Asaduzzaman kamal

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১০নভেম্বর: স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, বর্ধমান বোমা বিস্ফোণ ঘটনায় বাংলাদেশি জঙ্গিরা জড়িত থাকার বিষয়ে খতিয়ে দেখতে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআই)এর একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসছে৷সোমবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তিনি সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান৷স্বরাস্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভারত সরকার বাংলাদেশকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছে৷ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাকে বাংলাদেশে আসার জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে৷তিনি বলেন, রোববার হাই কমিশনার ফোন করে আমাকে বলেছেন৷নীতিগত ভাবে যে কোনো বিষয় খোঁজ নেওয়ার জন্য তারা আসতে পারেন৷

প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রতিনিধি দলে ভারতের আইজি আসবেন৷ তারা যেসব স্থানে যেতে চাইবেন সেইসব স্থানে নেওয়া হবে৷এজন্য আমরা সব সহযোগিতা করবো৷তিনি জানান, ভারত সরকার পরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে৷এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, বর্ধমান বিস্ফোরণ ঘটনায় ভারতের কোনো প্রতিবেদন এখনও আসেনি৷প্রধানমন্ত্রী ও খালেদা জিয়ার নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুই ধরনেরর নিরাপত্তা রয়েছে৷ একটি দৃশ্যমান আরেকটি অদৃশ্যমান৷সমপ্রতি জাতীয় মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যানের দেওয়া একটি মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, জেলা কোটা অনুযায়ী পুলিশ রয়েছে৷ বিশেষ জেলা বলতে কিছু নেই৷

বৃহস্পতিবার পুলিশের গুলিতে আহত একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দেখতে গিয়ে পুলিশ বাহিনী নিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, একটি জেলার নাম ব্যবহার করে পুলিশের কিছু কর্মকর্তা ঔদ্ধত্যপূর্ণ’ আচরণ করে প্রধানমন্ত্রীকে হেয় করার চেষ্টা করছেন৷ কোনো জেলার নাম উল্লেখ না করেই তিনি বলেন, ওই জেলার পুলিশ যেন আইনের ঊধের্্ব৷ সভ্য সমাজে তারা যে ধরনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন তা মেনে নেওয়া যায় না৷

জাতীয় মানবাধিকার সংস্থার চেয়ারম্যান ড, মিজানুর রহমান বলেছিলেন পুলিশের চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে পড়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে পড়েনি৷ভেঙ্গে পড়লে নিরাপত্তা শুন্য কোটায় নেমে আসতো৷ তা হলে মানুষ থাকতে পারতো না৷বাংলাদেশের দুই নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে হত্যার ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে যাদের নাম বলছিলেন ভারতের গোয়েন্দারা, তাদের মধ্যে একজন পশ্চিমবঙ্গে গ্রেপ্তার হয়েছেন৷ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থার (এনআইএ) সদস্যরা বর্ধমান বিস্ফোরণ ঘটনায় অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত শেখ রহমতুল্লাহ ওরফে সাজিদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় বাংলাদেশি কয়েকজনের জড়িত থাকার বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে কোনো তথ্য দেয়নি ভারত৷বাংলাদেশে জঙ্গি নিয়ে কাজ করে এমন সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারা এ কথা জানিয়েছেন৷

বর্ধমানের বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তে নিয়োজিত ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থার (এনআইএ) এক সূত্রের উল্লেখ করে বিবিসি জানায়, ওই ঘটনায় যে প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে তাতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বা বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়াকে হত্যাচেষ্টার কথা আদৌ উল্লেখ করা হয়নি৷কারণ এ বিষয়টি নিয়ে তারা এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত নয়৷তবে র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান বলেন, বর্ধমানের বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় বাংলাদেশিদের জড়িত থাকার বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ভারত সরকারের কোনো তথ্য র্যাবের কাছে নেই৷ তবে নিজস্ব গোয়েন্দা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে র্যাব সমপ্রতি কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে৷

গ্রেপ্তার শেখ রহমতুল্লাহ সাজিদের বিষয়ে তথ্য দিতে ১০ লাখ রুপি পুরস্কারের ঘোষণা ছিল৷ ৪০ বছর বয়সী এই ব্যক্তি বাংলাদেশি এবং জেএমবির কমান্ডার বলে ভারতের গোয়েন্দাদের দাবি৷সাজিদের সঙ্গে জিয়াউল হক নামে আরেকজনকে গ্রেপ্তার করেছে ভারতের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএ৷ তিনিও জঙ্গিদের সঙ্গে জড়িত বলে গোয়েন্দারা বলছেন৷

পশ্চিমবঙ্গে এই দুজনকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি পাশের রাজ্য আসামে শুক্রবার সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে সাজিনা বেগম নামে ৩০ বছর বয়সী এক নারীকে৷সাজিনার স্বামী শাহানূর আলমের বিষয়ে তথ্য দিতে এনআইএ’র পুরস্কারের ঘোষণা রয়েছে৷ তার মাথার দাম ধরা হয়েছে ৫ লাখ রুপি৷গত ২ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে একটি বাড়িতে বিস্ফোরণে দুজন নিহত হওয়ার পর ভারতে তার তদন্তে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সম্পৃক্ততার বিষয়টি উঠে আসে৷

যে বাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটে, সেখান থেকে দুই নারীকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ; যারা জেএমবির সঙ্গে যুক্ত এবং বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাড়ি জমিয়েছিলেন বলে ভারতের গোয়েন্দাদের দাবি৷ভারতের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, বর্ধমান বিস্ফোরণের তদন্তে তারা বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে হত্যায় জঙ্গিদের একটি পরিকল্পনাও জানতে পেরেছেন৷

সাজিদ ও জিয়াউলকে গ্রেপ্তার এই তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি বলে মনে করছেন এনআইএ গোয়েন্দারা৷ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা শনিবার ডটকমকে বলেন, কয়েক দিন আগে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ সাজিদকে গ্রেপ্তার করে৷ তবে তদন্তের স্বার্থে তা প্রকাশ করা হয়নি৷

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুলিশের ঊধ্বতন কর্মকর্তা রাজীব কুমার বলেন, সাজিদ জেএমবির মজলিসে শূরার সদস্য৷ তার বাড়ি বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ জেলায়৷মুর্শিদাবাদ জেলার লালগোলায় আশ্রয় নেওয়া সাজিদকে শনিবারই গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি করেন রাজীব কুমার, যদিও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা বলেছিলেন, তাকে গ্রেপ্তার করা হয় কয়েকদিন আগে৷সাজিদকে গ্রেপ্তারের পর এনআইএ গোয়েন্দারা আটক করে জিয়াউলকে৷ তিনি সাজিদের পাশাপাশি সন্দেহভাজন ১২ জনের দুজন রেজাউল করিম ও ইউসুফ শেখের ঘনিষ্ঠ বলে এআইএ জানিয়েছে৷সাজিদের মতো ইউসুফ শেখের মাথার দামও ১০ লাখ রুপি, রেজাউলের মাথার দাম ঘোষণা করা হয়েছে ৩ লাখ রুপি৷পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা জিয়াউল শিমুলিয়া ও মুকিমনগর মাদ্রাসায় জঙ্গিদের প্রশিক্ষণে জড়িত থাকার কথা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন বলে এনআইএ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন৷

আসামের বাসিন্দা শাহানূর আলমের মাথার দাম ঘোষণা করা হয়েছে ৫ লাখ রুপি৷ তার স্ত্রী সাজিনাকে শুক্রবার সন্ধ্যায় গৌহাটির বাস টার্মিনাল থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে আসাম পুলিশ জানিয়েছে৷আসামের পুলিশ উপপ্রধান পল্লব ভট্টাচার্য রয়টার্সকে বলেন, বিশেষ এক অভিযানে ওই নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ ওই নারী ভারতবিরোধী যুদ্ধ চালাতে অস্ত্র সংগ্রহ করছিলেন৷আসামের পুলিশকে নিয়ে এনআইএ গোয়েন্দা এবং কেন্দ্রীয় পুলিশের একটি বিশেষ ইউনিট সাজিনাকে গ্রেপ্তারে এই অভিযান চালায়৷

সাজিনাকে শনিবার গৌহাটির আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১৪ দিনের হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ৷নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যায় জঙ্গিরা যে পরিকল্পনা করছে, তাতে সাজিনার সম্পৃক্ততা থাকতে পারে৷তবে জঙ্গিদের অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রে সাজিনার ভূমিকাকেই গুরুত্বপূর্ণ বেশি ভাবছে আসাম পুলিশের কর্মকর্তারা৷আমরা নিশ্চিত যে স্বামীর (শাহানূর) সঙ্গে এই নারীও জঙ্গি তত্‍পরতায় যুক্ত ছিল, বলেন আসাম পুলিশের মুখপাত্র অপূর্ব জীবন বড়ুয়া৷

বাংলাদেশ থেকে নারী জঙ্গিদের এপারে আনা এবং ওপারে পাঠানোয় সাজিনার ভূমিকা ছিল বলেও এই পুলিশ কর্মকর্তার দাবি৷সাজিনা পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি তিন বছর আগে জেএমবিতে যোগ দেন৷ গোয়েন্দারা বলছেন, স্বামী শাহানূরের দুটি ব্যাংক হিসেবের মাধ্যমে সাজিনা লেনদেন করতেন৷ভারতের গোয়েন্দাদের দাবি, বাংলাদেশে কোনঠাসা জেএমবি ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন ও কাশ্মিরের জঙ্গিদের সঙ্গে মিলে পশ্চিমবঙ্গে একটি জঙ্গি ঘাঁটি গড়ে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছে৷