timthumb.php

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৩নভেম্বর: ইঊরোপীয় বিজ্ঞানীরা এই প্রথম কোনো ধূমকেতুতে নামা রোবটটির কাছ থেকে তথ্য-উপাত্ত পাওয়ার আশা করছেন৷বাংলাদেশ সময় বুধবার রাত ১০টার দিকে রোবটযান ফিলে ধূমকেতু সিঙ্টিসেভেনপির ওপর অবতরণ করে৷ ঘটনাটি পৃথিবী থেকে কিলোমিটার দূরে৷ পৃথিবী থেকে ৫১ কোটি কিলোমিটার দূরে দ্রম্নত ধাবমান এক ধুমকেতুর বুকে মানুষের তৈরি একটি যান এই প্রথম অবতরণ করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে৷গবেষকরা আশা করছেন, এ অভিযান সফল হলে ৪৫০ কোটি বছর আগে সৌরজগত্‍ সৃষ্টির সময়কার প্রকৃত রহস্য সম্পর্কে জানা যাবে৷

ইউরোপীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর আগে ল্যান্ডারটিকে সৌরজগতে ১০ বছর পরিভ্রমণ করতে হয়েছে৷ ফিলি নামে এই ল্যান্ডারটি বরফে তৈরি ধূমকেতুর ওপর অবতরণ করার পর বিজ্ঞানীরা তার পাঠানো সঙ্কেতও পেয়েছেন৷যে ধূমকেতুটির বুকে এই যান অবতরণ করেছে তার নাম সিঙ্টি সেভেনপি চুরিউমভ- গেরাসিমেনকো৷ ধূমকেতুটির বয়স অনত্মত ৪০০ কোটি বছর এবং অবতরণযানটি যেখানে নেমেছে সেই জায়গাটি বরফ আর ধূলোর আসত্মরণে ঢাকা৷আশা করা হচ্ছে এই অভিযান থেকে জানা যাবে কী ধরণের মৌলিক উপাদান দিয়ে আমাদের এই মহাবিশ্ব বা সৌরজগত গঠিত হয়েছে৷

বাংলাদেশ সময় বেলা দুইটা ৩৫ মিনিটে ধূমকেতু সিঙ্টিসেভেনপির কাছাকাছি অবস্থানরত ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির (ইএসএ) মহাকাশযান রোজেটা থেকে রোবটযান ফিলে বিচিছন্ন হয়৷ এটি ধূমকেতুর পৃষ্ঠে অবতরণ করতে সাত ঘন্টার মতো সময় নেয়৷ রোজেটার অভিযানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সব দেশের পাশাপাশি সহায়তা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা৷ফিলে রোবটযান ধূমকেতুতে অবতরণের পরপরই ইএসএর মহাব্যবস্থাপক জেন-জ্যাকুয়েস ডোরিয়েন বলেন, এটি মানবসভ্যতার জন্য এটি বড় পদক্ষেপ৷

রোবটযান কীভাবে ধূমকেতুতে অবতরণ করল, এ বিষয়ে গবেষকেরা বলেন, ধূমকেতু থেকে ১৪ মাইল (২৩ কিলোমিটার) দূরে থাকা অবস্থায়, ১০০ কেজি ওজনের ফিলে রোবটযান মহাকাশযান রোজেটা থেকে আলাদা হয়৷ কোনো রকম ইঞ্জিনের শক্তি বা দিকনির্দেশনা ছাড়াই এটি ধূমকেতুর দুর্বল মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে এর ওপরে অবতরণ করে৷অভিযান শুরুর আগে ইএসএর জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞান উপদেষ্টা অধ্যাপক মার্ক ম্যাককফরিয়ান বলেছিলেন,ধূমকেতুতে ফিলের অবতরণ বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটন ও পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রের ওপর নির্ভরশীল৷

রোবটযান ফিলের সফল অবতরণে সবচেয়ে বড় বাধা ছিল, চার কিলোমিটার দীর্ঘ ধূমকেতু সিঙ্টিসেভেনপির অত্যনত্ম দুর্বল মাধ্যাকর্ষণ৷ রোবটযানটি ধূমকেতুর ওপর পড়ে লাফিয়ে উঠে মহাশূন্যে হারিয়ে যেতে পারত৷ তাই অবতরণ নির্বিঘ্ন করতে রোবটযানটি ধূমকেতু লক্ষ্য করে হারপুন ছোড়ে৷ আর রোবটযানের পা থেকে বের হওয়া স্ক্রু ধূমকেতুতে আটকে গিয়ে এর অবস্থান সুসংহত করে৷

নাসার গবেষক আর্ট চেমিলিউস্কি বলেন, ধূমকেতু সিঙ্টিসেভেনপির মাধ্যাকর্ষণ বল পৃথিবীর অভিকর্ষ বলের এক লাখ ভাগের এক ভাগ৷ চেমিলিউস্কি আরও বলেন, রোবটযান ফিলেতে দুটি হারপুন এবং ধাক্কা সামলে অবতরণের দুটি যন্ত্র আছে৷ এ ছাড়া এর তিনটি পায়েই একটি করে ড্রিল মেশিন আছে৷ আছে একটি ছোটখাটো রকেট ইঞ্জিনও৷এই সবকিছুই শুধু সফল অবতরণের জন্য৷অবতরণের পর রোবটযান ফিলের কাজ প্রসঙ্গে গবেষকেরা জানান, ধূমকেতুতে ভালোভাবে অবস’ান নিশ্চিত করার পরপরই রোবটযান চারপাশের ছবি তুলবে৷ দূর থেকে দেখা গভীর গর্ত ও লম্বা প্যাঁচানো বরফের ধূমকেতুটি দেখা যাবে অনেক কাছ থেকে৷