দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১০নভেম্বর: শেরপুরের সোহাগপুরের ঘটনার সঙ্গে কামারুজ্জামানের কোনো সম্পর্ক নেই বলে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন তার ছেলে হাসান ইকবাল৷সোমবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে হাসান ইকবাল এই চ্যালেঞ্জ করেন৷এ সময় কামারুজ্জামানের স্ত্রী, ছেলে- মেয়ে, ভাই ও শ্যালক উপস্থিত ছিলেন৷
হাসান ইকবাল বলেন, আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি,সোহাগপুরের ঘটনার সঙ্গে আমার বাবার দূরতম সম্পর্ক নেই৷ তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার৷সংবাদ সম্মেলনে হাসান ইকবাল বলেন, আমার বাবা সম্পূর্ণ নির্দোষ৷ অন্যায়ভাবে সাজানো অভিযোগে তাকে ফাঁসির দণ্ড দেয়া হয়েছে৷ আমার বাবা কখনো সোহাগপুরে যাননি৷ এমনকি রাষ্ট্রপক্ষের দাখিল করা ফরমাল চার্জেও সোহাগপুর গণহত্যার সময় সেখানে তিনি উপস্থিত ছিলেন মর্মে কোনো অভিযোগ নেই৷তিনি বলেন, এই মামলায় মূল সাক্ষীর তালিকায় ৪৬ জনের নাম ছিল৷ তাদের মধ্যে ১০ জন সাক্ষী ট্রাইবু্যনালে সাক্ষ্য দেয়ার পর নতুন করে তিনজন মহিলাকে অতিরিক্ত সাক্ষীর মাধ্যমে এসব অভিযোগে আনা হয়েছে৷ হাসান ইকবাল বলেন, স্বাধীনতার সময় সাক্ষীরা আমার বাবাকে চিনতেনও না৷ তাদের কথায় আমার বাবার বিরুদ্ধে রায় হয়েছে৷ এ রায় ন্যায়ভ্রষ্ট৷
তিনি বলেন, ২০১১ সালে সোহাগপুরের গণহত্যা নিয়ে সাংবাদিক মামুন-উর রশিদ ওই এলাকা পরিদর্শন করে সোহাগপুরের বিধবা কন্যারা নামে একটি বই প্রকাশ করেন৷ সেখানে অনেক সাক্ষীর সাক্ষাত্কার আছে৷ তাতে কেউ একবারের জন্যও বলেননি যে আমার বাবা এ ঘটনায় যুক্ত ছিলেন৷এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান তালুকদারের ২০১১ সালের অনুপম প্রকাশনী মুক্তিযুদ্ধে নালিতাবাড়ী বইতেও আমার বাবার সম্পৃক্ততার কথা বলা হয়নি৷সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এই মামলায় আমার বাবাকে জড়ানো হয়েছে বলে দাবি করেন কামারুজ্জামানের ছেলে৷রিভিউ আবেদনে তার বাবা খালাস পাবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন হাসান ইকবাল৷
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃতু্যদণ্ড রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করা যাবে কি না কিংবা কবে নাগাদ এ রায় কায্র্কর করা যাবে তা নিয়ে আসামিপক্ষ এবং রাষ্ট্রপক্ষের মধ্যে বিতর্কের ঝড় উঠেছে৷রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, এটি একটি বিশেষ আইন৷ এ আইনে রিভিউ করার কোনো সুযোগ নেই৷ রায় শোনার পর থেকে সাত দিনের মধ্যে রায় কার্যকর করা যাবে৷অন্যদিকে আসামিপক্ষ বলছে, সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রিভিউ করার অধিকার আসামির রয়েছে৷ রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তি হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির ক্ষমার বিষয়টি আসবে৷এ বিতকের্র অবসান ঘটবে কাদের মোল্লার মামলার রিভিউ রায় প্রকাশিত হলে৷ রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেলের কথায়ও রোববার বিষয়টি উঠে এসেছে৷ এজন্য উভয়পক্ষই অপেক্ষা করছেন৷
সোমবার নিজ কার্যারলয়ে এক ব্রিফিংয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, আসামিপক্ষ বলছেন, তারা রিভিউ করবেন৷ আমি আগেরবারও বলেছি, অনুচ্ছেদ ৪৭(ক) ধারা মতো আমি যা বুঝেছি, রিভিউ চলবে না৷তিনি বলেন, কাদের মোল্লার মামলার রিভিউ’র রায় যদি আমরা পেয়ে যাই, তাহলেই এই সব দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ঘুচে যায়৷আমি বলছি, রিভিউ হবে না৷ কিন্তু কাদের মোল্লার রিভিউ’র রায়ে যদি দেখা যায়, রিভিউ চলবে বলে বক্তব্য বা সিদ্ধান্ত দিয়েছে আদালত, তাহলে মনে করতে হবে আমার সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল না৷আমরা আইনজীবীরা আইনের ব্যাখ্যা আমরা যা বুঝি সেভাবে দিই, তখনই এটা ফাইনালিটি পায় যখন আদালত এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়৷
কাদের মোল্লার রিভিউ’র রায় না পাওয়া গেলে রায় কার্যকর বন্ধ থাকবে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপিল বিভাগ স্থগিত না করলে রায় কায্র্কর বন্ধ থাকবে না৷অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মনির বলেছেন, গত ছয় নভেম্বর আমরা কামারুজ্জামানের সাথে সাক্ষাত করে এসেছি৷ তিনি আমাদের বলেছেন, পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে রিভিউ করার জন্য প্রস্তুতি নিতে৷ রিভিউ নিষ্পত্তি হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমার চাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন কামারুজ্জামান৷
শিশির মনির আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করেন বলেন, মন্ত্রী জেলকোডের ৯৯১ বিধির অপব্যাখ্যা করেছেন৷ বস্তুত রায় শোনার দিন থেকে সাত দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার বিধান উক্ত ধারায় উল্লেখ নেই৷ মৃতু্য পরোয়ানা গ্রহণ করার পর থেকে নতুন জেলকোড অনুযায়ী ১৫ দিন এবং পুরাতন জেলকোড অনুসারে সাত দিনের বিধান রয়েছে৷তবে সব বিতর্ক শেষ হবে কাদের মোল্লার মামলার রিভিউ রায় প্রকাশিত হলে৷ সেখানে যদি আপিল বিভাগ সিদ্ধান্ত দেন রিভিউ করার সুযোগ পাবে৷ তাহলে আসামিপক্ষ রিভিউ করার সুযোগ পাবে, অন্যথায় নয়৷এ ছাড়া কামারুজ্জামানের মামলায় সংক্ষিপ্ত আদেশে আপিল বিভাগ রায় কার্যজকরের কথা বললে ট্রাইবু্যনাল মৃতু্য পরোয়ানা পাঠাবে৷ তবেই রায় কার্য করের প্রস্তুতি নেবে সরকার৷
উল্লেখ্য জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার রিভিউ আবেদন গত বছর আপিল বিভাগ ডিসমিস করলেও পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের অপেক্ষায় আছে৷ পরবর্তী মামলাগুলোতে রিভিউ করা যাবে কি না সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগ৷
ঢাকা, ১০ নভেম্বর,ফোকাস বাংলা নিউজ: কামারুজ্জামানের ফাঁসির আদেশ কার্যকর করার পদক্ষেপ বন্ধ করতে একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে৷সোমবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবু বকর সিদ্দিক এই নোটিশটি পাঠান৷আইন ও স্বরাষ্ট্র সচিব এবং কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপারকে এই নোটিশ পাঠানো হয়৷নোটিশে আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে ফাঁসির রায় কার্যকর করার পদক্ষেপ বন্ধ করতে বলা হয়৷
নোটিশে বলা করা হয়, গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ছিল অবৈধ৷ ওই নির্বাচনের এই সরকারও অবৈধ৷ কাজেই অবৈধ এই সরকার কামারুজ্জামানের ফাঁসির আদেশ কার্যকর করতে পারে না৷ আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে ফাঁসির রায় কার্যকর করার পদক্ষেপ বন্ধ না করলে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন দায়ের করা হবে৷এদিকে,অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন,মুহাম্মাদ কামারুজ্জামানের দণ্ড কার্যকর সময়সাপেক্ষ৷ আদালত সংক্ষিপ্ত রায় পাঠাতে পারতেন৷ যেহেতু তা পাঠানো হয়নি, আমি মনে করি আদালত পূর্ণাঙ্গ রায় পাঠাবেন৷ আপিল বিভাগ রায় পাঠানোর পর ট্রাইবু্যনাল মৃতু্যপরোয়ানা জারি করবেন৷ সোমবার সুপ্রিম কোর্টে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন৷রায় ন্যায়ভ্রষ্ট, কামারুজ্জামানের ছেলের এমন বক্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, এটি আদালত অবমাননার শামিল৷ আদালতের রায় সম্পর্কে এরকম বক্তব্য দেয়া উচিত নয়৷
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আব্দুল কাদের মোল্লার আবেদনের লিখিত রায় প্রকাশ হলে রিভিউ আবেদন করা যাবে কিনা তা পরিষ্কার হবে৷এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃতু্যদন্ডে দন্ডিত কামারুজ্জামানের পক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে তার পুত্রের দেয়া বক্তব্য আদালত অবমাননার শামিল৷
এর আগে আজ কামারুজ্জামানের পরিবারের পক্ষ থেকে তার বড় ছেলে হাসান ইকবাল সুপ্রিমকোর্ট অডিটোরিয়ামে সংবাদ সম্মেলন করে তার বাবার বিরুদ্ধে দেয়া রায়কে ন্যায়ভ্রষ্ট বলে দাবী করে প্রতিক্রিয়া দেন৷ সোহাগপুরের যে ঘটনার অভিযোগে তার বাবার বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়েছে তা সঠিক নয় বলে দাবী করেন৷এ বিষয়ে এটর্নি জেনারেল দন্ডিত আসামি পুত্রের এ বক্তব্যকে দম্ভক্তি,পাগলের প্রলাপ ও শালিনতা বর্জিত বলে উল্লেখ করেন৷ আসামিপুত্রের দেয়া বক্তব্য তাদের পক্ষের আইনজীবীরা আদালতেও পেশ করেছিলেন৷ আদালত আসামিপক্ষের বক্তব্য, রাস্ট্রপক্ষে ভিকটিমদের বিষয়ে পেশ করা যাবতীয় তথ্যপ্রমান পর্যালোচনা করে রায় দিয়েছে৷এটর্নি জেনারেল বলেন, আপিলের রায় প্রকাশের পর তা ট্রাইবু্যনালে যাবে৷ পরে ট্রাইবু্যনাল রায় কার্যকরে আইনানুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে৷
জামায়াতনেতা মুহাম্মদ কামারম্নজ্জামানকে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধে মামলায় ট্রাইবু্যনালের মৃতু্যদন্ডের রায় বহাল রেখে গত ৩ নভেম্বর রায় দেয় সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ৷ আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের বেঞ্চে এ রায় ঘোষণা করা হয়৷ বেঞ্চের অপর তিনজন বিচারপতি ছিলেন বিচারপতি মো.আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী৷
মানবতাবিরোধী অপরাধে ট্রাইবু্যনালে দন্ডিতদের মধ্যে কামারম্নজ্জামান হলেন তৃতীয়ব্যক্তি, আপিল বিভাগে যার মামলার নিষ্পত্তি হলো৷ এর আগে জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোলস্নার আপিল নিষ্পত্তির পর ২০১৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর যাবজ্জীবন সাজা বাড়িয়ে মৃতু্যদন্ডাদেশ দেয় আপিল বিভাগ৷ এরপর গত বছর ১২ডিসেম্বর তার মৃতু্যদন্ড কার্যকর হয়৷ গত ১৭ সেপ্টেম্বর আপিলের দ্বিতীয় রায়ে জামায়াতের নায়েবে আমীর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ট্রাইবু্যনালে দেয়া সাজা মৃতু্যদন্ড থেকে কমিয়ে তাকে আমৃতু্য কারাদন্ড দেয় আপিল বিভাগ৷একটি মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুলাই কামারুজ্জামানকে গ্রেফতার করা হয়৷ ট্রাইবু্যনালের তদনত্ম সংস্থার আবেদনের প্রেক্ষিতে ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার দেখানো হয়৷ সে থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন৷