33989_0

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১০নভেম্বর: কামারুজ্জামানের ফাঁসির আদেশ কার্যকর করার পদক্ষেপ বন্ধ করতে একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে৷সোমবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবু বকর সিদ্দিক এই নোটিশটি পাঠান৷আইন ও স্বরাষ্ট্র সচিব এবং কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপারকে এই নোটিশ পাঠানো হয়৷নোটিশে আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে ফাঁসির রায় কার্যকর করার পদক্ষেপ বন্ধ করতে বলা হয়৷নোটিশে বলা করা হয়, গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ছিল অবৈধ৷ ওই নির্বাচনের এই সরকারও অবৈধ৷ কাজেই অবৈধ এই সরকার কামারুজ্জামানের ফাঁসির আদেশ কার্যকর করতে পারে না৷ আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে ফাঁসির রায় কার্যকর করার পদক্ষেপ বন্ধ না করলে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন দায়ের করা হবে৷

এদিকে,অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন,মুহাম্মাদ কামারুজ্জামানের দণ্ড কার্যকর সময়সাপেক্ষ৷ আদালত সংক্ষিপ্ত রায় পাঠাতে পারতেন৷ যেহেতু তা পাঠানো হয়নি, আমি মনে করি আদালত পূর্ণাঙ্গ রায় পাঠাবেন৷ আপিল বিভাগ রায় পাঠানোর পর ট্রাইবু্যনাল মৃতু্যপরোয়ানা জারি করবেন৷ সোমবার সুপ্রিম কোর্টে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন৷রায় ন্যায়ভ্রষ্ট, কামারুজ্জামানের ছেলের এমন বক্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, এটি আদালত অবমাননার শামিল৷ আদালতের রায় সম্পর্কে এরকম বক্তব্য দেয়া উচিত নয়৷

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আব্দুল কাদের মোল্লার আবেদনের লিখিত রায় প্রকাশ হলে রিভিউ আবেদন করা যাবে কিনা তা পরিষ্কার হবে৷এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃতু্যদন্ডে দন্ডিত কামারুজ্জামানের পক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে তার পুত্রের দেয়া বক্তব্য আদালত অবমাননার শামিল৷

এর আগে আজ কামারুজ্জামানের পরিবারের পক্ষ থেকে তার বড় ছেলে হাসান ইকবাল সুপ্রিমকোর্ট অডিটোরিয়ামে সংবাদ সম্মেলন করে তার বাবার বিরুদ্ধে দেয়া রায়কে ন্যায়ভ্রষ্ট বলে দাবী করে প্রতিক্রিয়া দেন৷ সোহাগপুরের যে ঘটনার অভিযোগে তার বাবার বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়েছে তা সঠিক নয় বলে দাবী করেন৷এ বিষয়ে এটর্নি জেনারেল দন্ডিত আসামি পুত্রের এ বক্তব্যকে দম্ভক্তি,পাগলের প্রলাপ ও শালিনতা বর্জিত বলে উল্লেখ করেন৷ আসামিপুত্রের দেয়া বক্তব্য তাদের পক্ষের আইনজীবীরা আদালতেও পেশ করেছিলেন৷ আদালত আসামিপক্ষের বক্তব্য, রাস্ট্রপক্ষে ভিকটিমদের বিষয়ে পেশ করা যাবতীয় তথ্যপ্রমান পর্যালোচনা করে রায় দিয়েছে৷এটর্নি জেনারেল বলেন, আপিলের রায় প্রকাশের পর তা ট্রাইবু্যনালে যাবে৷ পরে ট্রাইবু্যনাল রায় কার্যকরে আইনানুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে৷

জামায়াত নেতা মুহাম্মদ কামারম্নজ্জামানকে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধে মামলায় ট্রাইবু্যনালের মৃতু্যদন্ডের রায় বহাল রেখে গত ৩ নভেম্বর রায় দেয় সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ৷ আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের বেঞ্চে এ রায় ঘোষণা করা হয়৷ বেঞ্চের অপর তিনজন বিচারপতি ছিলেন বিচারপতি মো.আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী৷

মানবতাবিরোধী অপরাধে ট্রাইবু্যনালে দন্ডিতদের মধ্যে কামারম্নজ্জামান হলেন তৃতীয়ব্যক্তি,আপিল বিভাগে যার মামলার নিষ্পত্তি হলো৷ এর আগে জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোলস্নার আপিল নিষ্পত্তির পর ২০১৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর যাবজ্জীবন সাজা বাড়িয়ে মৃতু্যদন্ডাদেশ দেয় আপিল বিভাগ৷ এরপর গত বছর ১২ডিসেম্বর তার মৃতু্যদন্ড কার্যকর হয়৷ গত ১৭ সেপ্টেম্বর আপিলের দ্বিতীয় রায়ে জামায়াতের নায়েবে আমীর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ট্রাইবু্যনালে দেয়া সাজা মৃতু্যদন্ড থেকে কমিয়ে তাকে আমৃতু্য কারাদন্ড দেয় আপিল বিভাগ৷একটি মামলায় ২০১০ সালের ২৯জুলাই কামারুজ্জামানকে গ্রেফতার করা হয়৷ ট্রাইবু্যনালের তদনত্ম সংস্থার আবেদনের প্রেক্ষিতে ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার দেখানো হয়৷ সে থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন৷