All Muhid

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১২নভেম্বর: ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারাই (এসএমই) অর্থনীতির প্রাণশক্তি বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত৷ তিনি বলেছেন,সেমাই থেকে শুরু করে উত্‍পাদনের সবকিছুর প্রাণশক্তিই এসএমই খাত৷ দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ৭০ শতাংশই নিয়ন্ত্রণ করে এই খাত৷ অর্থনীতিতে সম্পদ বাড়াতে হলে উত্‍পাদন বাড়াতে হবে৷বুধবার এসএমই অর্থায়ন মেলা এবং এসএমই ব্যাংকিং পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী এ কথা বলেন৷ রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে বাংলাদেশ ব্যাংক ও এসএমই ফাউন্ডেশন যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে৷

অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের প্রশংসা করে বলেন,ক্ষুদ্রঋণে আমাদের বিকাশ ঈর্ষণীয়৷দেশের বৃহত্‍ জনগোষ্ঠী ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবার আওতায় এসেছে,এটা আমাদের স্বীকার করতে হবে৷ দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, গোলমাল করে বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করা যাবে না৷গোলমালকারীরা গত আট মাসে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত করতে পারেনি, ভবিষ্যতেও পারবে না৷

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান বলেন, গত চার বছরে ১৮ লাখ ৩৫ হাজার উদ্যোক্তাকে দুই লাখ ৬২ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে৷ এর মধ্যে ৯০ হাজার নারী উদ্যোক্তা রয়েছেন৷ তিনি জানান, চলতি বছর এসএমই ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৮ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা৷ প্রথম ছয় মাসে বিতরণ করা হয়েছে ৪৭ হাজার ১৬১ কোটি টাকার ঋণ, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৫৩ শতাংশ৷ এসএমই খাতের উন্নয়নে বড় বাঁধাগুলো তুলে ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, সহায়ক জামানত প্রদানে অপরাগতা, ব্যবসায় দক্ষতার অভাব,ঝুঁকি মোকাবেলায় সীমিত সামথর্্য, ব্যবসায়িক সাফল্য সম্পর্কিত তথ্য সংরক্ষণ ও প্রদানে সীমাবদ্ধতা ইত্যাদি চ্যালেঞ্জ ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের অর্থায়নে বড় বাধা৷
তিনি এ সময় ব্যাংকগুলোর উদ্দেশ্যে বলেন, সহায়ক জামানত দিতে অপারগ আজকের উদ্যোক্তাটি ভবিষ্যতে বিশ্ব দাপিয়ে বেড়ানো কোনো মাল্টিন্যাশনাল ব্যবসায়ের অধিকারী হতে পারে৷ তাই আপনাদের সুচিন্তিতভাবে তরুণ ও উদ্ভাবনী উদ্যোক্তাদের প্রাথমিক মূলধন যোগানে এগিয়ে আসতে হবে৷ ঝুঁকি নিয়ে হলেও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সহায়তা করার আহ্বান জানান তিনি৷এসএমইকে অনুপ্রাণিত করতে পারলে কৃষির মতো শিল্পেও বিপ্লব ঘটানো সম্ভব উল্লেখ করে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ বলেন, শিল্প বিকাশে প্রয়োজন এসএমইকে অনপ্রাণিত করা এবং এগিয়ে নিয়ে যাওয়া৷

কাজী আকরাম বলেন,আমাদের দেশে এক সময় কৃষির অবস্থা বর্তমানের এসএমই’র মতো ছিল৷ সেখান থেকে আমরা কৃষির বিপ্লব ঘটিয়েছি৷ এ সময় তিনি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি অনুরোধ করে বলেন, আপনারা কোনোভাবেই ১০ শতাংশের ওপরে সুদের হার নির্ধারণ করবেন না৷ চেষ্টা করবেন এটা সিঙ্গেল ডিজিট অর্থাত্‍ ৯ শতাংশের মধ্যে রাখতে৷অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিল্পসচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাপরিচালক ও এসএমই বিভাগের প্রধান মাসুম পাটোয়ারী, এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান কে এম হাবিব উল্লাহ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ ইহসানুল করিম৷

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ৪০ জন উদ্যোক্তাকে ১৫ কোটি টাকার এসএমই ঋণ বিতরণ করা হয়৷ এ ছাড়া এসএমই খাতের উন্নয়ন ও বিকাশে তহবিল সরবরাহে অবদান রাখার জন্য ১০টি বিভাগে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক পপ্রতষ্ঠানকে পুরস্কৃত করা হয়৷ এসএমই খাতের বর্ষসেরা শ্রেষ্ঠ ব্যাংকের পুরস্কার পেয়েছে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক৷ বর্ষসেরা শ্রেষ্ঠ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পুরস্কার পেয়েছে আইডিএলসি৷

ব্যাংকিং বিভাগে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাবান্ধব শ্রেষ্ঠ ব্যাংকের পুরস্কার পেয়েছে ইসলামী ব্যাংক,নারী উদ্যোক্তাবান্ধব শ্রেষ্ঠ ব্যাংক হয়েছে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, গ্রামীণ উদ্যোক্তাবান্ধব শ্রেষ্ঠ ব্যাংক হয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, উত্‍পাদনশীল খাত উদ্যোক্তাবান্ধব শ্রেষ্ঠ ব্যাংক হয়েছে ঢাকা ব্যাংক, কাঠামোগত শ্রেষ্ঠ ব্যাংক নির্বাচিত হয়েছে ইস্টার্ন ব্যাংক৷ এ ছাড়া ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাবান্ধব শ্রেষ্ঠ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পুরস্কার পেয়েছে ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, নারী উদ্যোক্তাবান্ধব শ্রেষ্ঠ আর্থিক প্রতিষ্ঠান হয়েছে আইডিএলসি এবং উত্‍পাদনশীল খাত উদ্যোক্তাবান্ধব শ্রেষ্ঠ আর্থিক প্রতিষ্ঠান হয়েছে ইসলামিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট৷ মেলায় ৪২টি ব্যাংক ও ১৬টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়৷ এসএমই অর্থায়ন মেলা চলবে বৃহস্পতিবার রাত ৮টা পর্যন্ত৷ মেলায় কোনো প্রবেশমূল্য রাখা হয়নি৷