দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৩নভেম্বর: বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলা রাজনৈতিক চক্রান্ত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী৷ ২১ আগস্টের ঘটনাটি রহস্যে ঘেরা গভীর চক্রান্ত বলে মন্তব্য করেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ৷বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার সকালে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন৷
রুহুল কবির বলেন,২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর তারেক রহমানের নামে এ ঘটনায় কোনো মামলা করেনি আওয়ামী লীগ৷ কিন্তু ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পরই তারা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমানের নাম ঢুকিয়ে দিয়েছে৷ এ সবই ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক চক্রান্ত৷২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলা নিয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত মিথ্যাচার করেছেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, মঙ্গলবার সংসদ ভবনে সাংবাদিকদের সুরঞ্জিত বলেছিলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তিনি না সাক্ষী হতে পেরেছেন, না আসামি৷ কিন্তু এ মামলার চার্জশিটে তিনি ৭ নম্বর সাক্ষী৷ পরে সুরঞ্জিত বলেছিলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার চার্জশিটে ৪০০ জন সাক্ষী ছিল৷ ১/১১’র পর তত্কালীন সরকারের আমলে প্রথমে এ মামলার চার্জশিটে ৪১২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়৷ এরপর আরও ৮৩ জনের নাম উল্লেখ করে মোট ৪৯৫ জনকে সাক্ষী করা হয়৷
রিজভী আরও বলেন, ‘১/১১’র পর তত্কালীন সরকারের আমলে এ মামলার চার্জশিটের কার্বন কপিতে তারেক রহমানের নাম ছিল না৷ কিন্তু আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর এ মামলার সঙ্গে তারেকসহ বিএনপি নেতাদের নাম জড়িয়ে দেয়৷ এটা তাদের বর্বর পরিকল্পনার অংশ৷
তিনি বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে অন্যায় ও হিংসার বশবর্তী হয়ে কোন কাজ করতে গেলে আসল সত্য বেরিয়ে পড়বেই৷ ওই মামলায় বাবু সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ৭ নং সাক্ষী৷অথচ কত অবলীলায় সেটাকে আড়াল করে অসত্য বিবৃতি প্রদান করেন সংবাদ মাধ্যমে দায়িত্বরত সাংবাদিকদের সামনে৷ এ থেকেই বোঝা যায় ভোটারবিহীন এই সরকার দৃশ্যমান হস্তক্ষেপের মাধ্যমে কিভাবে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীকে মিথ্যা মামলায় জড়িত করে৷ আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পরে দলীয় মনোভাবাপন্ন লোককে আইও নিয়োগ করে দ্বিতীয় দফা সম্পুরক চার্জশীট দিয়ে বিএনপি’র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অন্যান্য নেতৃবর্গের নাম অন্তভর্ূক্ত করা হয়েছে৷
রিজভী অ বলেন, ক্ষমতাসীন দলের একজন প্রভাবশালী নেতার এহেন অসামঞ্জস্যহীন ও বিভ্রান্তিকর মনগড়া কথাবার্তাতেই মনে হয় ২১ আগষ্টের গ্রেনেড হামলার মামলা ন্যায় বিচারের পথে যেতে দেয়া হবেনা৷ প্রকৃত ঘটনার গভীরভাবে অনুসন্ধান না করে আসল আসামীদের আড়াল করার মাধ্যমে তারেক রহমানকে জড়ানোটাই ছিল তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য৷ কারণ তাদের নির্মম প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার এছাড়া তাদের আর কোন পথ নেই৷
তিনি বলেন, বর্তমান ভোটারবিহীন অবৈধ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতাসীন হওয়ার পরে তাদের কার্বন কপি ১/১১ এর সরকারের দেয়া চার্জশীটকে পাল্টে দিয়ে নতুন করে সম্পূরক চার্জশীট গঠন করার মাধ্যমে সেখানে তারেক রহমানসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দের নাম অন্তভর্ূক্ত করাটা একটি বর্বর পরিকল্পনারই অংশ৷ এখন মনে হয় ২১ আগষ্টের ঘটনাটাই একটি রহস্যে ঘেরা গভীর চক্রান্তের ফলশ্রুতি, তত্কালীন নির্বাচিত গণতা্িন্ত্রক সরকারকে বিপদে ফেলে তার ভাবমূর্তি বিনষ্টের জন্য দেশবিরোধী দেশী বিদেশী চক্রের মরণঘাতি খেলা বলে জনগণ বিশ্বাস করে৷
রিজভী আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সাইন বোর্ড সামনে রেখে দখল, দুর্নীতি, হানাহানী, লুটপাটকে যারা নিজেদের জীবন দর্শন করেছেন তারা নিজেদের স্বার্থে এমন কোনো কাজ নেই, যা তারা করতে পারেনা৷ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে যারা অক্লেশে বিপুল অর্থ বিত্তের মালিক হয়েছে তারা তো নিজেদের অবৈধভাবে দখল করা গদি রক্ষা করতে তাদের সমালোচক ও বিরোধীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা আর হানাহানির মতো বিবেকবর্জিত কাজই করবেন৷ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বুলি কপচিয়ে এখন ক্ষমতাসীন দলের চেলা চামুন্ডারা নি:স্ব নি:সম্বল মুষিক থেকে ঐরাবতে পরিণত হয়েছেন৷ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাইনবোর্ডের পেছনে চলছে বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গুলি খাওয়ানো হচ্ছে এবং প্রাণ কেড়ে নেয়া হচ্ছে৷
তিনি আরো বলেন, সুদুর প্রসারিত সুপরিকল্পিত চক্রান্তের মাধ্যমে এই ভোটারবিহীন সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়৷ সেজন্য এরা অসত্য, অন্যায় ও মিথ্যা প্রচারের ওপর নির্ভর করছে৷ এরা গল্পে কথিত সেই মিথ্যাবাদী রাখাল৷ এভাবে মিথ্যা চিত্কার করতে করতে যেদিন সত্যি সত্যি বাঘের খপ্পরে পড়বে তখন আর্তচিত্কার করে লাভ হবেনা৷ জনগণ কখনোই এগিয়ে আসবে না৷সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মীর সরাফত আলী সফু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন৷