দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৪ নভেম্বর: ইন্সু্যরেন্স বা বীমা কোম্পানিগুলোর অধিকাংশই বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে৷ এজন্য পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তসহ সব বীমা কোম্পানির রাজস্ব ফাঁকি প্রতিরোধে কঠোর হচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)৷ এই উদ্দেশ্যে কর ফাঁকি দেওয়া কোম্পানিগুলোর তথ্য উদ্ঘাটসহ ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা তৈরি করতে যাচ্ছে সংস্থাটি৷ রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান গোলাম হোসেনের সভাপতিত্বে বোর্ডের সব সদস্যকে নিয়ে সমপ্রতি অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷
ওই সভায় বলা হয়, এমন অনেক খাত রয়েছে, যেখানে প্রচুর রাজস্ব ফাঁকি হয়ে থাকে৷ উদাহরণস্বরূপ ইন্সু্যরেন্স খাতের কথা উল্লেখ করা হয়৷ এসব খাতের রাজস্ব ফাঁকি উদ্ঘাটন করতে পারলে অনেক রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হবে৷ সেজন্য বৈঠকে বীমা কোম্পানির কর ফাঁকির সার্বিক চিত্র উল্লেখ করে প্রতিবেদন তৈরির কথা বলা হয়৷ আর প্রতিবেদন অনুযায়ী, কর ফাঁকির সঙ্গে জড়িত সব বীমা কোম্পানিকে শাস্তির আওতায় এনে জরিমানাসহ সরকারের প্রাপ্য কর আদায় করার নির্দেশ দেওয়া হয়৷
এদিকে, এনবিআরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তসহ সব বীমা কোম্পানির রাজস্ব ফাঁকি প্রতিরোধে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে এনবিআর৷ এ লক্ষ্যে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া কোম্পানিগুলোর তথ্য উদ্ঘাটনে ইতোমধ্যেই তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে সংস্থাটি৷
সূত্র জানায়, বর্তমানে সাধারণ বীমা ও জীবন বীমাসহ মোট ৭৫টি বীমা কোম্পানি রয়েছে৷ তার মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বীমা কোম্পানি রয়েছে ৪৬টি৷ রাজস্ব বোডের্র গোয়েন্দা সংস্থা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি) থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এই কোম্পানিগুলোর অধিকাংশই বছর শেষে প্রকৃত আয়ের তথ্য গোপন করে প্রতিবেদন তৈরি করে৷ এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো প্রত্যেক বছরই বিপুল পরিমাণের কর ফাঁকি দিয়ে থাকে৷ আর এনবিআরের সিআইসি থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতেই কর ফাঁকি দেওয়া কোম্পানিগুলোর তথ্য উদ্ঘাটনে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে৷ কমিটির দেওয়া প্রতিবেদনের আলোকে পরবর্তী সময়ে কর ফাঁকি দেওয়া প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে৷
এ প্রসঙ্গে রাজস্ব বোর্ডের এক ঊধর্্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এনবিআরের কাছে প্রমাণ রয়েছে, অধিকাংশ বীমা কোম্পানি ভুয়া আয়-ব্যয়ের হিসাব তৈরির মাধ্যমে প্রকৃত আয় গোপন করার মাধ্যমে কর ফাঁকি দিচ্ছে৷ তবে এখন এগুলো উদ্ঘাটনে কমিটি গঠন করা হয়েছে৷ এ ছাড়াও যেকোনো সময়ের তুলনায় কর ফাঁকি বন্ধে রাজস্ব বোর্ড বর্তমানে কঠোর অবস্থানে রয়েছে৷ এ ছাড়া কর ফাঁকি বন্ধে অটোমেশনসহ বেশকিছু কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে৷ কাস্টম হাউস ও স্থলবন্দরে এসওয়াইকোডা ওয়ার্ল্ড সফটওয়্যার নামে একটি সফটওয়্যার স্থাপন করা হচ্ছে৷ সবগুলো কর্মসূচি বাস্তবায়িত হওয়ার পর কর ফাঁকি দেওয়ার আর কোনো সুযোগ থাকবে না বলে জানান তিনি৷
জানা গেছে, কর ফাঁকির জন্য কার্যকর ও তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের দুর্বলতা থাকা, কর ফাঁকি দিলে তা চিহ্নিত না হওয়ার সম্ভাবনা থাকা এবং স্বচ্ছ লেনদেন ও রেকর্ড কিপিংয়ের ব্যবস্থা না থাকার কারণে কর ফাঁকি দেওয়া হয়ে থাকে৷