Atorni1

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১০নভেম্বর: অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন,মুহাম্মাদ কামারুজ্জামানের দণ্ড কার্যকর সময়সাপেক্ষ৷ আদালত সংক্ষিপ্ত রায় পাঠাতে পারতেন৷ যেহেতু তা পাঠানো হয়নি, আমি মনে করি আদালত পূর্ণাঙ্গ রায় পাঠাবেন৷ আপিল বিভাগ রায় পাঠানোর পর ট্রাইবু্যনাল মৃতু্যপরোয়ানা জারি করবেন৷ সোমবার সুপ্রিম কোর্টে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন৷রায় ন্যায়ভ্রষ্ট, কামারুজ্জামানের ছেলের এমন বক্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, এটি আদালত অবমাননার শামিল৷ আদালতের রায় সম্পর্কে এরকম বক্তব্য দেয়া উচিত নয়৷

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আব্দুল কাদের মোল্লার আবেদনের লিখিত রায় প্রকাশ হলে রিভিউ আবেদন করা যাবে কিনা তা পরিষ্কার হবে৷এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃতু্যদন্ডে দন্ডিত কামারুজ্জামানের পক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে তার পুত্রের দেয়া বক্তব্য আদালত অবমাননার শামিল৷

এর আগে আজ কামারুজ্জামানের পরিবারের পক্ষ থেকে তার বড় ছেলে হাসান ইকবাল সুপ্রিমকোর্ট অডিটোরিয়ামে সংবাদ সম্মেলন করে তার বাবার বিরুদ্ধে দেয়া রায়কে ন্যায়ভ্রষ্ট বলে দাবী করে প্রতিক্রিয়া দেন৷সোহাগপুরের যে ঘটনার অভিযোগে তার বাবার বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়েছে তা সঠিক নয় বলে দাবী করেন৷এ বিষয়ে এটর্নি জেনারেল দন্ডিত আসামি পুত্রের এ বক্তব্যকে দম্ভক্তি,পাগলের প্রলাপ ও শালিনতা বর্জিত বলে উল্লেখ করেন৷ আসামিপুত্রের দেয়া বক্তব্য তাদের পক্ষের আইনজীবীরা আদালতেও পেশ করেছিলেন৷ আদালত আসামিপক্ষের বক্তব্য, রাস্ট্রপক্ষে ভিকটিমদের বিষয়ে পেশ করা যাবতীয় তথ্যপ্রমান পর্যালোচনা করে রায় দিয়েছে৷এটর্নি জেনারেল বলেন, আপিলের রায় প্রকাশের পর তা ট্রাইবু্যনালে যাবে৷ পরে ট্রাইবু্যনাল রায় কার্যকরে আইনানুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে৷

এর আগে এটর্নি জেনারেল বলেন, রায়ের কপি যখন কামারুজ্জামানের কাছে যাবে তখন প্রাণভিক্ষার জন্য তিনি সূযোগ পাবেন৷ রায়ের কপি কি পূর্নাঙ্গ হবে, না-কি সংক্ষিপ্ত হবে এবং কখন এ কপি প্রকাশ করা হবে তা আদালতের বিষয়৷ তিনি তার ব্যক্তিগত অভিমতে বলেন, কামারুজ্জামানের মৃতু্যদন্ডের রায় বিষয়ে রিভিউয়ের কোন সুযোগ নেই৷ তিনি বলেন, বিশেষ আইনে এ বিচার হচেছ৷ সাংবিধানিকভাবে এ আইন প্রটেকটেড৷

সোহাগপুর গ্রামের গণহত্যায় কামারুজ্জামান জড়িত নয় বলে তার ছেলে হাসান ইকবাল দাবি করলে তার প্রতিক্রিয়ায় অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, কামারুজ্জামানের ছেলে যে কথাগুলো এখানে বলেছেন, এসব বক্তব্য তার আইনজীবীরা পুঙ্খানুপুঙ্ক্ষভাবে আদালতে উপস্থাপন করেছেন৷ এসব বক্তব্য বিবেচনা করেই আদালত তার সম্পর্কে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন৷তিনি বলেন, সর্বোচ্চ আদালত সম্পর্কে একজন যুদ্ধাপরাধীর ছেলের দম্ভোক্তি এবং শালীনতাবোধ বর্জিত বক্তব্য দুঃখজনক৷

মাহবুবে আলম বলেন, অনেক সময় মানুষ পাগলের প্রলাপ বকে৷ সব পাগলকেতো আর আদালতের সামনে নিয়ে যাওয়া যায় না৷ সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের ব্যাপারে ক্ষোভ থাকলে তার প্রকাশ এই ধরনের মাধ্যমে হওয়া উচিত না৷তিনি বলেন, বিশেষ করে ন্যায়ভ্রষ্ট কথাটা তাকে কে শিখিয়ে দিয়েছে আমি জানি না৷ এটার সম্পূর্ণ অর্থ জেনেই বলা উচিত৷ অবশ্যই আদালতের প্রতি এ ধরনের বক্তব্য অবমাননাকর৷

মৃতু্য পরোয়ানা হলে সরকারের সিদ্ধান্তে দণ্ড কার্যকর হবে বলেও জানান অ্যাটর্নি জেনারেল৷তিনি বলেন, পরোয়ানা হলে দণ্ড কার্যকর হবে ২০(৩) ধারা মতে৷ সরকারের নির্দেশ অনুসারে৷ কাজেই সরকার যেভাবে সময় প্রদান করবে সেইভাবেই কার্যকর হবে৷তিনি আরো বলেন, রিভিউ যদি কেউ করেও সেই রিভিউ’র জন্য দণ্ড স্থগিত থাকবে না৷ আপিল বিভাগ স্থগিতাদেশ দেয়ার আগ পর্যন্ত দণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া কারা কর্তৃপক্ষ চলমান রাখবে৷রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, আমিতো আগাগোড়া যে কথা বলেছি, কাদের মোল্লার ব্যাপারেও তাই বলেছিলাম৷আমার বক্তব্য থেকে কোনো বিচু্যতি হয়নি৷ টেলিভিশন টকে আমাদের বক্তব্যগুলোকে কেন ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে৷

তিনি বলেন, আমি সব সময় বলেছি, রিভিউ চলবে না৷ সংবিধান পড়ে আমি যা বুঝেছি, এটা আমার বক্তব্য৷ আপিল বিভাগ যদি কাদের মোল্লার রিভিউ’র রায়ে বলে দেয় যে রিভিউ চলবে৷ তাহলে তখন বলা যাবে, আমার বক্তব্য সঠিক ছিল না৷ কিন্তু যে পর্যন্ত রায় না প্রকাশিত হবে, সে পর্যন্ত আমি যেটা বলেছি, সেটা সংবিধানের ওপর নিভর্র করেই বলেছি৷অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমি বলেছি, সংক্ষিপ্ত রায় দিয়েও এটা কার্যকর করা যায়৷ এর আগেও আমার মতে আদালত থেকে সংক্ষিপ্ত আদেশ গেছে৷ যদিও সেটা সাঈদীর ব্যাপারে৷

তিনি বলেন, সাঈদীর মৃতু্যদণ্ড থেকে যখন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়ে গেল, সেটা ট্রাইবু্যনালকে সংক্ষিপ্ত আদেশের মাধ্যমে জানানো হয়েছে৷ কাজেই সংক্ষিপ্ত আদেশে করা যাবে, ট্রাইবু্যনালকে জানালে ট্রাইবু্যনাল ডেথ ওয়ারেন্ট আদেশ করতে পারে৷

এর আগে শেরপুরের সোহাগপুরের ঘটনার সঙ্গে কামারুজ্জামানের কোনো সম্পর্ক নেই বলে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন তার ছেলে হাসান ইকবাল৷সোমবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে হাসান ইকবাল এই চ্যালেঞ্জ করেন৷ এ সময় কামারুজ্জামানের স্ত্রী, ছেলে- মেয়ে, ভাই ও শ্যালক উপস্থিত ছিলেন৷

হাসান ইকবাল বলেন, আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি, সোহাগপুরের ঘটনার সঙ্গে আমার বাবার দূরতম সম্পর্ক নেই৷ তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার৷সংবাদ সম্মেলনে হাসান ইকবাল বলেন, আমার বাবা সম্পূর্ণ নির্দোষ৷ অন্যায়ভাবে সাজানো অভিযোগে তাকে ফাঁসির দণ্ড দেয়া হয়েছে৷ আমার বাবা কখনো সোহাগপুরে যাননি৷ এমনকি রাষ্ট্রপক্ষের দাখিল করা ফরমাল চার্জেও সোহাগপুর গণহত্যার সময় সেখানে তিনি উপস্থিত ছিলেন মর্মে কোনো অভিযোগ নেই৷তিনি বলেন, এই মামলায় মূল সাক্ষীর তালিকায় ৪৬ জনের নাম ছিল৷ তাদের মধ্যে ১০ জন সাক্ষী ট্রাইবু্যনালে সাক্ষ্য দেয়ার পর নতুন করে তিনজন মহিলাকে অতিরিক্ত সাক্ষীর মাধ্যমে এসব অভিযোগে আনা হয়েছে৷হাসান ইকবাল বলেন, স্বাধীনতার সময় সাক্ষীরা আমার বাবাকে চিনতেনও না৷ তাদের কথায় আমার বাবার বিরুদ্ধে রায় হয়েছে৷ এ রায় ন্যায়ভ্রষ্ট৷

তিনি বলেন, ২০১১ সালে সোহাগপুরের গণহত্যা নিয়ে সাংবাদিক মামুন-উর রশিদ ওই এলাকা পরিদর্শন করে সোহাগপুরের বিধবা কন্যারা নামে একটি বই প্রকাশ করেন৷ সেখানে অনেক সাক্ষীর সাক্ষাত্‍কার আছে৷ তাতে কেউ একবারের জন্যও বলেননি যে আমার বাবা এ ঘটনায় যুক্ত ছিলেন৷এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান তালুকদারের ২০১১ সালের অনুপম প্রকাশনী মুক্তিযুদ্ধে নালিতাবাড়ী’ বইতেও আমার বাবার সম্পৃক্ততার কথা বলা হয়নি৷সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এই মামলায় আমার বাবাকে জড়ানো হয়েছে বলে দাবি করেন কামারুজ্জামানের ছেলে৷রিভিউ আবেদনে তার বাবা খালাস পাবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন হাসান ইকবাল৷

জামায়াতনেতা মুহাম্মদকামারম্নজ্জামানকে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধে মামলায় ট্রাইবু্যনালের মৃতু্যদন্ডের রায় বহাল রেখে গত ৩ নভেম্বর রায় দেয় সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ৷ আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের বেঞ্চে এ রায় ঘোষণা করা হয়৷ বেঞ্চের অপর তিনজন বিচারপতি ছিলেন বিচারপতি মো.আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী৷

মানবতাবিরোধী অপরাধে ট্রাইবু্যনালে দন্ডিতদের মধ্যে কামারম্নজ্জামান হলেন তৃতীয়ব্যক্তি, আপিল বিভাগে যার মামলার নিষ্পত্তি হলো৷ এর আগে জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোলস্নার আপিল নিষ্পত্তির পর ২০১৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর যাবজ্জীবন সাজা বাড়িয়ে মৃতু্যদন্ডাদেশ দেয় আপিল বিভাগ৷ এরপর গত বছর ১২ডিসেম্বর তার মৃতু্যদন্ড কার্যকর হয়৷ গত ১৭ সেপ্টেম্বর আপিলের দ্বিতীয় রায়ে জামায়াতের নায়েবে আমীর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ট্রাইবু্যনালে দেয়া সাজা মৃতু্যদন্ড থেকে কমিয়ে তাকে আমৃতু্য কারাদন্ড দেয় আপিল বিভাগ৷একটি মামলায় ২০১০সালের ২৯ জুলাই কামারুজ্জামানকে গ্রেফতার করা হয়৷ ট্রাইবু্যনালের তদনত্ম সংস্থার আবেদনের প্রেক্ষিতে ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার দেখানো হয়৷ সে থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন৷