image_150191.44

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১২নভেম্বর: সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য শিক্ষাবিদ অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীর মরদেহ বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট৷ জোটের সাধারণ সম্পাদক গোলাম কুদ্দুস বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত প্রয়াত এ শিক্ষাবীদের কফিন শহীদ মিনারে রাখা হবে৷ এর আগে সকাল ৯টায় তাকে নেওয়া হবে তার সাবেক কর্মস্থল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে৷

শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর জিল্লুর রহমানের মরদেহ জানাজার জন্য নেওয়া হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে৷ তবে তাকে কোথায় দাফন করা হবে- সে সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি বরে জানান কুদ্দুস৷মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থান অথবা বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হতে পারে৷বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক জিলস্নুর রহমান সিদ্দিকী মঙ্গলবার রাত পৌনে ১২টার দিকে নগরীর বনানীর নিজ বাড়িতে হৃদরোগে আক্রানত্ম হয়ে ইনত্মেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহে….রাজেউন)৷ তার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর৷মৃতু্যকালে তিনি স্ত্রী, তিন ছেলে, এক মেয়ে, আত্মীয়স্বজন এবং অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন৷অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীর মরদেহ নগরীর শমরিতা হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে৷ তার দুই ছেলে বিদেশ থেকে দেশে ফেরার পর মরদেহ দাফন করা হবে৷তার মৃতু্যতে দেশের বুদ্ধিজীবী মহলসহ সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে এসেছে৷

অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীর লাশ সকাল ৮টা থেকে ৯টা পর্যনত্ম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে রাখা হবে৷ সেখানে ছাত্র-শিক্ষকগণ তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন৷ এখানে তার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে৷
এছাড়াও এদিন সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যনত্ম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বসত্মরের জনগণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য তার মরদেহ রাখা হবে৷ বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে তার দ্বিতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে৷অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীর নাতনী অবনত্মী শ্যামা আফরোজ জানান, তাকে বনানী কবরস্থান অথবা সাভারে দাফন করা হতে পারে৷

অধ্যাপক জিল্লৃর রহমান সিদ্দিকীর মৃতু্যতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, ডেপুটি স্পিকার মোঃ ফজলে রাব্বী মিয়া, চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গভীর শোক প্রকাশ করেছেন৷ তারা তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসনত্মপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান৷রাষ্ট্রপতি তার শোক বাণীতে বলেন, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক জিল্লৃর রহমান ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তচিনত্মা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার ধারক৷ তিনি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে বিপুল অবদান রেখে গেছেন৷রাষ্ট্রপতি বলেন, তাঁর মৃতু্যতে জাতি একজন বরেণ্য শিক্ষাবিদকে হারাল৷ জাতির জন্য এ এক অপূরণীয় ক্ষতি৷ শিক্ষা ও সমাজসেবায় অধ্যাপক জিল্লৃর রহমানের অবদান জাতি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে৷

শোক বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিলস্নুর রহমান সিদ্দিকী একটি জ্ঞানভিত্তিক ও প্রগতিশীল সমাজ বিনির্মাণে আমৃতু্য কাজ করে গেছেন৷ তার মৃতু্যতে দেশের শিক্ষা জগতে যে শূন্যতা সৃষ্টি হলো তা সহজে পূরণ হওয়ার নয়৷অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী ১৯২৮ সালের ২৩ ফেব্রম্নয়ারি ঝিনাইদহে জন্মগ্রহণ করেন৷ ১৯৪৫ সালে যশোর জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করে ভর্তি হন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে৷ পরে ইংরেজি সাহিত্যে বিএ ও এমএ ডিগ্রি নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে৷যুক্তরাজ্যের অঙ্ফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন ঢাকা কলেজে৷ এরপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে আসেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ সেখানে পর পর দুই মেয়াদে ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যনত্ম উপাচার্য ছিলেন জিল্লুৃর রহমান৷ ১৯৯০-৯১ সালে দেশের প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন খ্যাতনামা এই শিক্ষাবিদ৷

সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় সপ্রতিভ বিচরণ ছিল জিল্লূর রহমান সিদ্দিকীর৷ অনুবাদ করেছেন ইংরেজি সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য অনেক বই৷ লিখেছেন প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনী৷ পাঠকপ্রিয় হয়েছে তার কবিতাও৷ তার উলেস্নখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে, বাঙালীর আত্মপরিচয়, শব্দের সীমানা, কোয়েস্ট ফর আ সিভিল সোসাইটি, দ্য কোয়েস্ট ফর ট্রুথ : সেকু্যলার ফিলোসফি বাই আরজ আলী মাতুব্বর, যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ছিলাম ইত্যাদি৷ এছাড়া বাংলা একাডেমির ইংরেজি থেকে বাংলা অভিধানের সম্পাদক তিনি৷

১৯৭৭ সালে আলাওল সাহিত্য পুরস্কার পান জিলস্নুর রহমান সিদ্দিকী৷ দুই বছর পর ১৯৭৯ সালে পান বাংলা একাডেমি পুরস্কার৷ ২০১০ সালে পান স্বাধীনতা পুরস্কার৷মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রজয়ের পর ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া নাগরিক কমিটির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে কমিটির চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী৷তার বড় ছেলে দাউদ আফজাল যুক্তরাষ্ট্রে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়নের শিক্ষক, মেজ ছেলে শাকিল আক্তার একজন চিকিত্‍সক, ছোট ছেলে ফারহাদ আনোয়ার মালয়েশিয়ায় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফলিত পদার্থ বিজ্ঞান পড়ান৷ তার একমাত্র মেয়ে একটি উন্নয়ন সংস্থায় কাজ করেন৷শাকিল আক্তার সাংবাদিকদের জানান, মঙ্গলবার রাতেই তার বাবার মরদেহ ঢাকার শমরিতা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷