দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৪ নভেম্বর: দমন-পীড়নের মাধ্যমে সৃষ্ট অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির জন্য সরকারই দায়ী এর ফলে সন্ত্রাসবাদের উত্থানের আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর৷শুক্রবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন৷এর দায় সরকারকেই বহন করতে হবে উল্লেখ করে বিএনপির এ নেতা আরো বলেন, বিএনপিকে নেতৃত্বশূণ্য করার নীলনকশার অংশ হিসেবে মিথ্যা মামলা দিয়ে ধর পাকড় চালানো হচ্ছে৷
মানবতাবিরোধী অপরাধে জামাত নেতাদের ফাঁসির রায় নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, তারাও এ অপরাধের বিচার চায় তবে সেটা অবশ্যই আন্তর্জাতিক মানের এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছাড়া হতে হবে৷এছাড়া, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমামের বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এতে নির্বাচনে কারসাজি নিয়ে বিএনপির আশঙ্কাই প্রমাণিত হয়েছে৷
প্রশাসনে দলীয়করণের যে অভিযোগ বিএনপি করে আসছে, তার প্রমাণ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের বক্তব্যকে তুলে ধরলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর৷একদিন আগে ছাত্রলীগের এক অনুষ্ঠানে এইচ টি ইমামের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বৃহস্পতিবার বলেছেন, এতে সরকারের দলীয়করণের চরম বহিঃপ্রকাশ বলে আমরা মনে করি৷সরকারের প্রভাবশালীর এই বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, প্রশাসনের কী অবস্থা? ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রলীগের সোনার ছেলেদের চাকরি দেওয়া হবে, অন্যদের চাকরি দেওয়া হবে না৷
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এইচ টি ইমাম বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক অনুষ্ঠানে সহযোগী সংগঠনটির নেতাদের প্রতিষ্ঠিত করার কথা বলে তাদের উদ্দেশে বলেছিলেন, চাকরিসহ যে কোনো প্রতিযোগিতামূলক লিখিত পরীক্ষায় ভালো করতে হবে৷ আমি প্রয়োজনে কোচিং ক্লাস নিতে রাজি আছি৷ তারপরে আমরা দেখব, আগে নয়৷ফখরুল বলেন, সরকার বিচার বিভাগ দলীয়করণ করেছে, তাদের প্রশাসনের অবস্থাও একই৷
যুবলীগ-ছাত্রলীগ না হলে চাকরি হয় না৷ সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ইন্টিলিজেন্স রিপোর্টের সময়ে দেখা হয়, তার বংশের ওেলাকজন আওয়ামী লীগের কি না৷ শুনেছি- নেত্রীর ( শেখ হাসিনা) কাছে চাকরির জন্য আবেদন নিয়ে গেলে তিনি না কি বলেন, ছেলেটা কাদের,ছেলেটা আমাদের কি না৷ সেনাবাহিনীতেও দলীয়করণ হচ্ছে বলে শোনা যায়, বলেন বিএনপির মুখপাত্র৷
৭ নভেম্বর নিয়ে এই আলোচনা সভায় ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বাইরে একটি দল- একথা বললে বিতর্কের সৃষ্টি হবে৷ এই দলটির সঙ্গে ৭ নভেম্বরের বৈরী সম্পর্ক৷ আসলে ৭ নভেম্বর থাকলে আওয়ামী লীগ থাকে না, সেজন্য ৭ নভেম্বরে কর্মসূচি করতে তারা দেয় না৷
জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধুলিসাত্ করেছেন বলে এরশাদের দেওয়া বক্তব্যের সমালোচনাও করেন বিএনপি নেতা৷ ইদানিং এরশাদ একজন নব্য মুক্তিযোদ্ধা হয়ে আবির্ভূত হয়েছেন৷ মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় তিনি ছিলেন পাকিস্তানে৷ জিয়াউর রহমান বদান্যতায় তিনি (এরশাদ) প্রথমে উপ সেনাপ্রধান এবং পরবর্তীতে সেনাপ্রধান হয়েছিলেন৷ জিয়াউর রহমানের মৃতু্যর পেছনে তার কী ভূমিকা ছিল, তা দেশবাসী জানে৷
জিয়ার মৃত্যুর পর বিচারপতি আবদুস সাত্তারের নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে এরশাদের ক্ষমতারোহনের কথা তুলে ধরে ফখরুল বলেন, এরশাদ এদেশের গণতন্ত্রকে কলুষিত ও ধ্বংস করেছে৷ ৯ বছর ছাত্র-জনতার ওপর স্টিমরোলার চালিয়েছে৷ বরণ্য শিল্পী তাকে নিয়ে বিশ্ববেহায়ার ছবি এঁকেছিলেন৷গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ও পরে এরশাদের নানামুখী বক্তব্য তুলে ধরে ফখরুল বলেন, যখন আন্দোলন তুঙ্গে তখন এরশাদ বলেছিলেন, আমি নির্বাচনে যাব না৷ আবার তার প্রভু যখন ঘাড় ধরে চাপ দিল, তখন বলল, আমি নির্বাচনে যাব, আমি নির্বাচনে যাব৷
বর্তমান সংসদ জনপ্রতিনিধিত্বহীন দাবি করে তিনি বলেন, এই সংসদকে কোনোভাবে জনগণের সংসদ বলা যাবে না৷ এই সরকারও নির্বাচিত নয়৷ আমরা এই সরকারকে বলি একটি দখলদারী সরকার৷বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলন, বিএনপি আন্দোলনে নেই-এটা বলা ভুল৷ আমরা আন্দোলনে আছি, থাকব৷ সময় মতো জনগণকে সম্পৃক্ত করে অবৈধ সরকারের পতন ঘটানো হবে৷
মির্জা ফখরুল বলেন, বৈঠকে সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া হত্যা মামলায় সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিলের ব্যাপারে বিএনপি তীব্র নিন্দা জানিয়েছে৷ বিএনপি মনে করে, ১০ বছর পর তৃতীয়বারের মতো অভিযোগপত্র দিয়ে সিলেটের মেয়র আরিফুল হক ও হবিগঞ্জের মেয়রকে রাজনৈতিক কারণে জড়ানো হয়েছে৷তবে এই মামলায় বিএনপির সাবেক নেতা হারিছ চৌধুরী ও লুত্ফুজ্জামান বাবরের বিষয়ে মির্জা ফখরুল কোনো কথা বলেননি৷
মির্জা ফখরুল জানান, ৮ নভেম্বর তাদের ঢাকায় সমাবেশ করতে না দেয়া এবং পরবর্তী সময়ে ৯ নভেম্বর বিএনপির কর্মসূচিতে বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের হামলা চালানোর ঘটনায় সভায় নিন্দা জানানো হয়৷জিয়াউর রহমানকে নিয়ে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের নেতাদেরসহ হাসানুল হক ইনুর বক্তব্যের নিন্দা জানানো হয়৷
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট খন্দাকার মাহবুব হোসেন, যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, শিক্ষা বিয়ষক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানা উল্লাহ মিয়া প্রমুখ৷