাড়সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের গুরুতর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে৷ জরুরি অস্ত্রোপচারের জন্য অপারেশন থিয়েটারে নেওয়ার পরপরই তিনি মারা যান৷কারা, কেন এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তা তাত্‍ক্ষণিকভাবে জানা যায়নি৷ হামলাকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে মতিহার থানার ওসি আলমগীর হোসেন জানিয়েছেন৷

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বেলা ৩টার দিকে শফিউল ইসলাম বিহাসের সামনে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাত্‍ কয়েকজন তাকে ঘিরে ফেলে ধারালো ছুরি দিয়ে এলোপাতালি আঘাত করে পালিয়ে যায়৷মাথা ও ঘাড়ে রক্তক্ষরণের মধ্যেই শফিউল একটি রিকশায় চেপে হাসপাতালের পথে রওনা হয়েছিলেন৷ ক্যাম্পাসলাগোয়া বিনোদপুরে এসে তিনি রিকশা থেকে পড়ে যান৷

এসময় পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজন তাকে রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে আসে বলে পুলিশ জানিয়েছে৷ ওসি আলমগীরবলেন, তাত্‍ক্ষণিকভাবে হামলাকারীদের চিহ্নিত করা যায়নি৷ তাদের সনাক্ত করে আটকের চেষ্টা চলছে৷ শিক্ষক খুনের প্রতিবাদ এবং হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিকালে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছে বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলোর মোর্চা প্রগতিশীল ছাত্রজোট৷বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি রোববার ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে৷বগুড়ার বাসিন্দা অধ্যাপক শফিউল বাউল সাধক লালনের ভক্ত ছিলেন৷ তার একটি ছেলে রয়েছে৷

ভূতাত্তি্বক ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এস তাহেরকে ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তার ক্যাম্পাসের বাসায় হত্যা করা হয়৷ তার লাশ বাসার পাশের ম্যানহোলে ঢুকিয়ে রাখা হয়েছিল৷ওই হত্যাকাণ্ডের দায়ে অধ্যাপক তাহেরের বিভাগের শিক্ষক মিয়া মো. মহিউদ্দিন, বাসার তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীর আলমের পাশাপাশি আব্দুস সালাম ও নাজমুল নামে আরো দুজনকে মৃতু্যদণ্ড দিয়েছিল বিচারিক আদালত৷ওই রায়ে বিরুদ্ধে আপিল হলে হাই কোর্ট মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীরের মৃতু্যদণ্ড বহাল রেখে সালাম ও নাজমুলের দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়৷