দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৪ নভেম্বর: বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ এর ৩৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী এবং মহান রুশ সমাজতান্ত্রিক বিপস্নবের ৯৭তম বার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার বেলা ৪টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও লাল পতাকা মিছিল অনুষ্ঠিত হয়৷ বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিবির সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য কমরেড হায়দার আকবর খান রনো; বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ, জাহেদুল হক মিলু ও রাজেকুজ্জামান রতন৷ সমাবেশের পর একটি বর্ণাঢ্য র্যালী রাজপথ প্রদক্ষিণ করে৷
সভাপতির ভাষণে কমরেড খালেকুজ্জামান বলেন, আমরা এমন এক সময়ে আমাদের পার্টির প্রতিষ্ঠা ও রুশ বিপ্লবের বার্ষিকী উপলৰে সমাবেশ করছি যখন শাসকশ্রেণি রাজনীতিকে রাজসিংহাসন দখলের যুদ্ধ ময়দান বানিয়েছে৷ অর্থনীতিকে লুটতরাজের মচ্ছবে পরিণত করেছে৷ তাদের কাছে লুটপাটের ৪ হাজার কোটি টাকাও কোন টাকাই না, ঘুষ খাওয়া দোষের নয় এবং অর্থনীতির ৮০ ভাগ কালো অর্থনীতি হওয়া স্বাভাবিক ঘটনা৷ এরা আইন শৃঙ্খলার নামে পুলিশ-র্যাব ইত্যাদি বাহিনীকে চরদখলের মতো ৰমতা দখলের লাঠিয়াল বাহিনীতে পরিণত করেছে৷ বাহিনীগুলোও এই সুযোগে বিনা বিচারে মানুষ হত্যাসহ নানা অপকর্মের লাইসেন্স নিয়ে নিয়েছে৷ শাসকেরা জনপ্রশাসনকে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি প্রশাসনের আদলে দাঁড় করিয়েছে৷ বিচার ব্যবস্থাকে নির্বিচারে পরিচালনার নানা আয়োজন সম্পন্ন করা হচ্ছে৷ এরা নীতি আদর্শকে উপহাসের বস্তুতে পরিণত করতে গিয়ে নিজেরা নিচে নামছে এবং গোটা জাতি জনগণের মানবিক মূল্যবোধকে টেনে নিচে নামাচ্ছে৷
তিনি বলেন, শিক্ষা বিসত্মারের বিজ্ঞাপন ঝুলিয়ে মেধাশূণ্য এক জেনারেশন গড়ে তোলা হচ্ছে৷ সৃষ্টিশীল মেধার স্বীকৃতির বদলে ভৃত্যসুলভ আনুগত্যের পুরষ্কার চলছে সর্বত্র৷ রাজনীতির দুবর্ৃত্তায়ন এমন সত্মরে পৌঁছেছে যে গ্রাম-মহলস্না থেকে রাজধানী শহর পর্যনত্ম প্রায় সকল শিৰা প্রতিষ্ঠান, শিল্প-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অলি-গলি, হাট-ঘাট, জমি-জলা সর্বত্র মাসত্মান দুবর্ৃত্তরা দাপটের সাথে দখল করে নিয়েছে৷ এরা মুক্তিযুদ্ধ এবং মানুষের সরল ধর্ম বিশ্বাসকে রাজনীতির পুঁজি করেছে৷ পার্লামেন্টকে ব্যবসায়ী ও গড ফাদারদের ক্লাবে পরিণত করেছে৷ সাধারণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা এখন প্রতিদিন প্রতিঘন্টার উত্কন্ঠায় পরিণত হয়েছে৷ শাসকদের উন্নয়নের ইমারত যত উপরে উঠছে তত বেশি মানুষের স্বপ্ন-সাধ লুটিয়ে পড়ছে, চাপা পড়ে যাচ্ছে ইট পাথরের নিচে৷ পারিবারিক-সামাজিক বন্ধন এতটাই ছিন্ন ভিন্ন হয়ে পড়েছে যে ছেলে বাপের বুকে, বাপ ছেলের বুকে ছুরি বসাতে; স্বামী স্ত্রীকে, মা সনত্মানকে হত্যা করতে দ্বিধা করছেনা৷ দিনে ১২ জনের অধিক মানুষ খুন হয়ে যাচ্ছে৷ মাদকাশক্তি তরম্নণ যুব সমাজকে গ্রাস করে চলেছে৷ কিশোরীদের আত্মহননের মিছিল বেড়ে চলেছে৷ উত্তরবঙ্গের একটি উপজেলায় ৯ মাসে ১৫০টি বাল্য বিবাহ ও ১০৮টি বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে৷ ভোট-ভোটার ছাড়া গণতন্ত্রের ম্যাজিক দেখানো সরকার এখন উন্নয়ন সাফল্যের ম্যাজিক দেখাচ্ছেন নিত্যদিন৷ ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতা প্রত্যাশীরা একে অপরের ধ্বংসস্তুপের উপর ওড়াতে চাইছেন তাদের সাফল্য ও স্থায়ী অসত্মিত্বের নিশানা৷ এতে উভয় মিলে জনগণকে অনাকাঙ্খিত এক গভীর খাদ এর কিনারায় নিয়ে এসেছেন৷ মানুষ এ দুর্গতি-দুর্দশাগ্রস্থ অভিশপ্ত অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চায়৷ জ্বলনত্ম চূলা আর তপ্ত কড়াইয়ে পোড়া ভাজা হওয়া থেকে বাঁচতে চায়৷ অশানত্মি অপশাসনের বিকল্প শানত্মি সমৃদ্ধির পরিবেশ রচনা করতে চায়৷ মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের স্বপ্নের বাসত্মবায়ন দেখতে চায়৷ তাকে সামনে রেখেই আজকে আমাদের এই সংৰিপ্ত সমাবেশ ও লাল পতাকা মিছিলের আয়োজন৷ পরিশেষে তিনি মৌন দর্শকের ভূমিকায় না থেকে সর্বসত্মরের মানুষকে দ্বি-দলীয় বুর্জোয়া রাজনীতির বিপরীতে বিকল্প গড়ার সংগ্রামে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান৷
সিপিবি নেতা হায়দার আকবর খান রনো বলেন, মহাজোট সরকারের দুঃশাসনে ছাত্র-শ্রমিক-কৃষকসহ সর্বসত্মরের জনতা আজ অতিষ্ঠ৷ মানুষ এ অবস্থা থেকে মুক্তি চায়৷ বুর্জোয়া শাসনে পুঁজিবাদী পথে এর অবসান সম্ভব না৷ ফলে বাম গণতান্ত্রিক শক্তির নেতৃত্বে বিকল্প গড়ে তুলতে হবে৷ সিপিবি-বাসদ বিকল্পের সংগ্রাম করছে, অন্যদের প্রতি তিনি ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান৷
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ শ্রমিকের নূ্যনতম মজুরি ৮০০০ টাকা আইন করে বাসত্মবায়ন করা, কৃষি ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করে হাটে হাটে ক্রয় কেন্দ্র খুলে খোদ কৃষকের কাছ থেকে ফসল ক্রয়ের দাবি জানান৷