দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৫নভেম্বর: জিয়াউর রহমানকে নিয়ে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অর্বাচীন বালকের মতো কথা বলেছেন তিনি৷জয়কে উদ্দেশ করে বলেছেন, একটা শিশু বলে স্বৈরাচার৷ বিএনপির জন্ম স্বৈরাচারে৷ আগে নিজের চেহারা আয়নাতে দেখো৷তরুণ প্রজন্মের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেতে হলে এভাবে কথা বলা থেকে বিরত থাকার জন্য জয়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মুখপাত্র৷শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ আয়োজিত শহীদ জিয়া ও গণতন্ত্র শীর্ষক আলোচনা সভায় ফখরুল এ কথা বলেন৷
সজীব ওয়াজেদ জয়কে অর্বাচীন বালকের মতো কথা না বলার পরামর্শ দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, তাঁর বয়স অনেক কম৷ ব্যক্তিগতভাবে আমি তাঁকে নিয়ে কিছু বলতে চাই না৷ তবে তাঁদের (আওয়ামী লীগ) নেতাদের ভাষায় বলতে চাই অর্বাচীন বালকের মতো কথা বলা বন্ধ করুন৷ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে নিয়ে কটূক্তি করলে শিকড়কে অস্বীকার করবেন৷ জিয়াউর রহমান ৭৫ পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের পুনর্জন্ম দিয়েছেন৷
বিএনপি সত্যিকার অর্থে রাজাকারদের দল: জয় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি কমরেড মণি সিংহ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি শাহরিয়ার কবির সবাই জিয়াউর রহমানের সময় বিএনপিকে সমর্থন করেছিলেন দাবি করে ফখরুল বলেন, বিএনপি একটি উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক দল৷ জনগণই বিএনপির একমাত্র শক্তি৷
বক্তব্যে আবারও জয়ের প্রসঙ্গ এনে ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা লতিফ সিদ্দিকী বলেছিলেন জয়কে সরকার থেকে প্রতি মাসে দুই লাখ ডলার করে দেওয়া হয়৷ এটি সত্য কি না জনগণ জানতে চায়৷ শুধু হজ নিয়ে কথা বলায় লতিফ সিদ্দিকীকে চাকরি হারাতে হয়েছে, না জয়ের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য চাকরি গেছে তাও জনগণ জানতে চায়৷ ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম সত্য কথা বলেছেন দাবি করে তাঁকে ধন্যবাদ জানান ফখরুল৷প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তার তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টার উদ্দেশে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাদের মতো কথা বললে আপনি নতুন প্রজন্মের কাছে নতুন নেতা হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পাবেন না৷
আগের দিন এক আলোচনা সভায় বিএনপিকে রাজাকারদের দল’ আখ্যায়িত করে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী ছিলেন কি না- সে প্রশ্ন তোলেন জয়৷ যারা রাজাকারদের সঙ্গে রাজনীতি করে তারা কি রাজাকার নয়? অবশ্যই৷ সত্যি কথা হচ্ছে বিএনপি হচ্ছে রাজাকারদের দল৷ তারা যদি প্রমাণ করতে চায় তারা রাজাকারের দল নয়; তাহলে এই রাজাকারের দলের সাথে জোট ছেড়ে আসুক, বলেছিলেন তিনি৷
যুদ্ধাপরাধীদের দেশে ফিরিয়ে আনার প্রসঙ্গ তুলে জয় বলেন, তারপরও তো তারা কোনো দিন একটি বিষয় থেকে ফিরে আসতে পারে না৷ রাজাকারদের কে ফিরিয়ে এনেছে দেশে ? স্বাধীন দেশে তাদেরকে ফিরিয়ে এনেছে জিয়াউর রহমান৷ এটা কোনোমতেই তারা অস্বীকার করতে পারে না৷ আমি প্রশ্ন করব, যে ব্যক্তি এই যুদ্ধাপরাধীদের দেশে ফেরত এনেছে সে কি মুক্তিযোদ্ধা হতে পারে? কোনো মতেই না৷বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি স্বাধীনতার পর নিষিদ্ধ থাকলেও সাবেক সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান দলটিকে রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ করে দেন৷
তিনি বলেন, যত কথাই বলা হোক না কেন- জিয়া ও মুক্তিযুদ্ধকে আলাদা করা যাবে না৷ জিয়াউর রহমানই মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন, এটাই সত্য৷ যারা তার (জিয়া) বিরুদ্ধে কটূক্তি করে, তার নাম মুছে ফেলতে চায়, তারা কোনো দিন তা পারবে না৷ এদেশে যতদিন গণতন্ত্র থাকবে, ততদিন কেউ জিয়ার নাম মানুষের হৃদয় থেকে মুছে ফেলতে পারবে না৷জয়ের বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, জয় সাহেব৷ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নিরাপত্তায় বাংলাদেশে তার জন্ম হয়েছে৷ ছোটকাল থেকে বেশিরভাগ সময় ভারতে ছিলেন৷ এখন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন৷ এদেশের প্রতি তার কতটুকু দরদ আছে, তা জনগণই বলবে৷
জয় সাহেব আওয়ামী লীগের যে ব্যানারে কথা বলছেন, তাতে নুতন নেতা হওয়া যাবে না৷একদলীয় শাসনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে বিলুপ্ত করে বাকশাল হয়েছিল৷ দেশের বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে এই দলকে জিয়াউর রহমানই আবার পুনরুজ্জীবিত করেছিলেন৷ দয়া করে ইতিহাস না জেনে কথা বলবে না৷বিএনপিকে স্বৈরাচারের সৃষ্টি দল বলায় জয়ের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, একটা শিশু বলে স্বৈরাচার৷ বিএনপির জন্ম নাকি স্বৈরাচারে৷ কী বলব! স্বৈরাচার কী? স্বৈরাচার কাকে বলে আগে জান৷ নিজের চেহারা আগে আয়নায় দেখ৷
গণমাধ্যম নিয়েও জয়ের বক্তব্যের সমালোচনা করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব৷
তিনি এক অনুষ্ঠানে মিডিয়াকেও এক হাত নিয়েছেন৷ তিনি বলেছেন, কিছু পত্রিকার সরকারের বিরুদ্ধে এডিটোরিয়াল লেখে৷ তারা অন্ধ৷ সরকারের ভালো কাজ তাদের চোখে পড়ে না৷ এভাবেই বর্তমান আওয়ামী লীগ গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করছে৷ অতীতেও করেছিল৷বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগের এক নেতা এমন কথা বলেছেন, থলের বেড়াল বেরিয়ে গেছে৷ প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম তা ফাঁস করে দিয়েছেন৷’
৫ জানুয়ারি কিভাবে জনগণের আশা-আকাক্ষাকে ধুলিসাত্ করা হয়েছে৷ কিভাবে তাদের দলীয় কর্মকর্তারা ভোটকেন্দ্রে অবস্থান নিয়ে কাজ করেছেন, তা এইচ টি ইমামই বলে দিয়েছেন৷ আমরা তাকে সত্য প্রকাশের জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি৷৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে অবৈধ বলে আসছে ভোট বর্জনকারী বিএনপি৷ অর্ধেকের বেশি আসনের সংসদ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় এর মাধ্যমে গঠিত সংসদ ও সরকারকেও অবৈধ বলছে বিএনপি৷
এইচ টি ইমাম সরকারি চাকরি টওার্থী ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর দেখবেন বলে আশ্বাসও দেন, যার প্রতিক্রিয়াও জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব৷
ফখরুল বলেন, ছাত্রলীগের সোনার ছেলেরা মানুষের বাড়ি-ঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, জমি-জমা দখল করছে৷ এখন ইমাম সাহেবরা তাদের সরকারি চাকরি দিতে চান৷এইচ টি ইমামের বক্তব্য নিয়ে আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ কয়েকজন নেতা ইতোমধ্যে অসন্তোষ জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীও ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলে গণমাধ্যমের খবর৷ফখরুল বলেন, এখন আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, এইচ টি ইমাম রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ, তাই এমন কথা বলেছেন’৷ কিন্তু সত্য কথা তিনি বলেছেন, এটা তো ঠিক৷
সরকারের সমালোচনা করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগে কখনও গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না৷ তাদের নেতারা বলেন, দ্বিতীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করবেন৷ তারা এখন বলেন, গণতন্ত্র পরে,আগে উন্নয়ন প্রয়োজন৷ এটাই হচ্ছে আওয়ামী লীগের ধারণা৷ফখরুল অভিযোগ করেন, মিথ্যা মামলা দিয়ে বিরোধী দলের নেতাদের রাজনীতি থেকে দূরে রাখার চক্রান্ত করছে সরকার৷
মন্ত্রীদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ক্ষমতাসীনদের অনেক মন্ত্রী অনেক বড় বড় কথা বলছেন৷ আমার বড় ভাই, তোফায়েল সাহেব বলেছেন, ১৫ অগাস্টের ঘটনার জন্য অনেকে দায়ী৷ওই সময়ে রক্ষী বাহিনীর প্রধান কে ছিলেন? কেন রক্ষী বাহিনী প্রতিরোধ করেনি?কোথায় ছিল আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের কর্মীরা? তারা কেউ তো প্রতিবাদও করেনি, বরং পালিয়ে গেছে৷ ধন্যবাদ জানাই বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে৷ তিনিই সেদিন প্রতিবাদ করেছিলেন৷
জিয়াউর রহমানকে ক্ষণজন্মা দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, জিয়া ছিলেন একজন ক্ষণজন্মা মানুষ৷ দুভাগর্্য, খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের কাছ থেকে হারিয়ে গেছেন৷ এই মানুষটি ধূমকেতুর মতো এসে দেশের মানুষের কাজ করে গেছেন, জনগণকে জাগিয়ে দিয়ে গেলেন৷তিনি বলেন, বিএনপির অনেক ভুলত্রুটি ও দুর্বলতা থাকতে পারে, কিন্তু জনগণের মধ্যে কোনো দুর্বলতা নেই৷ তারা ঠিক সময় মতোই ফ্যাসিবাদী এই অবৈধ সরকারকে জবাব দেবে৷এসময় দলীয় নেতাদের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, হতাশার কিছু নেই৷ সুদিন আসবে, সূর্য অবশ্যই উঠবে৷
সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রুহুল আমিন গাজীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, চলচ্চিত্রকার চাষী নজরুল ইসলাম, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের আ ন ম আখতার হোসেন, বঙ্গবন্ধূ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল মান্নান মিয়া, অধ্যাপক আখতার হোসেন, অধ্যাপক সিরাজউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক শামসুল আলম, অ্যাডভোটে মেজবাহ উদ্দিন, প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু,শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের সেলিম ভুঁইয়া, কৃষিবিদ অ্যাসোসিয়েশনের হাসান জাফির তুহিন প্রমুখ বক্তব্য দেন৷