দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৩নভেম্বর: আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে দেশে সব থেকে বেশি মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান৷বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন:চাই প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিশ্রুতি শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ ও আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি এ অভিযোগ করেন৷
আইন ও সালিস কেন্দ্র এ প্রতিবেদন প্রকাশ ও আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে৷ অনুষ্ঠানে ‘জাতীয় মানবাধিকার কমিশন : চাই প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিশ্রুতি শীর্ষক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন আসকের কর্মকর্তা আকলিমা ফেরদৌস৷ অনুষ্ঠানে আইন ও সালিস কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল বক্তব্য রাখেন৷ এ সময় অন্যান্যের মধ্য উপস্থিত ছিলেন এ এন এন আই ফোকালপার্সন জয়েস খোয়ান প্রমুখ৷ বিভিন্ন সংবাদকর্মী, মানবাধিকারকর্মীসহ সুশীল সমাজের মানুষ এতে অংশগ্রহণ করেন৷
মানবাধিকার লঙ্ঘনের যতো অভিযোগ কমিশনে আসে তার সবই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে বলে মন্তব্য করে মিজানুর রহমান বলেন, দুঃখজনক হলেও আমরা এমন একটি সমাজে রয়েছি যেখানে অপরাধীরও যে মানবাধিকার আছে এ সত্যটা মানতে চাই না৷ তবে কমিশনে আসা অভিযোগের ব্যাপারে তিনি কোনো সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান উল্লেখ করেননি৷সমপ্রতি পুলিশের গুলিতে আহত এক ব্যক্তিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দেখতে যাওয়া প্রসঙ্গে ড. মিজান বলেন,একজন অভিযুক্ত ব্যক্তির সঙ্গে এমন পৈশাচিক ও বর্বর আচরণ করা হয়েছে এটা কোনো আইনে গ্রহণযোগ্য, তা জানি না৷ আমরা মনে করেছি, এটা মানবাধিকারের লঙ্ঘন৷ সে জন্য আমরা এ কথাটা স্মরণ করিয়ে দিয়েছি৷
দেশের বর্তমান মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন,দেশের বর্তমান মানবাধিকার পরিস্থিতি স্থিতিশীল আছে৷এটি নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই৷দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতির সাথে সাথে মানবাধিকার অবস্থারও উন্নতি হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি৷এর আগে সাংবাদিকতার নীতি নৈতিকতা ও শিশু সংবাদ প্রসঙ্গ’ বিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় অংশ নেন ড. মিজানুর রহমান৷ নগরীর একটি অভিজাত রেস্তোরাঁয় ইউনিসেফ ও এমআরডিএ ওই সভার আয়োজন করে৷
দেশের বর্তমান মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে ড.মিজান বলেন,দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি স্থিতিশীল আছে৷ এটি নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই৷ দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক অবস্থা যেহেতু দিনে দিনে উন্নতি হচ্ছে সেহেতু মানবাধিকার অবস্থারও উন্নতি হচ্ছে৷ মানবাধিকার কমিশনের এই চেয়ারম্যান বলেন, রাষ্ট্র যখন নিরাপদ খাদ্যসহ সকল নাগরিকের সকল অধিকার নিশ্চিত করতে পারবে তখনই রাষ্ট্র সফল৷ আর তখনই রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালন হবে৷ন্যায় বিচার সম্পর্কে কোনো কথা বললেই আমাকে জঙ্গিবাদের উস্কানিদাতা হিসেবে আখ্যা দেয়া হয় বলে মন্তব্য করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান৷
ড. মিজানুর রহমান বলেন, দেশের পুলিশ যখন বন্দুক ঠেকিয়ে কোনো সাধারণ জনগণকে গুলি করে এটা কোন ধরনের আইনের মধ্যে পড়ে? এতে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয় না?আর আমি যদি তাদের ন্যায় বিচারের কথা বলি তখন আমাকে জঙ্গিবাদের উস্কানিদাতা হিসেবে ঘোষণা করা হয়৷ দেশে আইন আছে, কেউ অপরাধ করলে তাকে আইন অনুযায়ী শাস্তি দেয়া হবে৷ পুলিশের এ ধরনের বর্বরতা কোনো সভ্য দেশে নেই বলে মন্তব্য করেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান৷
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, পুলিশের চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়েছে৷ পুলিশের সামপ্রতিক কার্যক্রম সাংঘাতিক রূপ নিয়েছে৷ তাদের আচরণ সংযত করতে হবে এবং মানবাধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হবে৷
মিজানুর রহমান বলেন, একজন নাগরিককে খুব কাছে থেকে এভাবে গুলি করা এক ধরনের বর্বরতা ও অসভ্যতা৷ এভাবে গুলি করার নির্দেশ পুলিশকে কে দিয়েছে?তিনি বলেন, একটি নির্দিষ্ট জেলার পুলিশের কতিপয় সদস্য এ ধরনের কর্মকাণ্ড বেশি করছেন৷ মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী পুলিশের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে৷জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতি মানুষের আস্থা বৃদ্ধি পেলেও আইনের দুর্বলতা এবং পর্যাপ্ত লোকবলের অভাবে যথাযথভাবে কাজ করতে পারছি না বলে মন্তব্য করেছেন কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান৷
আমাদের সমাজে আইনের শাসন নেই উল্লেখ করে ড. মিজান বলেন, আমরা একটি সুপারিশমূলক প্রতিষ্ঠান৷ আমরা সরকারের কাছে সুপারিশ করতে পারি৷ কিন্তু মানা না মানা তাদের কাজ৷ তবে যে সমাজ আইনের শাসন দ্বারা পরিচালিত সে সমাজে মানবাধিকার কমিশনের সুপারিশকে গুরুত্ব দেয়া উচিত৷ তাই মানবাধিকার কমিশনের দুর্বলতাগুলো কীভাবে কাটিয়ে উঠা যায় সে বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে৷
কাদের দ্বারা মানবাধিকার বেশি লঙ্ঘন হয় সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের জবাবে ড. মিজান বলেন, রাষ্ট্রের আনুকূল্যে থাকা ব্যক্তিদের দ্বারাই বেশি মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে৷ সে হতে পারে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, হতে পারে প্রশাসন বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্য৷জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এবং পুলিশ মুখোমুখি কী না এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে পুলিশের কোনো বিরোধ নেই৷তবে অপরাধীদেরও যে মানবাধিকার থাকে সেটা অনেকেই বুঝতে চায় না৷
সভাপতির বক্তব্যে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক ড. সুলতানা কামাল বলেন, রাজনৈতিক কারণে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন পূর্ণ স্বাধীনতা পাচ্ছে না৷ সীমিত ক্ষমতা নিয়ে বাংলাদেশের মানবাধিকার কমিশন যে কাজ করছে তা অবশ্যই প্রশংসনীয়৷মানুষ বিচার পায় না বলেই মানবাধিকার কমিশনের প্রতি প্রত্যাশা অনেক বেড়ে গেছে৷ তাই রাষ্ট্রকে এই কমিশনের প্রতি তার দায়িত্ব পালন করতে হবে বলেও মনে করেন ড. সুলতানা কামাল ৷